বিশ্বজুড়ে ব্যবসার আরেক নাম ‘কার্নিভাল’
জার্মানি থেকে রিও ডি জেনেইরো- সর্বত্রই ‘কার্নিভাল’ বা ‘কার্নেভাল’ মানে ভিড়৷ ভিড় মানেই ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সুবর্ণ সুযোগ৷ একটি স্থানীয় ঐতিহ্য থেকে কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হওয়া এই উৎসবের গুরুত্বের কথা জানুন ছবিঘরে...
ব্রাজিলের কার্নিভাল যেমন
‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বলা হয় ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোর কার্নিভালকে৷ এমনই মহিমা পাঁচদিনের এই উৎসবের যে, এতে যোগ দিতে গোটা বিশ্ব থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন সেখানে৷ কার্নিভাল শুক্রবার শুরু হয়ে শেষ হবে আগামী সপ্তাহের বুধবার৷ হাজার হাজার নৃত্যশিল্পী নানা সাজে সাম্বাড্রোমের মধ্য দিয়ে নেচে নেচে প্যারেডে অংশ নেবেন৷ সবচেয়ে দর্শনীয় রাস্তায় ‘ব্লোকোস’, অর্থাৎ রাস্তাজুড়েই চলবে নাচ, গান, উদযাপন৷
কার্নিভালের অর্থনীতি ব্রাজিলে
প্রতি বছর ব্রাজিলের কার্নিভালে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ আসেন৷ ফলে, স্থানীয় ব্যবসাগুলির জন্য এটা একটা বড় সুযোগ৷ রাস্তার চারপাশে সেই সময় গজিয়ে ওঠে নানারকমের স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান৷ ২০২৪ সালে কার্নিভাল থেকেই শহর কর্তৃপক্ষের প্রায় ৮৪০ মিলিয়ন ইউরোর সমান টাকা আয় হয়৷ এ বছর দেশের অর্থনীতিতে প্রায় দুই বিলিয়ন ইউরোর সমান অর্থ যোগ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
পিছিয়ে নেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও
যুক্তরাষ্ট্রে কার্নিভালের রাজধানী বলা হয় নিউ অর্লিন্স শহরকে৷ দুই সপ্তাহ ধরে সেখানে উদযাপিত হয় ‘মার্ডি গ্রা’, যা কার্নিভালের স্থানীয় ডাকনাম৷ রঙবেরঙের পুঁতির মালা ও ব্রাস সংগীত সেই কার্নিভালের অন্যতম আকর্ষণ৷ ২০২৪ সালের একটি গবেষণা বলছে, মার্ডি গ্রা এই শহরকে ২০২৩ সালে ৮৯১ মিলিয়ন ডলার এনে দেয়৷ শুধু তাই নয়, কার্নিভাল মিল্পের সাথে জড়িত বহু মানুষের সংসার চলে এই উৎসবের ওপর ভর করে৷
জার্মানির কার্নিভাল যেমন
জার্মানির সাংস্কৃতিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, কার্নিভাল শুরু হয় ১১ নভেম্বর ঠিক সকাল ১১টা বেজে ১১ মিনিটে৷ আর শেষ হয় অ্যাশ ওয়েডনেসডে বা সাধারণত ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসের একটি বুধবারে৷ এই কার্নিভালের মূল উৎস কোলোন বা ড্যুসেলডর্ফ শহর ও এর আশেপাশের অঞ্চলে৷ রাস্তাজুড়ে প্যারেড তো থাকেই, সাথে থাকে নানা ধরনের নাচগানের পারফর্ম্যান্সও৷৷
জার্মান অর্থনীতিতে কার্নিভালের গুরুত্ব
একটি গবেষণায় কোলোনের ইন্সটিটিউট অফ ইকোনমিক রিসার্চ জানায় যে, ২০২৪-২০২৫ সালের কার্নিভাল থেকে জার্মান অর্থনীতিতে আসবে দুই বিলিয়ন ইউরোরও বেশি অর্থ৷ রেস্টুরেন্ট ও বারগুলি একাই কামাবে প্রায় ৯২৫ মিলিয়ন ইউরো৷ বাকি টাকা আসবে পোশাক ও সাজসজ্জার সামগ্রী (৪৪৯ মিলিয়ন ইউরো) ও পরিবহন (৩২২ মিলিয়ন ইউরো) খাত থেকে৷
শুধুই কি অর্থনৈতিক প্রতীক?
কোলোনের মেয়র হেনরিয়েটে রেকারের মতে, কার্নিভালই কোলোনকে গোটা বিশ্বে পরিচিত করেছে৷ তার মতে, স্থানীয়দের কাছে এটা শুধু বড় ইভেন্ট নয়৷ একই সাথে এই কার্নিভাল সমাজকে বেঁধে রাখার কাজ করে, বিভিন্ন মানুষকে একত্রিত করে ও একটি গণতান্ত্রিক বার্তা দেয়৷ কার্নিভালকে জার্মানরা ভালোবেসে বলেন ‘জার্মানির পঞ্চম মৌসুম’, এবং এর মূলে আছে বৈচিত্র্য ও ইতিবাচকতা, যা আজকের দিনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, জানান কোলোনের মাইকেল হ্যুঠার৷
টোবিয়াস কয়ফার/এসএস