মণিপুরে গভীর হচ্ছে বিভাজন
মণিপুরে মে মাসে শুরু হয়েছিল সহিংসতা৷ তিনমাস পর দৃশ্যত সহিংসতা কমলেও পরিস্থিতি এখনো থমথমে৷ এখনো জারি আছে সান্ধ্য আইন৷ ছবিঘরে বিস্তারিত৷
সংঘাতের শুরু
মে মাসে মণিপুর হাইকোর্টের রায় মেইতেই গোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসাবে মান্যতা দেয়৷ রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় কুকি গোষ্ঠী৷ দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়, যার রেশ এখনও মণিপুরে বর্তমান৷ মেইতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বিষ্ণুপুর ও কুকি সংখ্যাগরিষ্ঠ চূড়াচান্দপুরের মধ্যে বিভক্ত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্য৷ দুই গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যেই পারস্পরিক অবিশ্বাস এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে৷
আরো যে যে কারণে দ্বন্দ্ব
মণিপুরের জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ কুকি৷ অন্যদিকে, এই রাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দা মেইতেই গোষ্ঠীর৷ কুকিরা বহু দিন ধরেই পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়ে আসছেন৷ এই দাবি ‘খারিজ’ করে এসেছে মেইতেইরা৷ অন্যদিকে কুকিরা মনে করেন, রাজ্যে সরকারি চাকরি বা জমির মালিকানা পাওয়ার ক্ষেত্রে মেইতেইদের আধিপত্য রয়েছে৷ কুকি নেতারা এই অবস্থারও পরিবর্তন চান৷
মৃত্যু ও উচ্ছেদ
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসে শুরু হওয়া সহিংসতায় অন্তত ১২০জনের মৃত্যু হয়েছে৷ তবে স্থানীয়দের মতে, মৃতের সংখ্যা আরো বেশি৷ সহিংসতার কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ৷ মণিপুরের মৈরাঙে চালু হয়েছে একটি ক্যাম্প, সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন মেইতেইরা৷
অস্ত্রের বাজার মণিপুর
মে মাসে সংঘর্ষ শুরুর পর সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, উন্মত্ত জনতা পুলিশ স্টেশন লুট করে প্রায় তিন হাজার অস্ত্র ও ছয় লাখ গুলি নিয়ে যায়৷ মেইতেই ও কুকি দুই গোষ্ঠীর হাতেই অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে বলে জানাচ্ছে এএফপি৷
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
রাজ্য পুলিশ ব্যর্থ হওয়ার পর সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিলেও মণিপুরে এখনো স্বাভাবিকতা ফেরেনি৷ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘নিরপেক্ষ তদন্তের’ আশ্বাস দিয়েছেন৷ তবে স্থানীয়দের মধ্যে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷
প্রতিবাদের ঢেউ
সম্প্রতি মণিপুরের দুই নারীকে যৌন হয়রানি করার পর নগ্ন করে হাঁটানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়৷ মণিপুরসহ সারা ভারতে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়৷ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বসবাসরত কুকি ও মেইতেইরাও৷
রাজনীতিতে মণিপুর
ভারতের সংসদেও বিরোধীরা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ‘নো কনফিডেন্স’ ভোট দেন৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মণিপুরে সংঘর্ষ শুরু দুই মাস পর তা নিয়ে মন্তব্য করলে, সেটাও সমালোচিত হয়৷ মণিপুরের মুখ্যুমন্ত্রী বীরেন সিংহের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ- তিনি কুকিবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছেন৷ তার পদত্যাগের দাবিও উঠছে৷ কিন্তু বীরেন সিংহ জানান, তদন্ত চলছে ও প্রকৃত আসামীদের বিচারব্যবস্থার আওতায় আনা হবে৷