বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারাদের অবস্থান অব্যাহত
বিকাশ ভবনের সামনে সেন্ট্রাল পার্ক মেট্রোর নীচে এখনও চলছে চাকরিহারাদের অনড় অবস্থান।
অবস্থানের পঞ্চমদিন
বিকাশ ভবনের সামনে চাকরি হারানো শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের অবস্থান বিক্ষোভ পঞ্চম দিনে প্রবেশ করেছে। আন্দোলন শুধু কলকাতাতেই সীমাবদ্ধ নেই, কলকাতার বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা মিছিল করছেন।
"দূষিত ও ত্রুটিপূর্ণ"
২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়াকে "দূষিত ও ত্রুটিপূর্ণ" বলে ঘোষণা করে, যার ফলে প্রায় ২৫,৭০০ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়। এই রায়ের পর, অনেক শিক্ষক, যারা নিজেদের "নিষ্কলঙ্ক" বলে দাবি করেন, তারা চাকরি হারিয়ে পথে বসেন এবং আন্দোলনে নামেন।
তালিকা প্রকাশে ব্যর্থ এসএসসি
চাকরি হারানো শিক্ষকরা এসএসসি অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন এবং পর্যায়ক্রমে রিলে অনশন শুরু করেন। সময় পেরিয়ে যায়, এসএসসি "নিষ্কলঙ্ক" ও "দূষিত" প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশে ব্যর্থ হয়, যা আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
সংঘর্ষের দিন
গত ১৫ মে, বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়, যেখানে প্রায় ৩০ জন শিক্ষক ও ১৯ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানিয়ে বলেন, "যদি জেলে যেতে হয়, তাও যাবো, কিন্তু তোমাদের পাশে থাকবো।" চাকরিহারাদের দাবি মুখ্যমন্ত্রী একবার সশরীরে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলুক।
রাজনৈতিক রং চাইছেন না
শিক্ষকরা আন্দোলনে অনড়, তবে এই আন্দোলনে তারা কোনও রাজনৈতিক রং চাইছেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। “আন্দোলনের লাগাম আমাদের হাতেই থাকবে। প্রয়োজনে নবান্ন অভিযানও করব আমরা।”
রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘হোমটাস্ক’
রবিবার বিকাশ ভবনের সামনে থেকে হুঁশিয়ারি দিলেন বিক্ষোভকারী চাকরিহারা শিক্ষকেরা। শাসকদল তৃণমূল ও বিরোধীদল বিজেপিকে ‘হোমটাস্ক’ আন্দোলনকারীদের। “আমাদের ওপর অবিচারের কথা সংসদে বলুন। রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে দিন আমাদের কথা।”
পড়ুয়ারা পা মেলালো
শনিবার আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিতে অবস্থান মঞ্চে গিয়েছিল বেশ কিছু স্কুলপড়ুয়া। আন্দোলনকারীদের সমর্থনে তাঁদের ছাত্রছাত্রীরা বিকাশ ভবনের সামনে এসে সংহতি প্রকাশ করেছেন। পড়ুয়ারা শিক্ষকদের পদযাত্রাতেও পা মিলিয়েছে। তাঁরা পুলিশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ফুল ও চকোলেট দিয়ে পুলিশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন।
ঝাড়ু হাতে তুলে নিলেন শিক্ষকরা
জমায়েতের ফলে নোংরা হচ্ছে আন্দোলনস্থল। রবিবার তাই ঝাড়ু ধরলেন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা। নিজেরাই ঝাড়ু দিয়ে বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তা সাফাই করলেন।
‘প্রতীকী শ্রেণিকক্ষ’
মুর্শিদাবাদ থেকে এসেছেন অর্পিতা সর্দার। ছেলেকে নিয়েই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। ক্লাস-টুতে পড়ে। বিক্ষোভস্থলেই চলছে পড়াশোনা। রবিবার এই অবস্থানে যোগ দেন দৃষ্টিহীন চাকরিহারা শিক্ষকেরা। বিকেল ৩টে থেকে শুরু হয় তাদের কর্মসূচি। বিক্ষোভস্থলে ওই যোগ্য দৃষ্টিহীন শিক্ষকেরা শোনান নিজেদের জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার অভিজ্ঞতা। আন্দোলনস্থলে বসে আশপাশের পথশিশুদের পড়াশোনা করান। খোলা আকাশের নীচেই বসে ‘প্রতীকী শ্রেণিকক্ষ’।
পুরমন্ত্রীর বক্তব্য
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু কেন চুপ করে আছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন আন্দোলনকারীরা। যদিও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারাদের অবস্থানকে ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, ‘‘নেতাজি ইন্ডোরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, যা ব্যবস্থা করার করবেন। সেই বিশ্বাসটা রাখলেই হয়ে যেত। এত গোলমালের দরকার ছিল না।
'আন্দোলনকারীরা ক্যামলুক-এ দক্ষ হয়ে গিয়েছে’
ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্যকে সমর্থন করে আরও একধাপ এগিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “যদি শুধুমাত্র অশান্তি তৈরি করার জন্য রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে একটা আন্দোলনকে ব্যবহার করা হয় তাহলে তো ফিরহাদ ঠিকই বলেছেন। আন্দোলনকারীরা ক্যামলুক-এ দক্ষ হয়ে গিয়েছে। ক্যামেরার লেন্স দেখেই সেখানে শুয়ে পড়ছে।”
কোথায় শেষ?
এই আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের দাবিকে সামনে নিয়ে এসেছে। চাকরি হারানো শিক্ষকরা তাদের অধিকার ফিরে পেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সমাজমাধ্যমেও আছড়ে পড়েছে প্রতিবাদের ঢেউ। কিছুদিন আগেই কলকাতা শহর আরজিকর আন্দোলন দেখেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আন্দোলন নিভে যেতেও দেখেছে। এই পরিস্থিতিতে চাকরিহারাদের এই আন্দোলন কতটা সমাধান এনে দিতে পারে তা সময়ই বলবে।