ট্রাম্পের আরো ২৫ শতাংশ শুল্ক, ভারত বললো 'অন্যায় ও অযৌক্তিক'
৭ আগস্ট ২০২৫মঙ্গলবারই ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালু রাখার জন্য তিনি একদিনের মধ্যে ভারতের উপর আরো শুল্ক বসানোর ঘোষণা করবেন। বুধবার তিনি প্রশাসনিক নির্দেশে সই করে ভারতের উপর আরো ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর আগে তিনি ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসিয়েছিলেন। ফলে সবমিলিয়ে ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ হারে শুল্কবসানো হলো। শুধুমাত্র ব্রাজিল ও ভারতের উপরেই ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়া বিবৃতি দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, আমরা আগেই এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলাম। আমরা জানিয়েছিলাম, ''আমাদের আমদানি সবসময় বাজারের উপর নির্ভর করে এবং ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করি। তাই এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক যে কারণে বসিয়েছে, সেই একই কাজ বিশ্বের অনেক দেশই তাদের নিজেদের জাতীয় স্বার্থে করে।''
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''আমরা আবার জানাচ্ছি, এই সিদ্ধান্ত অন্যায্য ও অযৌক্তিক। ভারত তার জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।''
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর আগে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ''ইউক্রেন সংঘাতের পর ভারত একাই রাশিয়ার পণ্য আমদানি করছে এমন নয়। ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়া থেকে শুধু জ্বালানি কিনছে তাই নয়, তারা সার, খনিজ দ্রব্য, রাসায়নিক, ইস্পাত এবং পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানি করছে। অ্যামেরিকাও তাদের পরমাণু শিল্পের জন্য রাশিয়া থেকে হেক্সাফ্লোরাইড, ইলেকট্রিক ভেহিকেলের জন্য প্যালাডিয়াম, সার ও অন্য়ান্য রাসায়নিক আমদানি করছে।''
ট্রাম্প যখন এই বাড়তি শুল্কের ঘোষণা করছেন, তখন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল রাশিয়া সফর করছেন। তিনি সেখানে অস্ত্র ও তেল কেনা নিয়ে কথা বলবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
ট্রাম্প যা বলেছেন
প্রশাসনিক নির্দেশে ট্রাম্প বলেছেন, ''রাশিয়ার নীতি ও কাজ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতিকে অস্বাভাবিক ও অসাধারণ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এই জাতীয় জরুরি অবস্থায় আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভারতের পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানোটা জরুরি। ভারত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে।''
নির্দেশে ট্রাম্প বলেছেন, অন্য কোনো দেশ রাশিয়া থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তেল কিনছে কিনা, তা দেখার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বলেছেন। অন্যরা তেল কিনলে তাদের উপরেও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে কিনা, সেই বিষয়েও মতামত জানাতে বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ''ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে ভারতকে ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছেন। ভারতকে ভয় দেখিয়ে অন্য়ায় বাণিজ্য চুক্তিতে বাধ্য করাতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রীর উচিত, জাতীয় স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দেয়া।''
কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের মত হলো, ''ট্রাম্পের এই ঘোষণা ভারতের কাছে সুখবর নয়। এর ফলে অ্যামেরিকায় ভারতীয় জিনিসের দাম অনেক বেড়ে যাবে এবং অনেক মানুষ তা কিনতে পারবেন না। ভিয়েতমান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন্স, এমনকী বাংলাদেশের উপর শুল্কের হার ভারতের থেকে অনেক কম। ফলে অ্যামেরিকার মানুষ অন্য দেশ থেকে আসা কম দামে জিনিস পাবে। এর ফলে আমাদের অন্য দেশের বাজারের দিকে তাকাতে হবে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, ইইউ-র সঙ্গে কথা চলছে। তবে স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে ট্রাম্পের ঘোষণা ভারতের কাছে ধাক্কা।''
রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ওব্রায়েন সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বলেছেন, ''ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে ৫৬ ইঞ্চি কী বলবেন? এখন আমরা বুঝতে পারছি মোদী ও তার জোট কেন সংসদ চলার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে।''
জিএইচ/এসসি(রয়টার্স, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি, এএনআই)