ভাঙড় অশান্তই, সহিংসতার প্রতিবাদে মিছিল রাজপথে
১৯ জুলাই ২০২৩উত্তপ্ত ভাঙড়
পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোড়া থেকেই উত্তপ্ত ভাঙড়ে সংঘর্ষ, প্রাণহানি ঘটেছে। এই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। কিন্তু তাতেও উত্তেজনা কমছে না। মঙ্গলবার রাতে গুলিবিদ্ধ হন এক তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। বিভিন্ন এলাকায় রাতভর বোমাবাজি হয়েছে। আহত হাতেম মোল্লা চালতাবেড়িয়া পঞ্চায়েতে লড়ে পরাজিত হয়েছেন। এই ঘটনায় আইএসএফের দিকে আঙুল তুলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
হাতেমকে দেখতে বুধবার হাসপাতালে যান তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা ও ভাঙড়ের সাবেক বিধায়ক আরাবুল ইসলাম। তারা থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, "এলাকার আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী রয়েছেন সহিংসতার পিছনে। তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।" আরাবুল ও তার পুত্র হাকিমুল আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন ভাঙড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে দুজন আইএসএফ কর্মী ও একজন স্থানীয় বাসিন্দা। তার পর থেকে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নওশাদের দাবি, "তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে গন্ডগোলে অশান্তি ছড়াচ্ছে। তার দায় ঠেলা হচ্ছে আইএসএফের ঘাড়ে।"
চলতি সপ্তাহে অশান্ত ভাঙড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন নওশাদ। তাকে কলকাতার কাছেই আটকে দেয় পুলিশ। এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন বিধায়ক। এর পাশাপাশি ভাঙড়ের বিভিন্ন বুথে গণনায় কারচুপির অভিযোগে আইএসএফের প্রার্থীরা মামলা করেছেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে মঙ্গলবার এক তৃণমূল কর্মীর দেহ উদ্ধার হয়। এ নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে। মৃত চন্দন সামন্তের দেহের পাশে সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে বলে তৃণমূলের দাবি। তাতে বিজেপি কর্মীর নাম আছে বলে অভিযোগ।
বিজেপির মিছিল
পঞ্চায়েত ভোটে সহিংসতার প্রতিবাদে আজ কলকাতার রাজপথে মহামিছিলের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু পুলিশের অনুমতি ছিল না এই কর্মসূচিতে। তাই এই মিছিল ঘিরে গন্ডগোলের আশঙ্কা ছিল। যদিও নির্বিঘ্নেই শেষ হয়েছে কর্মসূচি।
কলেজ স্কোয়্যার থেকে মিছিল শুরু হয় দুপুর আড়াইটে নাগাদ। নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মিছিলে হাঁটেন দলের সাংসদ, বিধায়করা। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার রূপধারী এক মডেলকে কোমরে দড়ি পরিয়ে হাঁটানো হয় রাজপথে।
ধর্মতলা পর্যন্ত যায় বিজেপির মিছিল। পথে কোথাও পুলিশ বাধা দেয়নি। মিছিলের শুরুতে শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেন, আগামী শুক্রবার রাজ্যের বিভিন্ন বিডিও দপ্তরে অভিযান করবে বিজেপি। তিনি বলেন, "যে সব জায়গায় ভোটে অনিয়ম হয়েছে, সেখানকার বিডিও দপ্তর ২১ জুলাই ঘেরাও করা হবে। মনোনয়ন, ভোটগ্রহণ ও গণনা, এই তিন পর্বে ত্রিস্তরীয় কারচুপি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এই অভিযান।"
প্রতি বছর ২১ জুলাই শহিদ দিবস পালন করে তৃণমূল। এ বারও সমাবেশ হবে ধর্মতলায়। বিজেপির এ দিনের মিছিলকে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, "ওদের কাজকর্ম নেই। ওরা শুধু হিংসা করে। মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে। মানুষ এর বদলা নেবে। বদলা নেবে ভোটের মাধ্যমে।"
পুলিশ অনুমতি ছাড়া কেন মিছিল করতে দিল? প্রবীণ সাংবাদিক দেবাশিস দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন,"দুদিন পরই একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ। তার আগে আজ কোনো গন্ডগোল হোক, সেটা শাসক দল চায়নি। তার উপর পঞ্চায়েতে হিংসা, গণনায় কারচুপির অভিযোগে তারা কিছুটা ব্যাকফুটে। মামলা হচ্ছে একের পর এক। তাই আর সমস্যা বাড়াতে চায়নি তারা।"
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মামলা
শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে সহিংসতায় প্ররোচনা দেয়া ও উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের দাবি করেছেন মামলাকারী। রক্ষাকবচ থাকায় তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা যাচ্ছে না বলে সওয়াল করা হয়েছে মামলায়। বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি।
ফের কেন্দ্রীয় দল
নির্বাচন ঘিরে ওঠা সহিংসতার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিজেপির দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় দল পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। রবিশঙ্কর প্রসাদের নেতৃত্বে একটি দল সদ্য ঘুরে গিয়েছে। এ বার রাজ্যে এসেছে মহিলা সাংসদদের দল। পাঁচ সাংসদ রমা দেবী, কবিতা পতিদার, অপরাজিতা সারঙ্গী, সরোজ পান্ডে ও সন্ধ্যা রায়। মঙ্গলবার তারা উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় যান। বৃহস্পতিবার পাঁচ সাংসদ যান হাওড়ার আমতায়। সেখানে তাদের দেখে জয় বাংলা স্লোগান দেয়া হয়। আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে রমা দেবীর মন্তব্য, "এ রাজ্যে গণতন্ত্রকে খুন করা হয়েছে। গরিব মানুষকে আক্রমণ করা হচ্ছে। এতো খুন হয়ে গেলেও রাজ্য সরকারের টনক নড়ছে না।"
হাসপাতালে মমতা
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম ও খেজুরিতে আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীদের চিকিৎসা চলছে এসএসকেএম হাসপাতালে। এই কর্মীদের দেখতে আজ হাসপাতালে যান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। আহতদের প্রত্যেকের হাতে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।