মারণক্ষমতা কম, তবু সতর্কতার পরামর্শ চিকিৎসকদের
২৭ ডিসেম্বর ২০২২এই ডিসেম্বরেই একটি দিন কোভিডশূন্য হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। ৩২ মাস পর ১৮ ডিসেম্বর একজনের শরীরেও কোভিডের ভাইরাস পাওয়া যায়নি। এই স্বস্তি বেশি দিন স্থায়ী হলো না। চিনে কোভিড সংক্রমণের খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক ভারত। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশাসন ও চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন।
ওমিক্রনের নয়া ভ্যারিয়ান্ট বিএফ.৭ যখন শিয়রে চোখ রাঙাচ্ছে, সেটা উৎসবের মৌসম। বড়দিনে বিপুল ভিড় হয়েছে কলকাতার বিভিন্ন পর্যটনস্থলে। পার্ক স্ট্রিটে রবিবার রাতে তিলধারণের জায়গা ছিল না। বড়দিনে আলিপুর চিড়িয়াখানায় ৮৭ হাজার ৩৭৩টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। ইকো পার্কে ভিড় জমিয়েছিলেন ৯১ হাজার ১৩৬ জন। দক্ষিণেশ্বরের মতো ধর্মস্থলেও জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।
প্রতিটি স্থানেই কোভিড নিয়ন্ত্রণের জন্য দূরত্ববিধি মানা দূর অস্ত, মাস্ক ছিল না অধিকাংশের। এর ফলে আবার আশংকা দেখা দিয়েছে, উৎসবের বাড়াবাড়িতে কোভিডের ঢেউ আছড়ে পড়বে না তো? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, এখনই রাজ্য সরকার কড়াকড়ির পক্ষপাতী নয়।
রাজ্যের অবস্থানকে সমর্থন করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুবর্ণ গোস্বামী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এখনই মেলা, জমায়েত বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি আসেনি। আমাদের টিকাকরণের কাজ অনেকটা এগিয়েছে। তবে সতর্ক থাকতে হবে। বিমানবন্দরে যারা ভিন দেশ থেকে আসছেন, তাদের উপর নজরদারি রাখা জরুরি।"
নয়া ভ্যারিয়ান্ট কেন মারাত্মক নয়, সেটার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা আগে ডেল্টা, ডেল্টা প্লাসের সঙ্গে লড়েছি। নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রনের প্রজাতি, উপ প্রজাতি। এর সংক্রামক ক্ষমতা অনেকটা হলেও ততটা ক্ষতিকর নয়। এ ক্ষেত্রে গলা ব্যথা, সর্দি-কাশির মতো সাধারণ অসুস্থতাই বেশি দেখা যেতে পারে।"
অনেক বিশেষজ্ঞ প্রতিষেধক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর আস্থাশীল। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের কোভিড সংক্রান্ত নোডাল অফিসার, ডা. কৌশিক চৌধুরীর বক্তব্য, "বহু মানুষ টিকা নিয়েছেন। তা ছাড়া ওমিক্রনে অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। তাই ঢেউ এলেও ঝড়ের আশংকা কম।"
একই মত ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম-এর ডা. কৌশিক চাকির। তবে তিনি প্রশাসনকে একহাত নিয়েছেন। ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কোভিড আর অতিমারি হবে না, মহামারি হতে পারে। এখন আশংকা কম ঠিকই। কিন্তু যখন আশংকা ছিল, সেই সময়ে উৎসব, মেলা সবকিছুতেই ছাড়পত্র দেওয়া কি অনুচিত হয়নি?"
হঠাৎ করে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হওয়ার সঙ্গে বাণিজ্যকে জুড়ে দেখছেন ডা. গোস্বামী। তাঁর বক্তব্য, "অনেক সংস্থা কিট, ভ্যাকসিন উৎপাদনের পর বিক্রি করতে পারেনি। তাই একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কোভিড বিধি মেনে চললেই হবে।