বিশ্বজুড়ে সামরিক ব্যয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড
২৪ এপ্রিল ২০২৩এই ব্যয়ের তালিকায় এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ইউরোপেও সামরিক ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ, যা গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ৷
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় গোটা বিশ্ব যখন টালমাটাল অবস্থায়, তখনও সামরিক ব্যয়ের রেকর্ডের পেছনে দায়ী করা হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে৷ এছাড়াও বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি, চীনকে ছাড়িয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকেও অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷
সোমবার বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় নিয়ে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)।
গবেষকরা বলছেন, ২০২২ সালে সামরিক ব্যয় আগের বছরের চেয়ে অন্তত তিন দশমিক সাত ভাগ বেশি৷ ইনস্টিটিউটটির জ্যেষ্ঠ গবেষক নান তিয়ান ডিডব্লিউকে বলেন, ‘‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রত্যাশার চেয়ে ভাল বা মন্দ, যা-ই ছিল, সামরিক বাহিনী ব্যয় আগের বছরের তুলনায় শুধু বেশিই নয়, অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷''
গবেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের সামরিক বাজেটের আকার বড় করার প্রতি নতুন করে মনোযোগী করে তুলেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে রাশিয়া প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে দেশগুলো একের পর এক সামরিক ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যয়
২০১৪ সাল থেকে শুরু হয় ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর প্রক্রিয়া৷ আর তখন থেকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা৷ বলা হয়, নিয়ম ভেঙে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে দেশটির পূর্ব অংশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দেয় রাশিয়া৷
২০২৪ সালের আগেই ন্যাটোভুক্ত কয়েকটি দেশ জিডিপির দুই ভাগ প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্য পূরণ করতে সম্মত হয়েছে। অনেকে সেই লক্ষ্য অর্জনের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে৷ ধারণা করা হয়েছিল, রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় এ অর্থ ব্যয় করা হতে পারে৷ কিন্তু আদতে তার প্রয়োজন হয়নি৷ কারণ, রাশিয়ার মতো পরাশক্তিকে ইউক্রেন ভালোভাবেই প্রতিহত করেছে।
আধুনিক প্রযুক্তির সামরিক কিট ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নেও সামরকি ব্যয় বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
এসআইপিআরআই-এর গবেষক নান তিয়ান আরো বলেন, রাশিয়া হয়তো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যর্থ, সাইবার স্পেসের জন্য তারা এখনও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হতে পারে৷ কারণ, ডিজিটাল অবকাঠামো আক্রমণে খরচ কম, কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি৷
সামরিক ব্যয়ে পরাশক্তিদের অবস্থান
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বে সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশ। দেশটি ২০২২ সালে ব্যয় শূন্য দশমিক সাত ভাগ বাড়িয়ে করেছে ৮৭৭ বিলিয়ন ডলার। যা ওই বছরের বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৯ শতাংশ৷ অন্যদিকে, ২০২২ সালে রাশিয়া তাদের সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে নয় দশমিক দুই ভাগ৷ যা অংকে ৮৬ দশমিক চার বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীন ব্যয় করেছে ২৯২ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের মোট সামরিক খরচের ১৩ শতাংশ। জাপান ২০২২ সালে ব্যয় করেছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, ইটালির মতো ইউরোপীয় দেশগুলোও গত দশকে সামরিকে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। অত্যাধুনিক ও দামি অস্ত্র কিনতে ফিনল্যান্ডেও গত বছর ব্যয় বাড়িয়েছে। গেল বছর ৬৪টি মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ফিনল্যান্ড৷
ইউরোপে সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি খরচ করা দেশ যুক্তরাজ্য। তালিকায় এর অবস্থান ষষ্ঠ। বৈশ্বিক সামরিক খাতে দেশটির খরচ তিন দশমিক এক শতাংশ।যুক্তরাজ্যের পরে জার্মানির অবস্থান। বৈশ্বিক সামরিক খাতে মোট ব্যয়ের আড়াই শতাংশ জার্মানির, আর দুই দশমিক চার শতাংশ ফ্রান্সের।
তিয়ান বলেন, ফ্রান্স ও জার্মানির তুলনায় ইউক্রেনকে বেশি সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। অনুদান দেয়ার ক্ষেত্রেও শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম৷ এর পরেই আছে যুক্তরাজ্য।
জেকে/উইলিয়াম নোয়া গ্লুক্রাফট