ভারতে ঘরে চাষ হচ্ছে জাফরান
১৮ মার্চ ২০২৫তাদের একজন রমেশ গেরা৷ ঘরে জাফরান চাষ সম্ভব করতে তিনি তার বাড়ির একটি ঘরে কাশ্মীরের মতো ঠান্ডা আবহাওয়া তৈরি করেছেন৷
রমেশ গেরা বলেন, ‘‘জলবায়ুর চারটি প্যারামিটার আছে, প্রথমটি তাপমাত্রা, দ্বিতীয়টি আর্দ্রতা, এরপর আছে আলো নিয়ন্ত্রণ ও বায়ু প্রবাহ৷ এখানে আমরা এই চারটি প্যারামিটারই কাশ্মীরের মতো করে তৈরি করি৷ কাশ্মীরে বছরের বিভিন্ন সময়ে জলবায়ুতে যেমন পরিবর্তন হয় আমরাও এখানে তা করে থাকি৷''
জাফরান ফুল ফোটার জন্য শীতল পরিবেশ দরকার হয়৷ এসির সাহায্য সেটি এই ঘরে নিশ্চিত করা হয়৷ আর বিশেষ আলোর ব্যবস্থা করে সূর্যের আলোর অভাব পূরণ করা হয়৷ এই ঘরে এয়ারোপনিক্স পদ্ধতিতে জাফরান চাষ করা হয় বলে মাটি বা পানির প্রয়োজন হয় না৷ এই গাছগুলো মাটিতে আট মাস রাখা হয়, এবং তারপর এই শীতল ঘরে চার মাস থাকে৷
রমেশ গেরা বলেন, ‘‘জাফরান বাল্বের নিচে একটা বাল্ব আছে, আর উপরে আছে কাণ্ড৷ বাল্বটি স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ প্রকৃতি বা ঈশ্বর এতে পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে রেখেছে৷ তাই কাশ্মীরের মতো আবহাওয়া পেলেই এটি অঙ্কুরিত হতে থাকে৷ দেড় থেকে দুই মাস পর অঙ্কুর থেকে ফুল ফুটতে থাকে৷ এরপর আমরা ফুল থেকে জাফরান সংগ্রহ করি৷''
ড. নাশিমান আশরাফ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে জাফরানের মান উন্নয়নের চেষ্টা করছেন৷ জাফরান নিয়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করেছেন৷ তিনি বলছেন, ঘরে জাফরান চাষের অনেক ভালো দিক আছে৷
ড. আশরাফ বলেন, ‘‘ঘরে জাফরান চাষের ভালো দিকের মধ্যে আছে, এর ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় ও নির্দিষ্ট সময়ে সেচ দেওয়া যায়৷ এসব কারণে ভালো মানের জাফরান পাওয়া যায়৷ আর খোলা মাঠে জাফরান চাষ করলে কিছু বিষয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না, যেমন, যখন বৃষ্টি হওয়া ঠিক নয়, তখন বৃষ্টি হতে পারে৷ ফলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে৷ খোলা মাঠের কারণে রোগ ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা থাকে৷ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগতো আছেই৷ ঘরে চাষ করলে এসব এড়ানো যেতে পারে৷''
কাশ্মীর থেকে প্রায় সাড়ে ৫০০ কিলোমিটার দূরে চণ্ডিগড়ে একটি কারখানা ভবনের বেসমেন্টে এই জাফরান খেতটি অবস্থিত৷ নলিন গুপ্ত কয়েক বছর ধরে সেখানে জাফরান চাষ করছেন৷ তিনি বলছেন, এভাবে জাফরান চাষ বেশ লাভজনক এবং এতে অনেক সম্পদও বাঁচে৷
নলিন গুপ্ত জানান, ‘‘আপনার বিশ্বাস হবে না যে, কাশ্মীরে এক একর জমিতে যে পরিমাণ জাফরান চাষ করা যায়, তা এখানে মাত্র ৭০০-৮০০ বর্গফুটে সম্ভব৷ আপনি যদি একটি ঘরেই সমপরিমাণ জাফরান পান তাহলে পানি ও শ্রমিকের মতো বিষয়গুলো অনেক কম লাগে৷''
এখন এই জাফরান গাছগুলিকে হিমঘর থেকে বের করে আবার মাটিতে লাগানো হবে - যেখানে তারা সংখ্যাবৃদ্ধি করবে৷ অর্থাৎ একটি গাছ থেকে দুই থেকে পাঁচটি এবং কখনও কখনও একটি গাছ থেকে দশটি নতুন গাছও তৈরি হয়৷
রমেশ গেরা জানান, ‘‘আপনি হিমাগারে ফসল পান, এবং যখন সেগুলি আবার মাটিতে রোপণ করা হয়, তখন আমরা সেখানে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের কোনো কাজ করি না৷ বীজের সংখ্যাবৃদ্ধি মাটিতে হয়, কারণ, এতে কোনো ধরনের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না৷ এগুলি -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে যে-কোনো তাপমাত্রায় সংখ্যাবৃদ্ধি করে৷''
রমেশ গেরা খুশি যে এই জাফরান চাষ তাকে অবসর নেওয়ার পরেও অবসর নিতে দেয়নি৷ তিনি বলছেন যে, যখন তিনি অন্য লোকদের ঘরে জাফরান চাষের প্রশিক্ষণ দেন, তখন তার অভিজ্ঞতাও বহুগুণ বেড়ে যায়৷ ঠিক এই জাফরানের চারাগুলোর মতো, যা তিনি এখন মাটিতে রোপণ করছেন৷
অশোক কুমার, রউফ গনি/জেডএইচ