ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলাতে চাই সঠিক মানসিকতা
১৯ জুন ২০২৩গোটা বিশ্বে দুইশো কোটিরও বেশি মানুষ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বাস করেন৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন কীভাবে নির্মাণ করা সম্ভব?
একটি মৌলিক নিয়ম হলো, যেখানে ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে যে কোনো ভবনের দৈর্ঘ্য প্রস্থের তুলনায় তিন গুণের বেশি এবং উচ্চতা প্রস্থের চার গুণের বেশি হলে চলবে না৷ ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে জাপান ও চিলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে৷ নিরাপদ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন উপাদান উপযুক্ত?
কাঠ ও বাঁশ ভূমিকম্প প্রতিরোধী হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর৷ তাছাড়া কাঠের মূল্যও অপেক্ষাকৃত কম এবং স্থানীয় পর্যায়ে সহজে পাওয়া যায়৷ অন্যদিকে ভূমিকম্প ঘটলে ইট ও মাটির ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি৷ তাছাড়া ইট অত্যন্ত ভারি হওয়ায় ভূমিকম্পের সময়ে মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে৷
বাংলাদেশে নির্মাণ প্রকল্প দেখিয়ে দিয়েছে, যে মাটি দিয়েও ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন তৈরি করা সম্ভব৷ তবে পাট দিয়ে সেই মাটি আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে৷ কংক্রিটের ভবন যাতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে না পড়ে. নতুন প্রযুক্তি তা সম্ভব করে তুলছে৷ যেমনটা সম্প্রতি তুরস্কে দেখা গেছে৷
বর্তমানে একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ ছাদের উপর ‘স্লাইডিং ওয়েট', অর্থাৎ ভাসমান ওজন রাখা হচ্ছে৷ কোনো ভবন স্থিতিশীল রাখতে কোন শক্তি প্রয়োগ করা উচিত, এক অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে দেওয়ালের সেন্সর তা সর্বদা মেপে চলেছে৷ এই যন্ত্র ভবনের কম্পনের বিপরীত গতিতে কাজ করে আবার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে৷ এভাবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক কমানো ও ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা দূর করা যায়৷ সেই প্রযুক্তির পেছনে রয়েছে আইসাক কোম্পানি৷ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আরব্যার্তো বুসিনি বলেন, ‘‘এমন ধরনের প্রযুক্তির মধ্যে বুদ্ধিমত্তা যোগ করার আইডিয়া এসেছিল৷ এই যন্ত্র যাতে বুঝতে পারে, কোথায় সেটি বসানো আছে এবং সেই অনুযায়ী নতুন কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে কী কী পরিবর্তন প্রয়োজন৷ সেই লক্ষ্যে মস্তিষ্ক বসানোর প্রয়োজন দেখা দেখা দিয়েছিল৷ ভূমিকম্পের সময় কাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া জরুরি৷''
বহুতল অট্টালিকায় যেমন কয়েকশো টন ওজনের ভারি ভাসমান পেন্ডুলাম যে কাজ করে, এ ক্ষেত্রেও তেমন ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে৷ বুসিনি বলেন, ‘‘সেন্সর থাকায় সব সময় কাঠামোর উপর নজর রাখা যায়৷ এমনকি ভূমিকম্পের পরেও বলা যায় যে ভবনের অবস্থা ভালো আছে৷ ভূমিকম্পের পর ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে বুঝতে হবে, সেটি সব টানপড়েন সামলে নিয়েছে, ভেতরের মানুষ ভালো আছে৷ সেটাই জরুরি বিষয়৷ কিন্তু এর অর্থ, ভূমিকম্পের পর ভবনের যে ক্ষতি হতে পারে, সেটা মেনে নিতে হবে৷ সেটা একটা সমস্যা বটে, কারণ সেই ব্যয় মালিক বা প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে পড়বে৷ সেটা এড়াতেই আমাদের প্রযুক্তি আসরে নামছে৷''
বহুতল ভবনগুলি সাধারণত নমনীয় ইস্পাতের কাঠামো দিয়ে তৈরি করা হয়৷ অর্থাৎ ভূমিকম্প হলে কম্পনের তরঙ্গ অনুযায়ী সেগুলি দুলবে, ভেঙে যাবে না৷ বড় ভবনের নীচে সুড়ঙ্গ এবং ‘সিজমিক শক অ্যাবসর্বার' রাখা যেতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে ভূকম্পনের তরঙ্গের উপর ভবন ‘সার্ফ' করবে এবং হালকাভাবে দুলবে৷
এত কিছু জানা সত্ত্বেও মানুষ ও সরকার ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ভবন নির্মাণের ব্যয় শুনে পিছিয়ে আসে৷ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমানো গেলেও ঠিক সময়ে সেই পদক্ষেপ নেবার মানসিকতা নেই৷
ফেলিক্স পাউশিঙার/এসবি