‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ ও প্রধান তিন সংকট
৩০ মে ২০২৫যখন একজন বিবাহিত নারী অনিচ্ছায়, ভয় বা মানসিক চাপে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য হন, তা কি ধর্ষণ নয়? রাষ্ট্র এখনো সে প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। বরং পিতৃতন্ত্র, ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও সাংস্কৃতিক অনমনীয়তার সমন্বয়ে এই প্রশ্নটিকেই ‘অপরাধ' বানিয়ে ফেলা হয়। নারীর অধিকার সম্পর্কিত যে-কোনো আলোচনা আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বলয়ের এক জটিল ছায়ার ভেতর সংঘটিত হয়, যা ফেমিনিস্ট ডিসকোর্সে "gendered political unconscious” হিসেবে চিহ্নিত।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার সুপারিশ করা হলে, সেটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিসরে প্রবল প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এ প্রস্তাবনার বিপক্ষে মন্তব্য করে বলেন, "বৈবাহিক সম্পর্কে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হলেও সেটিকে ধর্ষণ বলা অবমাননাকর।” এই বক্তব্যে যে গভীর সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক মানসিকতা নিহিত, তা এই প্রবন্ধের আলোচ্য।
১. ধর্ষণের সংজ্ঞা কি সম্পর্কের ধরনে বদলায়? একটি ফেমিনিস্ট জ্যুরিসপ্রুডেন্স বিশ্লেষণ
শফিকুর রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী, বিয়ের পর স্ত্রীর অনিচ্ছায় যৌন সম্পর্ক হলেও তা ধর্ষণ নয়, বরং তা দাম্পত্য জীবনের ‘ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ব'। এই বক্তব্যটি আসলে একটি পুরোনো কিন্তু ভয়ঙ্কর সামাজিক যুক্তির পুনরাবৃত্তি, যেখানে বিয়েকে নারীর শরীরের ওপর পুরুষের স্থায়ী অধিকার হিসেবে দেখা হয়।
ফেমিনিস্ট আইনতত্ত্বের দৃষ্টিতে, এটি "patriarchal legal relativism” বা পুরুষতান্ত্রিক সুবিধাভোগী আইনের এক নিদর্শন। অর্থাৎ, নারীর শরীর ও সম্মতির প্রশ্নকে সম্পর্কের ধরন অনুযায়ী ‘আলোচনার বিষয়' বানিয়ে দেওয়া, যেন বিয়ের পর যৌন সম্মতির প্রয়োজনীয়তা নিজেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। ডা. রহমানের এই ধারণা এক অর্থে সেই ঔপনিবেশিক ‘marital rape exemption clause'-এর ধর্মীয় পুনর্জাগরণ, যা এতদিন পেনাল কোডে লুকিয়ে ছিল, এখন তা ধর্মের ব্যাখ্যার ছায়ায় আবারও বৈধতা পাচ্ছে।
অথচ ধর্ষণের আন্তর্জাতিক সংজ্ঞাগুলো, যেমন জাতিসংঘের CEDAW (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women), স্পষ্টভাবে বলে, যেখানে সম্মতি নেই, সেখানেই ধর্ষণ। এই সংজ্ঞা কোনো সম্পর্কের ভিত্তিতে ছাড় দেয় না; বরং চায় প্রতিটি যৌন সম্পর্কে স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতির উপস্থিতি।
সম্মতি এখানে কেবল একবারের অনুমতি নয়, বরং এটি একটি চলমান, স্বাধীন, এবং প্রত্যাহারযোগ্য সিদ্ধান্ত। একবার বিয়ে হলেই সবসময় যৌন সম্পর্কের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এই যুক্তি সম্পূর্ণভাবে নারীর সত্তাকে অস্বীকার করে। যেমন ফেমিনিস্ট আইনবিদ ক্যাথরিন ম্যাককিনন বলেন:
"When consent becomes an obligation, it ceases to be consent.”
অর্থাৎ, যদি সম্মতি বাধ্যবাধকতায় পরিণত হয়, তাহলে তা আর সম্মতি থাকে না।
এই প্রেক্ষাপটে বিয়েকে যদি এক ধরনের ‘সর্বময় যৌন চুক্তি' হিসেবে দেখা হয়, যেখানে স্ত্রীকে সবসময় স্বামীর যৌন চাহিদা মেনে নিতে হয়, তবে সেটি আসলে "চুক্তিভিত্তিক যৌন দাসত্ব”, যার সামাজিক বৈধতা দেয় ধর্মীয় ব্যাখ্যা, আইনের নীরবতা, ও রাষ্ট্রীয় নির্লিপ্ততা। এভাবেই নারীর সম্মতি হারিয়ে যায় সম্পর্কের সংজ্ঞার ভেতর, আর ধর্ষণ হয়ে ওঠে ‘বিয়ের বৈধ অংশ'।
২. বৈবাহিক ধর্ষণ অস্বীকার মানে নারীর দেহরাজনীতিকে ‘স্বাভাবিক' করে তোলা
যখন একজন বিবাহিত নারী বারবার স্বামীর অনিচ্ছাকৃত যৌন চাপে পড়েন, কিন্তু সমাজ বা রাষ্ট্র তা ‘ধর্ষণ' হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে, তখন এই নীরবতা আসলে এক ধরনের রাজনৈতিক অবস্থান নেয়। এই অবস্থান বলে দেয়, নারীর দেহ যেন স্বামীর মালিকানাভুক্ত সম্পদ, যেখানে তার সম্মতি বা অনিচ্ছা রাষ্ট্রীয়ভাবে গৌণ।
ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর বায়োপলিটিকস তত্ত্ব অনুযায়ী, এই ধরনের আইনগত নীরবতা বা সামাজিক এড়িয়ে যাওয়া আসলে একপ্রকার "disciplinary mechanism”, যার মাধ্যমে নারীর শরীরকে নীরবে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখা হয়। নারীর দেহ এখানে আর নিজের নয়, বরং পিতৃতন্ত্র-নিয়ন্ত্রিত এক ‘নিয়ন্ত্রিত অবজেক্ট'।
এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র নিজেই অজান্তে "carceral patriarchy” বা একধরনের কারাগারসদৃশ পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলে, যেখানে আইন পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যের পাহারাদার হয়ে ওঠে। এখানে নারীর দেহিক অধিকার, মানসিক সুস্থতা বা আত্মপরিচয়, সবকিছুই হয়ে পড়ে ‘গৃহীত নীতি'র বাইরে'।
একটি নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বোঝা যায়, বৈবাহিক ধর্ষণের অস্তিত্ব অস্বীকার করার মানে হলো নারীর সম্মতি ও শরীরকে ‘স্বাভাবিকভাবে ব্যবহারযোগ্য বস্তু' হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা। এটি এক ধরনের "naturalisation of violation”, যেখানে নারীকে প্রতিনিয়ত বলা হয়, বিয়ের পরে তার দেহ আর নিজের নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু একটি নির্দিষ্ট আইনগত ফাঁক নয়, বরং একটি নৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট, যা নারীর মানুষ হয়ে বাঁচার অধিকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
৩. ধর্ম ও পিতৃতন্ত্রের অদৃশ্য জোট: যৌন ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ধর্মতত্ত্বের ব্যবহার
শফিকুর রহমানের মন্তব্য কেবল একটি ধর্মীয় ব্যাখ্যা নয়, বরং এটি একধরনের রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক কৌশল, যেখানে ‘ধর্ম'কে ব্যবহার করে নারী-পুরুষের ক্ষমতার অসমতা চিরস্থায়ী করার প্রয়াস চালানো। এই দৃষ্টিভঙ্গি ধর্মকে একটি "instrumentalised ideology”, অর্থাৎ, একটি ব্যবহারযোগ্য রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দাঁড় করায়, যার মাধ্যমে নারীর শরীর, চেতনা ও ইচ্ছাকে পিতৃতন্ত্রের শৃঙ্খলায় বন্দি করা যায়।
এই কাঠামোয় ইসলামিক শরিয়তের যে ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়, তা মূলত সিলেকটিভ, যেখানে কেবল পুরুষতান্ত্রিক হাদিস বা তাফসির তুলে ধরা হয় এবং কুরআনের পরিপূর্ণ ন্যায়সংগত ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে উপেক্ষা করা হয়। অথচ পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে বৈবাহিক সম্পর্কের মূলে রয়েছে ‘মাওয়াদ্দাহ' (স্নেহভাজনতা), ‘রাহমাহ' (দয়া) ও ‘তাসাকুন্ন' (পরস্পর শান্তি লাভ), যা পারস্পরিক সম্মান ও সম্মতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।
কিন্তু যখন ধর্মীয় ব্যাখ্যাকে একতরফাভাবে কেবল পুরুষের কাম-ইচ্ছাকে বৈধ করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন তা এক ধরনের রাজনৈতিক ধর্মতত্ত্বে পরিণত হয়, যেখানে ধর্মের মানবিকতা
নয়, বরং শাসনের যুক্তি প্রধান হয়ে ওঠে। এই ধর্মতত্ত্ব নারীকে কেবল শরীর হিসেবে দেখে; তার ইচ্ছা, অনুভূতি, না-বলা ভাষা বা মানসিক প্রতিক্রিয়া, সবকিছুকে অদৃশ্য করে দেয়।
ফলত, নারীর ‘সম্মতি' যেন হয়ে পড়ে ধর্ম ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধাচরণ, এক ধরনের ‘আধুনিক বিদেশি ধারণা' বলে উপস্থাপিত হয়, যেটা তথাকথিত মুসলিম নারীত্বের পরিপন্থী। অথচ বাস্তবে, এটি একটি মূল্যবোধগত দ্বন্দ্ব, যেখানে ধর্মীয় ব্যাখ্যার নামে পিতৃতন্ত্র তার আধিপত্য বজায় রাখতে চায়, এবং নারীর আত্মপরিচয় ও যৌন ন্যায়বিচারকে নীরবে নিঃশেষ করে দেয়।
এই প্রক্রিয়াটি কেবল মতাদর্শগত নয়, বরং এটি নারী-শরীর, নারী-ইচ্ছা ও নারী-অস্তিত্বের উপর একটি ক্ষমতার রাজনীতি, যা ধর্মের নামে সামাজিকভাবে বৈধতা পায়।
৪. আইনি কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় নীরবতা: ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার ও নারীর শরীর রাজনীতির এক নির্মাণ
বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা এখনো বলবৎ রয়েছে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, "স্ত্রী যদি ১৩ বছরের বেশি বয়সি হয়, তবে স্বামীর সঙ্গে তার অনিচ্ছাকৃত যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ বলা যাবে না।” এই ধারা কেবল একটি পুরনো আইন নয়, বরং এটি ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন, যেখানে স্ত্রীকে স্বামীর ‘চিরস্থায়ী যৌন সম্পত্তি' হিসেবে ভাবা হতো। ব্রিটিশ আইন নির্মাতা লর্ড ম্যাকলে'র দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমনই যে, একবার বিয়ে হয়ে গেলে স্ত্রীর সম্মতির আর প্রয়োজন পড়ে না, যেন বিয়ের মাধ্যমে একবারেই আজীবনের যৌন অনুমতি দেওয়া হয়ে গেছে। এই আইন এখনো বাতিল না হওয়া মানে রাষ্ট্র একটি "juridical patriarchy", অর্থাৎ, আইনি পিতৃতন্ত্র, বজায় রাখছে, যেখানে নারীর শরীর, ইচ্ছা ও সম্মতি আইনি বৈধতা থেকে বাদ পড়ে। নারী যেন কেবল একটি ‘বৈধ ভোগ্যবস্তু', যার ওপর স্বামীর অধিকার প্রশ্নাতীত।
রাষ্ট্র এখানে নিরব, আর এই নীরবতা নিছক অসচেতনতা নয়, বরং এটি এক ধরনের "strategic legal silence”, অর্থাৎ পরিকল্পিত নীরবতা। এই নীরবতা নারীর পক্ষে নয়, বরং পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক কাঠামোর সহায়ক; এটি পুরুষের যৌন অধিকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। ফুকোর বিশ্লেষণে যেমন দেখা যায়, ক্ষমতা সবসময় প্রকাশ্যে নয়, বরং অনেক সময় আইনি শূন্যতার ভেতরেই ক্ষমতা সক্রিয় থাকে। এই আইনটি রাষ্ট্রের এক ধরনের "legal complicity” বা আইনি সহ-অপরাধীতার উদাহরণ, যা নারীকে নাগরিক নয়, বরং কোনো এক পুরুষের অধিকারভুক্ত শরীর হিসেবে নির্ধারণ করে দেয়। এতে নারীর আত্মপরিচয়, শারীরিক নিরাপত্তা এবং যৌন স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে, এবং রাষ্ট্র সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার বদলে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
অন্যদিকে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে নেপাল ২০০৬ সালেই বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। নেপালি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করা হয়। সেখানে আইন বলছে, স্বামীর দ্বারা সংঘটিত জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কও ধর্ষণ, এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে CEDAW (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women) স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ বাধ্য যে, সকল রকম লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য ও সহিংসতা, যেমন বৈবাহিক ধর্ষণ, আইন দ্বারা প্রতিরোধ করবে। CEDAW এর General Recommendation No. 35 (2017)-এ বলা হয়েছে:
"Marital rape should be criminalized. The existence of a conjugal relationship or cohabitation must not justify violence, nor remove the criminal nature of non-consensual acts.”
অর্থাৎ, কেবল বিয়ের সম্পর্ক থাকলেই কোনো নারী তার যৌন স্বাধীনতা হারান না। তার সম্মতি রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এই সুপারিশের আলোকে, বাংলাদেশের বিদ্যমান ৩৭৫ ধারা CEDAW-এর মৌলিক চেতনার পরিপন্থী।
৫. পরিবার সম্মতিতে গড়ে ওঠে, নিপীড়নে নয়: এক রাজনৈতিক-নৈতিক বিশ্লেষণ
বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনি অপরাধ হিসেবে স্বীকার করা হলে সংসার ভেঙে পড়বে, এমন আশঙ্কা অনেকেই প্রকাশ করেন। কিন্তু এই আশঙ্কা আসলে একধরনের নৈতিক বিভ্রান্তি, যা পরিবারকে একটি সম্মতির নয়, বরং সহ্যশীলতার কাঠামো হিসেবে দেখায়। অথচ সত্য হলো, যেখানে পারস্পরিক সম্মান, ইচ্ছার স্বাধীনতা এবং ভালোবাসা নেই, সেখানে সম্পর্ক আর পরিবার থাকে না, থাকে কেবল ‘institutionalised subjugation', অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক শোষণ।
দাম্পত্য সম্পর্ক যদি নারীর স্বেচ্ছা না মেনে নেওয়া যৌন সম্পর্ককে চুপচাপ সহ্য করার কাঠামোতে পরিণত হয়, তবে তা একধরনের ‘ethical collapse', নৈতিক পতন, যেখানে নারী কেবল এক যৌন-উপলভ্য দেহে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে পরিবার বলে চালিয়ে দেওয়া মানে সংসারের নামে এক ধরনের বৈধ নিপীড়নকে রক্ষা করা, যা সমাজের মৌলিক নৈতিক ভিত্তিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ফেমিনিস্ট রাজনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী, পরিবার তখনই টিকে থাকে, যখন তা স্বেচ্ছা, সংলাপ ও পারস্পরিক সম্মানকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। অন্যথায়, এটি হয় ‘patriarchal continuity' এর হাতিয়ার, যেখানে নারীকে নীরব থেকে সহ্য করতে শেখানো হয়, শুধু নিজের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যেও সেই নিপীড়নের বীজ বপনের জন্য।
এই ধরনের দমনমূলক পারিবারিক কাঠামো সমাজে ‘generational patriarchy' প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে ছেলেরা শেখে নারীর ইচ্ছা উপেক্ষা করাই নর্ম, আর মেয়েরা শেখে নিপীড়নকে পরিবারের স্বার্থে সহ্য করাই দায়িত্ব। ফলে, বৈবাহিক ধর্ষণকে অস্বীকার করা মানে শুধু একজন নারীর অধিকার নয়, পুরো সমাজের নৈতিক চেতনাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করা।
ন্যায়বিচারই হোক রাষ্ট্রের দায়
‘সম্মতি' এখানে কেবল একটি যৌন রাজনীতি নয়, এটি একটি মানবাধিকার, একটি সামাজিক চুক্তি, এবং রাষ্ট্রীয় ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। যখন একটি রাষ্ট্র নারীর সম্মতি ও শারীরিক স্বাধীনতাকে অবৈধ বা অস্বীকৃত রাখে, তখন সে কেবল নারী নয়, তার নৈতিক কর্তৃত্ব, সামাজিক মর্যাদা এবং মানবিক অধিকারকেও অস্বীকার করে। একটি নারীবান্ধব, ন্যায্য ও মানবিক রাষ্ট্র কেবল তখনই গড়ে উঠবে, যখন নারীর সম্মতি, মত, দেহ ও ইচ্ছাকে পরিপূর্ণভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, চুক্তিপত্রে নয়, নীতিতে; আইনের শর্তে নয়, ন্যায়ের মূল্যে।