ভারতের তামিলনাড়ুর কৃষির ভবিষ্যৎ সমন্বিত খামার?
২৬ জুন ২০২৫মাল্টিক্রপিং বা বহু ফসলি পদ্ধতিতে চাষ আগাছা বৃদ্ধি রোধে সাহায্য করে এবং ফসলের ক্ষতির ঝুঁকি কমায়৷
সম্বৎ কুমার পেশায় একজন প্রকৌশলী৷ কিন্তু ১৪ বছর ধরে তিনি নিজের খামার পরিচালনা করছেন৷ দশ হেক্টর জমিতে প্রায় সম্পূর্ণ সার্কুলার বা চক্রাকার পদ্ধতিতে পশুপালন করেন এবং ফসল ফলান তিনি৷ কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করেন না৷ প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন পদ্ধতি চেষ্টা করার পর ব্যবসা এখন ভালো৷
সম্বৎ কুমার বলেন, ‘‘আমাদের সমন্বিত খামারে ফসল, গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির পাশাপাশি আমরা মাছ আর খরগোশও পালন করি৷ ফসলের জন্য সার হিসেবে আমরা মল ব্যবহার করি৷ এভাবেই সমন্বিত কৃষিকাজ খুবই লাভজনক হয়ে ওঠে৷''
টেকসই সমন্বিত কৃষিকাজে আগ্রহী কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে তামিলনাড়ু সরকার৷ কারণ, কাজ শুরু করা সহজ নয়৷
সম্বৎ কুমার বারো বছর ধরে তার জমি চাষ করেননি৷ পশুদের থেকে পাওয়া প্রাকৃতিক সার মাটির জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই সরবরাহ করে৷ মাটির উপরের স্তরগুলো আলগা করে অণুজীব আর কৃমি৷ তবে এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগে৷
সেখানে আপনি বড় কোনো জমি পাবেন না, যেখানে মনোকালচার হচ্ছে৷
সম্বৎ কুমার বলেন, ‘‘আগাছা এড়াতে আমরা মাল্টিক্রপিং বা বহু ফসলি পদ্ধতিতে চাষ করি৷ প্রথম একরে নারকেল আছে, দ্বিতীয়তে আছে ট্রি ক্রপ৷ তৃতীয়টিতে, কলা আর পেঁপের মতো ফসল৷ চতুর্থটিতে, শজনে গাছ এবং পশুখাদ্য ফসল, আর পঞ্চমটিতে মরিচ৷ সূর্যের আলো অনুসারে আমরা সেগুলি সাজাই৷ যখন পর্যাপ্ত ছায়া থাকে, তখন আগাছার বৃদ্ধি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়৷''
অন্যান্য এলাকার মতো তামিলনাড়ুতেও কৃষিকাজ দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে৷ খরা অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়, আর তারপর খুব ভারী বৃষ্টিপাত হয়৷ সম্বৎ কুমারের মতো টেকসই খামারগুলি এসব মোকাবেলার জন্য অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে- বিপণনকারীরাও তা ভালোভাবেই জানেন৷
সমবায় বাজার সংগঠক কার্তিক বলেন, ‘‘এই পরিবর্তনগুলি বিবেচনায় নিলে অন্যান্য খাতের তুলনায় কৃষকদের জন্য ঝুঁকির কারণ অনেক বেশি৷ কিন্তু মাল্টি ক্রপিং পদ্ধতিতে চাষ ধীরে ধীরে ঝুঁকি কমায়৷ তিন মাস ধরে বৃষ্টি না হলেও আমরা এক বা অন্য ফসল থেকে আয় করতে পারি৷ কিন্তু একটিমাত্র ফসল চাষ করা অনেকটা জুয়ার মতো ব্যাপার৷ সেক্ষেত্রে শুধু একটি বিকল্প থাকে, হয় আপনি জয়ী হন বা সবকিছু হারান৷''
খামারের সাফল্যের আরেকটি কারণ: নিজের ফসল প্রক্রিয়াজাত করেন সম্বৎ কুমার তার৷ তিনি নিজেই নারকেল শুকান কিংবা নিজস্ব মিলে নারকেল থেকে তেল উৎপাদন করেন৷
বিক্রির আগে কলা শুকিয়ে নিলে তার আয়ও বেশি হয়৷ পেশাদার বিপণনকারীরা তাকে গ্রাহকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন৷
কার্তিক বলেন, ‘‘আমরা জৈব চাষি ও তাদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য ক্রমাগত বাজার তৈরি করে চলেছি৷ গ্রাহকরা একজন কৃষকের কাছ থেকে একাধিক জৈব পণ্য চান৷ তাই একজন কৃষক যখন একসঙ্গে একাধিক ফসল চাষ করেন, তখন আমাদের পক্ষে গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তৈরি করা সহজ হয়৷ কিন্তু একটিমাত্র ফসল চাষ করলে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো এবং উৎপাদিত পণ্য বিক্রি কঠিন হয়ে ওঠে৷ তাই সমন্বিত চাষ খুবই লাভজনক৷''
সমন্বিত চাষের কারণে সম্বৎ কুমারের খামার অনেকদিন ধরে একটি লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠেছে৷ এটি সাফল্যের একটি মডেল, এলাকার অন্য কৃষকদের জন্যও৷
মদন কুমার/জেডএইচ