বন্দে ভারত এক্সপ্রেস : দিল্লি ও কাশ্মীরের দূরত্ব ঘুচাতে প্রথম ট্রেন
পরীক্ষামূলক যাত্রার পর অবশেষে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে দিল্লির সাথে কাশ্মীরের সংযোগ স্থাপনকারী একটি ট্রেন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
প্রথমবারের মতো এই রেল সংযোগ
গত সপ্তাহান্তে শেষ হয়েছে কাটরা ও শ্রীনগরের মধ্যের রেললাইনের পরীক্ষা৷ আগামী মাসে এই পথেই একটি নতুন ট্রেনের উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ নতুন দিল্লি থেকে শ্রীনগরকে সংযুক্ত করা এই ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবে, মাত্র ১৩ ঘন্টায়৷ উধামপুর-শ্রীনগর-বারামুলা অংশের রেললাইনের ২৭০ কিলোমিটারের পথ তৈরিতেই লেগে যায় তিন দশক৷
যা বললেন নরেন্দ্র মোদী
চলতি মাসের শুরুতে নরেন্দ্র মোদী ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভারতীয় রেলের জম্মু ডিভিশনের উদ্বোধন করেন, যেটি দিল্লি-শ্রীনগর লাইনের দায়িত্বপ্রাপ্ত৷ এই নতুন সংযোগকে তিনি ‘নতুন যুগের সংযোগের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ বলেন৷ মোদী আরো বলেন, ‘‘ভারতীয় রেলকে কার্যক্ষমতা, গতি ও যাত্রীদের অনুভবের মাপকাঠিতে বিশ্বমানের করে তুলতে জম্মু ও কাশ্মীরের রেল নেটওয়ার্ককে দেশের রেল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত কার দরকার৷’’
প্রযুক্তির উৎকর্ষ
পরীক্ষামূলক যাত্রার সময় বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটির ছিল ২২টি বগি, যার মধ্যে ১৮টি শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত, দুটি মালের বগি ও দুটি ইঞ্জিন৷ ৯৪৩টি সেতুর ওপর দিয়ে যায় এই ট্রেন, যার মধ্যে আছে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল ব্রিজ, চেনাব সেতুও৷ কর্তৃপক্ষের মতে, বিশ্বের সেরা রেল প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে এখানে৷ হিমালয়ের দুর্গম এলাকায়, চরম আবহাওয়া সইতে পারা এই ট্রেন প্রকৌশলের দুনিয়ায় নজির গড়বে, বলে তাদের ধারণা৷
কাশ্মীরের অর্থনীতিতে এর প্রভাব
প্লেনের টিকিটের চেয়ে সস্তা এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের টিকিট, যা স্থানীয় পর্যটন অর্থনীতিতে জোয়ার আনবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা৷ সাথে দ্রুতগতির রেল সংযোগ চালু হওয়ায় নানা ধরনের জরুরি পণ্য আরো তাড়াতাড়ি এসে পৌঁছাবে এখানকার মানুষদের হাতে৷ সাথে, কাশ্মীরের নিজস্ব অভিনব পণ্য, যেমন কাঠবাদাম, আপেল, জাফরান ইত্যাদিও দ্রুত দেশের অন্যান্য অংশে পাঠানো যাবে৷
তবুও থাকছে প্রশ্ন...
কারো কারো মতে, এতে করে দিল্লি নজরদারি বাড়াবে এই অঞ্চলে৷ শ্রীনগরের ব্যবসায়ী মুখতার আহমেদ বলেন, ‘‘২০১৯ সালে কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তানের পর থেকেই আমরা সন্দিহান৷ এটা সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রান্তীকরণের ভীতি সৃষ্টি করেছে৷ আমাদের দেখতে হবে যে, এই প্রকল্প আগামী মাসগুলিতে কেমন প্রভাব ফেলে৷’’
নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
সমালোচকদের মতে, রেল পরিকাঠামোর বিস্তার মানে এই অঞ্চলে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ, যার ফলে বাড়তে পারে সামরিক কার্যকলাপ, বদলাতে পারে স্থানীয় ডেমোগ্রাফিক চরিত্র৷ বিরোধী দল পিডিপি এই প্রকল্পকে ‘লোকদেখানো’ মনে করছে৷ এক পিডিপি নেতা বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের মর্যাদা দেয়নি কেন্দ্র, কিন্তু পরিকাঠামোর এত বাড়াবাড়ি কেন তাহলে? আমরা সন্দেহের চোখে দেখছি৷ এটা সংবেদনশীল অঞ্চলে কার্যক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া কিছুই না৷’’