বিধানসভায় এবার স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস শুভেন্দুর বিরুদ্ধে
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সংবাদমাধ্যমে মিথ্যাচার করেছেন এবং বিধানসভায় উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী, এই মর্মে মঙ্গলবার তার নামে বিধানসভায় স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস আনেন তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টপাধ্যায়। বিষয়টি এখন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে।
ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য সোমবার। ওই দিন বিধানসভায় সরস্বতী পুজো সংক্রান্ত একটি ঘটনা নিয়ে প্রস্তাব পাঠ করেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। ওই প্রস্তাবের উপর আলোচনা চায় বিজেপি। কিন্তু প্রস্তাব পাঠ করার অনুমতি দিলেও স্পিকার আলোচনার অনুমতি দেননি। যা নিয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়কেরা। বিরোধী দলনেতা ওয়েলে নেমে বিধানসভার কাগজ ছিঁড়ে উঁড়িয়ে দেন। এরপর তারা ওয়াকআউট করেন।
এই ঘটনার পর শুভেন্দু-সহ তিন বিধায়ককে সাসপেন্ড করার প্রস্তাব আনা হয়। ভোটাভুটির মাধ্যমে তাদের ৩০ দিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। শুভেন্দু ছাড়া সাসপেন্ড হন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, বঙ্কিম ঘোষ এবং বিশ্বনাথ কারক। বস্তুত, এই নিয়ে গত সাড়ে তিন বছরে চারবার সাসপেন্ড হলেন শুভেন্দু।
উল্লেখ্য যোগেশচন্দ্র আইন কলেজে এবার সরস্বতী পুজো উদযাপন নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। ওই বিষয়টি নিয়েই বিধানসভায় আলোচনা চায় বিজেপি। তৃণমূলের অভিযোগ, বিধানসভায় উসকানিমূলক কথা বলার চেষ্টা করছিলেন শুভেন্দু এবং তার বিধায়কেরা।
বিজেপি অবশ্য বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ চলাকালীন বিধানসভার সিঁড়িতে বসে পাল্টা বক্তৃতা করার কথা জানায় বিজেপি। সেই মতো এদিন বিধানসভার সিঁড়িতে অবস্থান বিক্ষোভও শুরু করে বিজেপি। যা নিয়ে এদিন সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল বিধানসভার পরিবেশ। পরিস্থিতি একসময় এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের অভিযোগ আনেন।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় এমন পরিস্থিতি নতুন নয়। গত কয়েক বছরে যতবার অধিবশন বসেছে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। একাধিকবার বিরোধী বিধায়কদের সাসপেন্ড করা হয়েছে।
বস্তুত, একই ঘটনা ঘটেছে দেশের পার্লামেন্টেও। রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে রেকর্ড সংখ্যক এমপি-কে সাসপেন্ড করার নজির গড়েছে পার্লামেন্ট। বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই বক্তব্য, বিরোধীদের সাসপেন্ড করা ইদানীং শাসকের একটি রাজনৈতিক প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অসমীয়া প্রতিদিনের দিল্লি ব্যুরোর প্রধান আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''কেন্দ্রে বিজেপি যা করছে, রাজ্য তৃণমূল সেই একই পথে হাঁটছে। এই ঘটনা তারই উদাহরণ।'' তবে একইসঙ্গে আশিস মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যেভাবে ধর্মীয় উসকানিমূলক রাজনীতির আবহাওয়া তৈরি করছে, তার রাজনৈতিক মোকাবিলা প্রয়োজন। যদিও তৃণমূল যেভাবে তার মোকাবিলা করছে, আশিস তা সমর্থন করেন না।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা অবশ্য অতীত মনে করিয়ে দিয়েছেন। শরদের বক্তব্য, ''ভুলে গেলে চলবে না এই বিধানসভাতেই ভাঙচুর চালিয়েছিলেন মমতার নেতৃত্বে তৃণমূলের নেতারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পার্লামেন্টে ওয়েলে নেমে কাগজ ছিঁড়েছিলেন। আজ যে কারণে শুভেন্দুকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে, একসময় ঠিক সেই কাজগুলিই করেছিলেন মমতা। একেই বলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।''
অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অভ্র ঘোষ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সর্বত্রই ভারতীয় রাজনীতির দৈন্যদশা প্রকট হচ্ছে। কেন্দ্রেও, রাজ্যেও। এই ঘটনাগুলি তারই উদাহরণ। রাজনীতিবিদদের এই আচরণের জন্য বিধানসভায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে ঠিকমতো আলোচনা হয় না। জনগণের কথা সর্বদাই থেকে যায় পিছনের সারিতে। গণতন্ত্রের জন্য যা মোটেই সুখের নয়।''
এসজি/জিএইচ (বিধানসভার কার্যবিবরণী)