ভারতের কারাগারে জাতপাত নিষিদ্ধ হলো, বিজ্ঞপ্তি পশ্চিমবঙ্গেও
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বৃটিশ আমলের কারা আইন ১৮৯৪-এর উপর ভিত্তি করে এদেশে তৈরি হয়েছিল কারা-বিধি। সেই বিধি অনুযায়ী 'যোগ্য বর্ণের' বন্দিরাই পারতেন খাবার রান্না ও পরিবেশন করতে। ক্ষৌরকর্ম করতেন 'উচ্চবর্ণের' বন্দিরা। নিম্নবর্গীয়দের জন্য বরাদ্দ ছিল সাফাইকাজ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কারাগারে এই অসাংবিধানিক 'বর্ণাশ্রম' প্রথার অবসান ঘটলো। তার ভিত্তিতেই রাজ্য কারা দফতর এই সব বৈষম্যমূলক বিধিগুলি বাদ দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
যেসব বিধিতে বদল এলো
এই নির্দেশে যে বিধিগুলি বাতিল হলো তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রুল ৭৪১। এই রুল অনুযায়ী, 'আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে যোগ্য বর্ণের বন্দিকে দিয়ে খাবার রান্না ও পরিবেশন করাতে হবে।' এছাড়া বাতিল হয়েছে রুল ৭৯৩, যাতে বলা হয়েছে, উচ্চবর্ণের বন্দিরাই করবেন ক্ষৌরকর্মের কাজ। সাফাইকর্মী হবেন নিচু জাতের বন্দিরা। স্বেচ্ছায় সাফাইকাজ করতে কেউ এগিয়ে এলে তাকে সেই দায়িত্ব দেয়া হবে। পরিবর্তনের ফলে একথা নিশ্চিত করা হয়েছে যে যেকোনো বর্ণের বন্দিরা রান্নায় এবং পরিবেশনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
'বৃটিশ নিয়মের বদল'
মেদিনীপুর সংশোধনাগারের প্রশাসনিক বিভাগের সাবেক ডিআইজি অরিন্দম সরকার ডিডাব্লিউকে বলেন, "এই বিধি অনেক পুরনো – মূলত স্বাধীনতার আগের। যে বর্ণাশ্রমের কথা লেখা ছিল তা বৃটিশ আমলেই পালন করা হতো।"
তিনি আরো জানান তার কর্মজীবনে পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে বর্ণের বিভাজন তিনি দেখেননি। "উঁচুনিচু জাতের বিভাজন তো দেখাই যায়না। উপরন্তু, আমাদের সংশোধনাগারে ধর্মের বিভাজনও নেই বললেই চলে। হিন্দু অনুষ্ঠানে মুসলমান বন্দিদের পাওয়া যায়। ইদের মতো অনুষ্ঠানে হিন্দুরা উপস্থিত থাকেন।"
'বর্ণবিভাজনের উদাহরণ নেই বঙ্গে'
তার সঙ্গে একমত অভিনেতা নাইজেল আকারা। নাইজেল ২০০০ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত কারাবন্দি ছিলেন। "জেলে মূলত পারদর্শিতা এবং উৎসাহের ভিত্তিতে কাজ নির্দিষ্ট করা হয়। কেউ রান্না ভাল করলে তিনি রান্না করেন। কেউ অফিসের কাজ ভাল করলে তাকে সেই কাজে নিযুক্ত করা হয়। কাজের দক্ষতার উপর পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট করা থাকে। আমি যতদিন বন্দি ছিলাম এমনটাই দেখেছি।"
তবে তিনি আরো জানান পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ছবিটা ভিন্ন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। "বাংলার বাইরে, বিশেষ করে গোবলয়ে, বর্ণ বিভাজন আছে বলেই শুনেছি।" নাইজেল তাঁর কারাজীবনের অধিকাংশ সময় প্রেসিডেন্সি এবং আলিপুর জেলে কাটিয়েছেন।
নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায় প্রায় দু'দশক ধরে বন্দিদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন। "পশ্চিমবঙ্গে আমরা জেলখানাকে সংশোধনাগার বলি। আমার কাজে আমি সব বন্দিদের সমান অংশগ্রহণ দেখেছি। শুধু জাত নয়, জেলের ভেতর ধর্ম বিভাজনও দেখা যায় না।”