ইরানে রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগে কাজ করেন গাজী আব্দুর রশীদ। মঙ্গলবার বিকেলের দিকে কয়েক দফা চেষ্টায় তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলা সম্ভব হয়। তারপরও তিন-চারবার লাইন কেটে যায়। তিনি তেহরানেই অবস্থান করছেন। ১৬ জুন তেহরানে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার ভবন কম্পাউন্ডে (আইআরআইবি) ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলার সময় তিনি পাশের একটি ভবনেই ছিলেন। ওই ভবনেই রেডিও তেহরানের অফিস। এরপর থেকে তারা হোম অফিস করছেন। গাজী আব্দুর রশীদ বলেন, "আমরা অনেক ঝুঁকিতে আছি। গতকাল (১৬ জুন) তো একরকম প্রাণে বেঁচে গেছি। আইআরআইবি কম্পাউন্ড প্রায় ৫০০ একর জমির ওপর। আইআরআইবি সদর দপ্তরের একদম পাশেই বিশ্ব সম্প্রচার কার্যক্রমের অফিস। ওই সদর দপ্তরে হামলা হয়েছে। আমরা সেখানেই অফিস করি। আমরা অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। এখন আমরা সবাই বাসা থেকে অফিস করছি।”
তিনি জানান ‘‘তেহরানে এখন আতঙ্ক। হামলার তীব্রতা বাড়ায় বেশিরভাগ মানুষ তেহরান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। দোকানপাট বন্ধ। অফিস, স্কুল -কলেজও বন্ধ। জরুরি সেব প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। বিশেষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।”
"তেহরানে এক হাজারের মতো বাংলাদেশি আছেন। তবে সরকারি হিসাব না হলেও ধারণা করা হচ্ছে ১৪ হাজারের মতো বাংলাদেশি আছেন ইরানে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," ইরানে একটি ভিন্নরকম পরিস্থিতি এখন। তাই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরাখবর এখান থেকে পাওয়ার সুযোগ খুব কম। বাইরের মিডিয়াও এখানে তেমন সক্রিয় না। আর বাংলাদেশি কেউ হতাহত হয়েছেন বলে কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি।”
তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, "ইরানের রাজধানী তেহরানে একটা ভীতিকর অবস্থা চলছে। সবাই একটা নিরপদ আশ্রয় খুঁজছে। তেহরানের ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ এরইমধ্যে শহর ছেড়ে চলে গেছে। বাংলাদেশ দূতবাসের কর্মকর্তারা তেহরানে থেকেই অফিস করছেন। তাদের শহরের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে বলা হয়েছে। তেহরানে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা বা বাঙ্কার নাই। তবে অনেক বড় দেশ হওয়ায় তেহরানের বাইরে অনেক নিরাপদ জায়গা রয়েছে। সেখানে লোকজন চলে যাচ্ছেন।”
দূতাবাসের হিসাবে, ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতসহ মোট আট জন কর্মরত রয়েছেন। তাদের পরিবারের সদস্য আছেন ৪০ জন। তেহরান রেডিওর বাংলা বিভাগে আটজন কাজ করেন । পরিবারের সদস্যসহ তারা আছেন ২৭ জন। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জনসহ ২০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আছেন। ১০ জন আছেন পেশাজীবী-ফার্মাসিস্ট, চিকিৎসক। অবৈধভাবে অবস্থানরত ২৮ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল। তারাও এখন সেখানে অবস্থান করছেন। ফেরত আসতে পারেননি। এরা সবাই ইরানের রাজধানী তেহরানে আছেন। আর ছয়শ'র মতো বাংলাদেশি আছেন যারা ওখানে ৩০-৪০ বছর ধরে অবস্থান করছেন। তারা বিয়ে-শাদী করে সেখানেই আছেন। তারা ইরানের নানা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। আরো ৮০০ বাংলাদেশি আছেন, যারা গত ১০ বছর ধরে ইরানের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে আছেন। বিভিন্ন ফ্যাক্টরিসহ নানা জায়গায় কাজ করছেন। আর বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারের একটি রুট হলো ইরান। ওখান থেকে তুরস্ক হয়ে ইউরোপের দেশে পাচার করা হয়। পাচারের উদ্দেশ্যে একই সময়ে কমপক্ষে ৩০০-৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করে। এই হিসাবে সব মিলিয়ে দুই হাজারের কিছু বেশি বাংলাদেশি সেখানে আছেন। তবে বেসরকারি হিসাব বলছে, সব মিলিয়ে ১৪ হাজারের মতো বাংলাদেশি ইরানে রয়েছেন।
তেহরানে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে বলেনন," ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। যারা দেশে ফেরত যেতে চাইবেন তাদের আমরা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ফেরত পাঠাবো। সেই চেষ্টা আমরা করছি। তবে এখনো আমরা সেই পথ তৈরি করতে পারিনি। এটা তো এখন আর আকাশ পথে সম্ভব নয়।আমরা সড়ক পথে এখান থেকে তৃতীয় কোনো দেশে সরিয়ে নেয়ার চিন্তা করছি। ইরান সরকার আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে।”