বাল্যবিবাহ: দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি বাংলাদেশে
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি৷ বর্তমান হারে কমলে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বন্ধে ২৫০ বছর লাগবে৷ আরো অনেক তথ্য, পরিসংখ্যান জেনে নিন এই ছবিঘরে...
৩ কোটি ৮০ লাখ
জাতিসংঘের ২০২২ সাল পর্যন্ত হিসাবে বাংলাদেশের মেয়েদের অর্ধেকের বেশি বা প্রায় ৫১ শতাংশেরই ১৮ বছরে পৌঁছার আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে, যার সংখ্যা তিন কোটি ৮০ লাখ৷ ১৫ বছরের আগে বিয়ে হয়েছে ১৬ শতাংশ মেয়ের৷ ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নীচে বিয়ের হার চার শতাংশ৷ এই হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ এবং বাল্যবিবাহে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ৭ম৷
সবচেয়ে বেশি রাজশাহী বিভাগ
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বেশি হয় গ্রামাঞ্চলে৷ শহরে যেখানে ৪৪ শতাংশের বিয়ে ১৮ বছরের আগে হয়, গ্রামে সেখানে এই হার ৫৩.৮ শতাংশ৷ আঞ্চলিকভাবে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি রাজশাহীতে৷ এই বিভাগে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সি মেয়েদের ৬৬ দশমিক সাত শতাংশই ১৮ বছরের আগে বিবাহিত৷ এরপর রয়েছে খুলনা (৬১.৮%), রংপুর (৫৭.৯%), বরিশাল (৫৫.৬%), ময়মনসিংহ (৫২.২%), ঢাকা (৪৮.৬%), চট্টগ্রাম (৪৪.১%) এবং সিলেট (৩১%)৷
বাল্যবিবাহ কমালে বাড়বে আয়
২০১৭ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংক, আইসিআরডাব্লিউ-র ‘দ্য ইকোনমিক ইম্প্যাক্টস অব চাইল্ড ম্যারেজ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বন্ধ হলে মেয়েদের আয় ও উৎপাদনশীলতা ১১.৮৫ শতাংশ বাড়বে৷ ২০১৫ সালের হিসাবে যার পরিমাণ বছরে ৪৭৭ কোটি ডলার৷
বাল্যবিবাহের কারণ
বাল্যবিবাহ বন্ধের বৈশ্বিক উদ্যোগ ‘গার্লস নট ব্রাইডস’ এর তথ্য অনুযায়ী, ১৮ বছরের আগে বিয়ে হওয়া বাংলাদেশে ৬৪ শতাংশ মেয়ে নিম্ন আয়ের পরিবারভুক্ত৷ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এমন মেয়েদের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের হার ৬৯ শতাংশ৷ বাল্যবিবাহের আরো কারণের মধ্যে রয়েছে মেয়েদের বিষয়ে সমাজের বদ্ধমূল ধারণা, নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি৷
আইনে যা আছে
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ অনুযায়ী, পুরুষের ক্ষেত্রে ২১ বছরের নীচে এবং নারীর ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নীচে বিয়েকে বাল্যবিবাহ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে৷ তবে আইনের একটি ধারায় বলা আছে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে’ বিয়ে হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না৷ এই ধারাটির অপব্যাবহারের আশঙ্কা করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা৷
লাগবে ২১৫ বছর!
২০১৪ সালে লন্ডন গার্ল সামিটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সিদের বিবাহ বন্ধ ও ২০৪১ সালের মধ্যে ১৮ বছরের নীচে বিয়ে বন্ধের লক্ষ্য ঘোষণা করেন৷ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ৷ তবে ইউএনএফপিএ বলছে, বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর দুই শতাংশ হারে বাল্যবিবাহ কমছে৷ এই গতিতে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে ২১৫ বছর লাগবে৷
দক্ষিণ এশিয়ায় বাল্যবিবাহ
দক্ষিণ এশিয়ায় ২৯ কোটি মেয়ে ও নারী বাল্যবিবাহের শিকার, যা বিশ্বের মধ্যে ৪৫ শতাংশ৷ শুধু ভারতেই বাল্যবিবাহের শিকার মেয়ে ও নারীর সংখ্যা ২০ কোটির উপরে৷ দেশটির ২৩ শতাংশ মেয়েদের বিয়ে হয় ১৮ বছরের নীচে৷ নেপালে এই হার ৩৫ শতাংশ, আফগানিস্তানে ২৯ শতাংশ, ভুটানে ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৮ শতাংশ৷ সবচেয়ে কম শ্রীলঙ্কায় (১০%)৷
বৈশ্বিক চিত্র
ইউনিসেফ বলছে, প্রতি তিন সেকেন্ডে বিশ্বের কোথাও না কোথাও একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে হয়৷ বৈশ্বিকভাবে প্রতি পাঁচজন মেয়ের একজনের ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হচ্ছে৷ বর্তমানে বিশ্বে ৬৪ কোটি মেয়ে ও নারীর বিয়ে হয়েছে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে৷ প্রতিবছর ১২ কোটি মেয়ে ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হচ্ছে৷