ভূমধ্যসাগরে প্রতিদিন গড়ে একজন অভিবাসী শিশুর মৃত্যু
১৬ এপ্রিল ২০২৫এতে দেখা যাচ্ছে, গড়ে প্রতিদিন একজন অভিবাসী শিশু ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন৷
ইউনিসেফ জানিয়েছে, মৃত বা নিখোঁজ অভিবাসী শিশুর প্রকৃত সংখ্যা ‘আরো অনেক বেশি' হতে পারে৷
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ২২ হাজার মানুষ মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন৷
আর তাই উত্তর আফ্রিকার উপকূল থেকে ইটালি পর্যন্ত বিস্তৃত সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় সমুদ্রপথটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিবাসন রুট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷
এই অভিবাসন রুটের প্রতি ছয় জন অভিবাসীর মধ্যে একজন শিশু বলেও জানিয়েছে ইউনিসেফ৷ এসব শিশুদের বেশিরভাগই অভিভাবকবিহীন এবং তারা একাই এই ভয়াল সমুদ্র পাড়ি দিতে চান৷
সংস্থাটি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘‘সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুট পাড়ি দেয়ার চেষ্টারত প্রতি ১০ জন শিশু এবং তরুণের মধ্যে অন্তত সাত জন নানা ভাবে শোষণের শিকার হয়েছেন৷এসব শিশুদের সহিংসতা, নির্যাতন, যৌন শোষণ, জোরপূর্বক শ্রম, বাল্যবিবাহ এবং বন্দিদশার মতো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে৷''
ইউনিসেফ তাদের প্রতিবেদনে ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল অভিবাসীবাহী একটি নৌকাডুবির কথা তুলে ধরেছে৷ ওই নৌকাডুবির ঘটনায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন৷
সংস্থাটি বলেছে, ওই নৌকাডুবির পরিবর্তে ‘‘এমন একটি মুহূর্ত হওয়া উচিত ছিল, যেখানে সব দেশ এবং সম্প্রদায় এক হয়ে শিশুদের সুরক্ষায় তাদের নিজ দেশে এবং যাত্রার সময়ে এগিয়ে এসেছিলেন...৷''
ইউনিসেফ জানিয়েছে, ‘‘কিন্তু এটি না হয়ে, গত এক দশক ধরে অসংখ্য নৌকাডুবির ঘটনায় হাজারো শিশু প্রাণ হারিয়েছেন৷''
ইউনিসেফ-এর ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক এবং ইউরোপমুখী শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক বিশেষ সমন্বয়কারী রেজিনা দে দমিনিচিস বলেন, ‘‘জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সব দেশের সরকারকে অবশ্যই শিশুদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষা করতে হবে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘শিশু অধিকার সনদে অন্তর্ভুক্ত অধিকারগুলো শুধু সীমান্ত বা উপকূলেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শিশুরা যখন সীমান্ত অতিক্রম করে তখনও তাদের অধিকার সুরক্ষিত থাকা উচিত৷''
এদিকে, ইটালির কট্টর ডানপন্থি সরকারের প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নিয়েছেন নানা উদ্যোগ৷
ইউরোপমুখী অভিবাসীদের একটি বড় অংশ উত্তর আফ্রিকার দেশ টিউনিশিয়া এবং লিবিয়ার উপকূল থেকেই ভাগ্য বদলের আশায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে থাকেন৷ তাদের বেশিরভাগেরই লক্ষ্য থাকে ইটালি পৌঁছানো৷ আর সেই দুটি দেশের সঙ্গেই চুক্তি রয়েছে ইটালির৷ চুক্তির আওতায় অভিবাসীদের যাত্রা ঠেকাতে কাজ করে দেশ দুটির প্রশাসন৷ বিনিময়ে তাদের অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে ইটালি৷
ইটালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছরের শুরু থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১১ হাজার ৮০৫ জন অভিবাসী দেশটির উপকূলে পৌঁছেছেন৷ তাদের মধ্যে এক হাজার ৫৮৮ জন ছিলেন অভিভাবকবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক৷
২০২৪ সালেও ইটালি পৌঁছেছেন আট হাজার ৪৩ জন অভিভাবকবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক৷ ২০২৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ১৮ হাজার ৮২০৷
ইউনিসেফ জানিয়েছে, অভিবাসনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক শিশু এখনো ‘তাদের মৌলিক অধিকার' থেকে বঞ্চিত৷ তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিন্ন আশ্রয়নীতি প্রণয়ন করার কারণে আগামী দিনগুলোতে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা আরো সুসংগঠিত হতে পারে বলে আশা করছে তারা৷ কিন্তু শিশুদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় আইনি বাধ্যবাধকতা মেনেই তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি৷
সমুদ্রে শিশুমৃত্যু ঠেকাতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান বাড়ানোরও তাগিদ দিয়েছে ইউনিসেফ৷ বলেছে, একজন শিশু অভিবাসী হিসাবে একটি দেশে ঢোকার পরপরই তাকে তাৎক্ষণিক আইনি সুরক্ষার সুযোগ দিতে হবে৷ চলাচলের উপর বিধিনিষেধের আরোপ করে কোনো শিশুকে অভিবাসী অভ্যর্থনা কেন্দ্রে বা আশ্রয়কেন্দ্রে আটকে রাখা উচিত নয় বলে মনে করে ইউনিসেফ৷
টিএম/এসিবি (এএফপি, ইউনিসেফ)