ভূমিকম্পের পর ভবন নিয়ে তদন্তে তুরস্ক
তুরস্ক এবং সিরিয়া মিলে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে৷ তুরস্কের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপনায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে৷ ভবন নির্মাণে অব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত৷
ভূমিকম্পের তাণ্ডবলীলায় ধ্বংস মসজিদ
সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিবের মালান্দ গ্রামের কেন্দ্রে অবস্থিত মসজিদটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে৷ এর সোনালি গম্বুজটি মাটিতে পড়ে রয়েছে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলার সাক্ষী হয়ে৷ ফজরের নামাজের অনেক আগেই ভূমিকম্প হওয়ায় তখনও নামাজিরা মসজিদে আসতে শুরু করেননি৷ ফলে এখানে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি৷ কিন্তু এই মসজিদটি কেবল নামাজের জায়গাই ছিল না, গ্রামের মানুষের মিলনকেন্দ্র হিসাবেও এর অনুপস্থিতি টের পাচ্ছেন সবাই৷
নামাজের বিকল্প ব্যবস্থা
মসজিদসহ আশেপাশের অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে৷ সেই শোক কাটিয়ে উঠতে ধ্বংসস্থলের পাশের খোলা জায়গায় আয়োজন করা হয় নামাজের৷ নিহতদের পরকালে শান্তি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয় নামাজে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শুক্রবারে জুম্মার নামাজের জন্য মসজিদের পাশে গ্রামবাসী জড়ো হয়েছেন৷
স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র
যারা ভূমিকম্পের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছেন, তাদেরও অনেকে হারিয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই৷ তাদের কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন অস্থায়ী সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে৷ সিরিয়ার লাটাকিয়ায় একটি স্কুলকে এমন আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে৷ সেখানেই ধ্বংস হওয়া ঘর থেকে আনতে পারা অল্প কিছু ব্যবহার্য নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ৩৯ বছরের ইয়াসমিনে আসাদ ইয়াসিন৷ সঙ্গে রয়েছে তার তিন সন্তানও৷
খাদ্যের জন্য অপেক্ষা
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার চেয়ে তুরস্কের ভূমিকম্প পরবর্তী ব্যবস্থাপনা কিছুটা ভালো হলেও সেখানেও রয়েছে সংকট৷ সিরিয়ার মতো তুরস্কেও অনেকেই বাধ্য হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা নিয়েছেন৷ তুরস্ক সরকার ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকেও আসছে সহযোগিতা৷ হাতায় প্রদেশের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অনেককেই দেখা যাচ্ছে খাবারা সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে৷
শিশুদের মনে আঘাত
অনেক শিশুই তাদের স্বজন হারিয়েছে৷ ভূমিকম্পের ক্ষয়-ক্ষতি বোঝার সামর্থ্য না হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিশুদের মনে৷ তুরস্কের হাতায় প্রদেশের একটি ক্যাম্পে ফাতিমা আশেরি তার শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে ত্রাণের অপেক্ষায়৷
এখনও উদ্ধারকাজ চলছে
ভূমিকম্পের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও রাত-দিন উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা৷ সবার মনেই আশা, যদি প্রিয়জনকে জীবিত উদ্ধার করা যায়৷ বিশাল বিশাল কংক্রিটের স্তূপ সরিয়ে খোঁজা হচ্ছে নিখোঁজদের৷ ছবিতে দেখানো হাতায় প্রদেশের আন্তাকায়া শহরের এই ধ্বংসস্তূপে সন্ধান চালানো হচ্ছে এক মা-মেয়ের৷
ত্রাণ আসছে
গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়ার সকল অংশে আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই৷ তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের অনেক অংশে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাও৷ তবে সকল সংকট মোকাবিলা করে সিরিয়াতেও দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে ত্রাণ৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে সিরিয়ার বাব আল-হাওয়া সীমান্ত ক্রসিংয়ে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা- ডাব্লিউএফপির ত্রাণ নিয়ে আসা ট্রাকগুলো অপেক্ষা করছে৷
তাঁবুতে সাময়িক ব্যবস্থা
এত বড় দুর্যোগ সামাল দেয়ার মতো প্রস্তুতি তুরস্কের ছিল না৷ এত বেশি সংখ্যার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেয়ার মতো ব্যবস্থাও বিভিন্ন শহরে নেই৷ ফলে দেশটির দুর্যোগ ও জরুরি সেবা ব্যবস্থাপনা সংস্থা আফাদ বিভিন্ন স্থানে তাঁবু তৈরি করে আশ্রয় দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের৷ এমনই কিছু তাঁবুতে এবং সেখানে আশ্রয় নেয়া মানুষদের দেখা যাচ্ছে তুরস্কের কিরিখান শহরের এই ছবিতে৷
আবার কবে আসবে সুদিন?
সিরিয়া এবং তুরস্কে যে এলাকাজুড়ে ভূমিকম্পের প্রকোপ ছিল তীব্র, সেসব এলাকাতে বাড়ি-ঘরের অবস্থা ছবির বাড়ির মতোই৷ এত বড় বিপর্যয়ের পর আবার কবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন ক্ষতিগ্রস্তরা, আবারা কবে এলাকাগুলো ফিরবে আগের রূপে, কেউ বলতে পারেন না৷
ধ্বংসস্তূপ থেকেও সম্পদ বাঁচানোর চেষ্টা
কংক্রিটের নীচে সবই চাপা পড়েছে৷ অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব৷ যদি কিছু জিনিস ফেরত পাওয়া যায়, তাতেই বা মন্দ কী? এমন আশায় অনেকেই প্রতিদিন হাজির হচ্ছেন নিজের ধ্বংস হওয়া বাড়ির সামনে৷ কেউ কেউ অন্যের সহায়তায় বের করে আনছেন দরকারি জিনিসপত্র৷
সুন্দর ভবিষ্যতের অপেক্ষায়
আশা হারালে চলবে না৷ একদিকে হতাহতের পরিবার যখন আহাজারি করছে, আশার বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন সিরিয়ার দুই শিল্পী৷ আজিজ আসমার এবং সালাম হামেদ ধ্বংসস্তূপেই রংতুলি নিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন নানা চিত্র৷ ফুটিয়ে তুলছেন ভালোবাসা৷
এডিকে/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)