ফ্রান্সের এক দ্বীপে ’সাদা সোনা’
৬ আগস্ট ২০২৫ফরাসি আটলান্টিক দ্বীপ ন্যোয়ারমুটিয়েতে কয়েক শতক ধরে সামুদ্রিক লবণ চাষ করা হচ্ছে৷ এটি ভালো মানের খাবারের এক অপরিহার্য উপাদান৷ বলা চলে, জল, বায়ু আর সূর্যের খেলায় ন্যোয়ারমুটিয়ের ‘সাদা সোনা' খ্যাত লবণ উৎপাদন হয়৷
জানা গিয়েছে, ফরাসি আটলান্টিক উপকূলের ন্যোয়ারমুটিয়ের আকার ৫০ বর্গকিলোমিটারের মতো৷ দ্বীপটির সম্পদ হচ্ছে সামুদ্রিক লবণ৷ সেই মধ্যযুগ থেকে একই পন্থায় এই লবণ উৎপাদন করা হয়৷
লবণের খামারে কাজ শুরু হয় বসন্তের শুরুতে
বসন্তের শুরুতে আরনু জ্যিগা লবণের খামারে কাজ শুরু করেন৷ তিনি এই দ্বীপে লবণ উৎপাদনকারী ১৫০ ব্যক্তির একজন৷ আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করলে উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করেন তারা৷ তিনি জানালেন, ‘‘বসন্ত শুরু হলে আমরা প্রবাহের দিকে একটার পর একটা বেসিন পরিষ্কার করি৷ জমে থাকা ময়লা, কাদা সরাই এবং কিছুটা ফুটপাতের জন্য রেখে দিই৷''
মাটির তৈরি ২৬টি বেসিনে লবণ চাষ করবেন তিনি৷এজন্য ১২ হাজার বর্গমিটার এলাকা পরিষ্কার করতে হবে৷ এই প্রসঙ্গেই আরনু জানালেন, ‘‘এই কাজ করতে প্রায় পুরো বসন্ত লেগে যায়৷ আবহাওয়া আমাদের কাজের গতি নির্ধারণ করে৷ আমরা একদিন কাজ করতে পারি, অন্যদিন বৃষ্টির কারণে বন্ধ থাকে কাজ৷ আমরা পুরোপুরি আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল৷''
রয়েছে সামুদ্রিক অ্যাসপারগাসও
আরনু এবং তার স্ত্রী উ্যদরেই মোটা লবণ ও দামি ‘ফ্ল্যর দ্যুঁ সেলে' বিক্রি করেন৷ উ্যদরে বিভিন্ন স্বাদের লবণও তৈরি করেছেন৷ উ্যদরে এই প্রসঙ্গে জানালেন, ‘‘মোটা লবণ ব্যবহার করে ঝোলের জন্য মসলা লবণ এবং ঝাঁজালো লবণ তৈরি করা যায়৷ তাছাড়া ‘ফ্ল্যর দ্যুঁ সেল' মিশিয়ে নানা স্বাদের লবণ তৈরি করে বিক্রি করা হয়৷''
তবে এখানকার লবণ খামারে শুধু লবণই উৎপাদন হয় না৷ বসন্তের সময় খাওয়ার উপযোগী সামুদ্রিক অ্যাসপারাগাসও বেড়ে ওঠে৷ জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলে উ্যদরে এসব সংগ্রহ করে বিক্রি করেন৷ তার দাবি, ‘‘এটা কাঁচা বা সবুজ মটরশুটির মতো ভেজে খাওয়া যায়৷ আমরা অধিকাংশ সময় এটিকে ভিনেগার বা ভেষজযুক্ত আচার হিসেবে বিক্রি করি৷ এটা বেশ জনপ্রিয় এবং মৌসুমের শেষ নাগাদ বিক্রি হয়ে যায়৷''
জুনের শুরুতে চাষাবাদ
আরনু এবং উ্যদরের খামারে আসা পানি বিভিন্ন খাল হয়ে আটলান্টিক থেকে আসে৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই মিটার নিচে এই প্যানগুলোর অবস্থান৷ আটলান্টিক থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার ভেতরে পানি পৌঁছাতে হয়৷ কতটা পানি আসবে তা স্লুইস গেট দিয়ে নির্ধারণ করা হয়৷
জুনের শুরুতে তাপমাত্রা উষ্ণ হলে আরনু চাষাবাদ শুরু করতে পারেন৷ তিনি জানালেন, ‘‘লবণ চাষ শুরু করতে গেলে কোণাগুলো পরিষ্কার করতে হবে৷ হাতলওয়ালা এই যন্ত্রের বাঁকানো অংশ দিয়ে পানি ঠেলে দেয়া যায় এবং লবণ ক্রমশ বেসিনগুলোর মাঝের বাঁধে জমা হয়৷''
বাঁধে জমা করার পর সারারাত লবণের জল ঝরানো হয়৷ এরপর তা বড় লবণের স্তূপে যুক্ত করা হয় অন্তত একবছর শুকানোর জন্য৷ ন্যোয়ারমুটিয়েতে সূর্য, তাপ আর বাতাসের চমৎকার সংমিশ্রণে সাদা সোনা উৎপাদন করা হয়৷ বছরের ৩০ থেকে ৪০ দিন ফসল তোলার মৌসুম৷ আরনু এবং উ্যদরের জন্য এই সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ আরনুর কথায়, ‘‘ফসল তোলার মৌসুমটা আমরা যতটা সম্ভব কাজে লাগাতে চাই৷ কারণ বাকি বছর এটা দিয়েই কাটাই৷''
ন্যোয়ারমুটিয়ের ভালোমানের লবণ৷ গত শতকের নব্বইয়ের দশকে এখানে ৩০টির মতো খামার ছিল৷ এখন তা ক্রমশ বাড়ছে৷
স্টিফানি নিকোল/আরাফাতুল ইসলাম