ভুল স্বীকার ও পদত্যাগের কিছু উদাহরণ
দায় স্বীকার ও ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ভুল স্বীকার করে পদত্যাগের উদাহরণ সারা বিশ্বে কিন্তু কম নেই৷ ছবিঘরে দেখুন দায় স্বীকার ও পদত্যাগের বড় কিছু উদাহরণ৷
রিচার্ড নিক্সন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৯৭৪)
অ্যামেরিকার ইতিহাসে একমাত্র প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন, যিনি পদত্যাগ করেন৷ ১৯৭২ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির সদর দফতরে পাঁচজন ধরা পড়ে। নিক্সন সেই তথ্য গোপনের চেষ্টা করেন। ১৯৭৪ সালে কংগ্রেসে তার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভাবনা দেখা দিলে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে তিনি গোপন টেপের কিছু অংশ প্রকাশ করতে বাধ্য হন৷ তাতে তিনি যে তদন্তে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তা স্পষ্ট হয়।
জন প্রোফুমো, যুক্তরাজ্য (১৯৬৩)
ষাটের দশকে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে ঝড় তুলেছিল ব্রিটিশ সেক্রেটারি অফ স্টেট অফ ওয়ার জন প্রোফুমোর সঙ্গে ১৯ বছর বয়সি মডেল ক্রিস্টিন কিলারের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক৷ এ বিষয়ে সংসদে মিথ্যা তথ্য দিলেও পরে তদন্তে সত্য প্রকাশ পায় ও পদত্যাগ করেন প্রোফুমো৷ এই ঘটনাটি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বড় প্রশ্ন তুলেছিল, কারণ, ক্রিস্টিন কিলার তখন সোভিয়েত নৌবাহিনীর সদস্য ইয়েভগেনি ইভানোভের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
কার্ল-থিওডর ৎসু গুটেনবের্গ, জার্মানি (২০১১)
পিএইচডি থিসিসে নকল করে তৎকালীন জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গুটেনবার্গ পদত্যাগ করেন। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ পায়। তিনি স্বীকার করেন, তার থিসিসের অনেক অংশ অনুমতি ছাড়া অন্য লেখকদের কাজ থেকে নেওয়া হয়েছে এবং যথাযথভাবে সূত্রও উল্লেখ করা হয়নি। এই কেলেঙ্কারির ফলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তার ডক্টরেট ডিগ্রি বাতিল করে দেয় এবং গুটেনবার্গ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন।
ইউকিয়ো হাটোয়ামা, জাপান (২০১০)
তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী হাটোয়ামা প্রতিশ্রুতি দেন যে, ওকিনাওয়া দ্বীপ থেকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি সরিয়ে নেবেন। প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা এবং সরকারের অদক্ষতা সমালোচনার মুখে পড়ে। একই সময় দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। অবশেষে ২০১০ সালের জুনে তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতা ও দুর্নীতির দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেন৷
চোই কিয়ুং-হোয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া (২০১৬)
চোই কিয়ং-হোয়ান ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী। ২০১৬ সালে এই দুই পদ থেকে সরে দাঁড়ান। সেই সময় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গেয়ুন-হেয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল৷ তদন্ত চলছিল তার প্রশাসনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে। এই দুর্নীতি কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক চাপ এবং তদন্তের সম্ভাবনাই চোই কিয়ং-হোয়ানকে পদত্যাগে বাধ্য করে।
জেকব জুমা, সাউথ আফ্রিকা (২০১৮)
তার নিজের দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) একাধিক দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের কারণে তাকে পদত্যাগ করতে বলে৷ ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন৷ তিনি বলেন, যদিও তিনি দলের সিদ্ধান্তের সাথে একমত নন, তবুও দেশের শান্তি ও দলীয় ঐক্য রক্ষার জন্য পদত্যাগ করছেন।
ডেভিড গ্যারেট, নিউজিল্যান্ড (২০১০)
১৯৮৪ সালে মারা যাওয়া এক শিশুর পরিচয় ব্যবহার করে জাল পাসপোর্ট করিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের সংসদ সদস্য ডেভিড গ্যারেট৷ ২০১০ সালে এই খবর প্রকাশিত হলে তিনি প্রথমে তার দল অ্যাক্ট পার্টি ও সংসদ সদস্যের পদ ত্যাগ করেন৷ পদত্যাগের সময় জানান, পুরো ঘটনার জন্য তিনি গভীরভাবে অনুতপ্ত৷