ভারত-বাংলাদেশের ত্রিপুরা সীমান্তে বাড়ছে পাচার, অনুপ্রবেশ
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গত বছর অগাস্ট মাসে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে আগেই। অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে ধরাও পড়েছে অনেকে। বিএসএফ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ হয়েছে ত্রিপুরার সীমান্ত এলাকাগুলিতে। সিমনা, সাব্রুম, কৈলাশহর, সোনামুড়া, ধর্মনগর এলাকাগুলি থেকে হামেশাই অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, গরু ও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর পাচারের খবর আসে। গত কয়েকমাসে যা কয়েকগুণ বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আগরতলা রেলপুলিশ থানার অফিসার তাপস দাস জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ১ অগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুপ্রবেশ এবং মানবপাচার সংক্রান্ত ২৯টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। ওই সময়কালে ৩০ জন মানব পাচারকারী, ৯৮ জন বাংলাদেশি, ১০ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাচারকারীদের মধ্যে ৬ জন পশ্চিমবঙ্গের এবং ২ জন গুজরাটের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত ১৬ জন মানব পাচারকারী এবং ১৭ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী আটক হয়েছেন।
তবে চলতি বছরে ধৃত মানব পাচারকারীদের অধিকাংশই নতুন করে পাচারের সময় গ্রেফতার হয়নি। এদের ধরতে অনেকদিন ধরেই খোঁজ চালাচ্ছিল পুলিশ। বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই পুরনো কিছু মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। আগরতলা রেলপুলিশ থানার অফিসার তাপস দাস জানিয়েছেন, ''ধৃতদের মধ্যে অনেকেই একাধিকবার এই কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে। কিন্তু পরে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে ফের এই কাজে লিপ্ত হয়।''
সম্প্রতি বিএসএফ জানিয়েছে, তারা একটি নতুন দল গঠন করেছে। যারা নেশা প্রতিরোধে এবং পাচারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ধরার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্তে এই দল পুলিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করছে। পুলিশ জানিয়েছে, নতুন বছরের শুরুতেই বিএসএফ ও পুলিশের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় পাচার রোধ করা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে যারা ধরা পড়ছে, তাদের অধিকাংশের জন্যই পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে খোঁজ চালাচ্ছিল। যাদের ধরা হয়েছে, তাদের জেরা করে দলের অন্য ব্যক্তিদের ধরার কাজ শুরু হয়েছে।
সিমনা বিধানসভার ব্রহ্মকুণ্ড কলোনি সীমান্তের একদম ধারে। এলাকার বাসিন্দা গোপাল সাহা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, "গত বছর বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর যে পরিমাণে অনুপ্রবেশ ও পাচার বেড়ে গেছিল, বর্তমানে তা দেখা অনেকটাই কমেছে।। সীমান্তে টহলদারি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।" সোনামুড়া, বক্সনগর অঞ্চলের অধিবাসীরাও একই কথা বলেছেন।
তবে ত্রিপুরার মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তথা বিশিষ্ট আইনজীবী পুরুষোত্তম রায় বর্মন ডিডাবিল্উকে বলেছেন, "পুলিশ বা বিএসএফের দেওয়া তথ্য সম্পূর্ণ ঠিক এমনটা মনে করার কারণ নেই। পাচার এবং সীমান্ত পারাপারের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের বিষয় আছে। অনেক সময়েই পুলিশ এবং বিএসএফ এর সঙ্গে জড়িত থাকে বলে অভিযোগ আছে।" পুরুষোত্তমের বক্তব্য, এখন যে বিশেষ তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, তা কতদিন চলে, সেটি দেখতে হবে।
পুরুষোত্তমের মতো বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানিয়েছেন, ভিসার বিষয়টি অনুপ্রবেশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িতে। সম্প্রতি ভারতীয়দের জন্য নতুন করে ভিসা পরিষেবা শুরু করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত এখনও বাংলাদেশিদের ভিসা দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা থেকেই যাবে বলে তারা মনে করছেন।। তবে বিএসএফ ও পুলিশের দাবি, সীমান্তে এখন কড়া প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে মাঝে অনুপ্রবেশ যেমন বেড়েছিল তা এখন অনেকটাই কমেছে। বস্তুত, সে কারণেই গত কয়েকমাসে গ্রেপ্তারের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে।