মমতার গ্রেপ্তার! কেজরির দাবিতে জল্পনা
২১ নভেম্বর ২০২৩সাম্প্রতিক অতীতে দেশজুড়ে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের গতি বেড়েছে৷ রাজ্যে রাজ্যে অভিযান চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই, ইডি, আয়কর দপ্তর৷ জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন৷
কেজরিওয়ালের ‘বোমা’
একাধিক দুর্নীতির মামলার সূত্রে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা চোখে পড়ার মতো৷ এই পরিস্থিতিতে বোমা ফাটালেন কেজরিওয়াল৷ জনসভায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি এজেন্সি দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত সোরেন, তেজস্বী যাদবের মতো বিরোধীদের নেতাদের গ্রেপ্তার করার ছক এঁটেছে, যাতে কেন্দ্রের শাসক দল নির্বাচনে জিততে পারে৷’’
আবগারি দুর্নীতির মামলায় জেলে রয়েছেন দিল্লির সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী, কেজরিওয়ালের ‘ডান হাত' মণীশ৷ সমনের মুখে পড়া আম আদমি পার্টির শীর্ষ নেতা কেজরিও গ্রেপ্তার হতে পারেন, এমন দুশ্চিন্তা আছে আপ নেতৃত্বের৷ তারই মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তারির আশঙ্কা৷
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল মন্ত্রিসভার দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ এখন জেলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷ তৃণমূলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার সিবিআই ও ইডি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন৷
মমতা ও অভিষেক একাধিকবার গ্রেপ্তার নিয়ে কথা বলেছেন৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য আগেই শোনা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে৷ জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেপ্তারের পর মমতা বলেন, ‘‘বিজেপির লক্ষ্য হল সব বিরোধী নেতাদের জেলা পোরা৷ যাতে বিরোধীশূন্য দেশে বিনা বাধায় ভোটে জিততে পারে তারা৷’’ অভিষেক বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে আমাদের ধমকানো-চমকানো হচ্ছে৷ গ্রেপ্তার করলেও আমরা মাথা উঁচু করে থাকব৷’’
চক্রান্তের অভিযোগ
বিরোধী নেতারা বারবার বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছে৷ কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে হেনস্থা করার নালিশ জানিয়েছে৷ চলতি মাসেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ ভাই জেলের পথে, দিদিও ভবিষ্যতে সেখানে যাবেন৷''
তৃণমূলের প্রশ্ন, বিজেপি নেতারা কীভাবে ঠিক করে দিচ্ছেন কে জেলে যাবেন? তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেনের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে কেন তদন্ত হয় না? বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সারদা ও নারদ মামলায় অভিযুক্ত৷ তাকে কেন সিবিআই, ইডি একবারও ডাকে না?'' এই প্রসঙ্গে বারবার মমতা মুখে শোনা গিয়েছে ‘ওয়াশিং মেশিনের' তত্ত্ব৷ তার দাবি, বিজেপিতে যোগ দিলে সব অভিযোগ ধুয়েমুছে যায়!
বিরোধী জোটে প্রশ্ন
বিজেপির বিরুদ্ধে 'ইন্ডিয়া' জোট গড়ে এক জোট হয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ অনেকগুলি দল৷ কিন্তু কংগ্রেস বা বাম নেতৃত্ব কি কেজরিওয়ালের দাবির সঙ্গে একমত? পশ্চিমবঙ্গে তো নয়ই৷ দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব কেজরিওয়ালের বিরোধী৷ ফলে আপ সুপ্রিমোর বক্তব্য ঘিরে বিরোধী জোটে ফাটল আবার সামনে এসেছে৷
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আদালতের নির্দেশে তদন্ত চলছে, কারো কথায় নয়৷ যাকে প্রয়োজন মনে হবে, তাকে ডাকতে পারে তদন্তকারী সংস্থা৷ গ্রেপ্তারও করতে পারে৷'' প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘‘এখানে তদন্তের নামে খেলা চলছে৷ তাই মাথাদের ইডি, সিবিআই ধরবে না৷ ছোটখাটো নেতাদের পাকড়াও করবে৷’’
অভিযোগ না নিশানা?
বিজেপির সমালোচক বলেই বিরোধী নেতারা ‘হেনস্থার' মুখে, এই তত্ত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ পশ্চিমবঙ্গে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠের বাড়িতে মিলেছে কোটি কোটি টাকার নগদ৷ কোনো মন্ত্রীকন্যার সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে৷ এক দাপুটে নেতা নেতা কোটি কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন ব্যাংকে৷
এমন নানা তথ্য ও দাবি শোনা যাচ্ছে সিবিআই ও ইডি-র তদন্তে৷ কোনো সরকার নয়, আদালত কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক দুর্নীতি মামলায়৷ এর পাশাপাশি আপ নেতা সিসোদিয়া বা অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগকেও কি একই চোখে দেখা হবে?
সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিজেপি সব বিরোধী নেতাকে চাপে রাখতে চাইছে৷ এই কৌশলে গলদ আছে৷ যদি ধরে নিই, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে রেশন দুর্নীতির অভিযোগ সারবত্তা আছে, কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থার ভূমিকা প্রকৃত অভিযোগের গুরুত্ব লঘু করে দিচ্ছে৷’’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রে অভিযুক্ত এনসিপি নেতারা বিজেপির পাশে দাঁড়ালেন, তারপর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুলে গেল তদন্তকারী সংস্থা! শাসকের পক্ষে থাকলে অসুবিধা হচ্ছে না৷ তাই কে অপরাধী আর কাকে টার্গেট করা হচ্ছে, দুটো এক জায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে৷’’
দেখুন সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি...