ফ্রাঙ্কফুর্ট শহর বাস্তবে দেখতে কেমন?
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫মাইন নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় এবং উঁচু ভবন ও দারুণ স্কাইলাইনের জন্য জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টকে অনেকে ‘মাইন-হাটান' বলে থাকেন৷ নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের সঙ্গে মিলে এই নামকরণ করেন তারা৷
ফ্রাঙ্কফুর্টে বেশকিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় আছে৷ আছে জার্মানির সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দরও৷ তবুও শহরে মনোরম পরিবেশ খুঁজে পাওয়া যায়৷
ফ্রাঙ্কফুর্টে গেলে সেন্ট বাথলেমিউ গথিক ক্যাথেড্রাল দেখতেই হবে৷ এটি পুরাতন শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত৷ সেখানে অনেক সরু গলি আর আংশিক কাঠ দিয়ে তৈরি বাড়ি আছে৷
প্রথম হটস্পটটি ছিল টাউন হল, যাকে ব়্যোমা বলা হয়৷ এটি জার্মানির প্রাচীনতম টাউন হলগুলোর একটি৷ কিন্তু টুর গাইড ভেরেনা ব়্যোজে বলছেন, সেখানে সবকিছু যেমন মনে হয়, আসলে তেমন নয়৷
টুর গাইড ভেরেনা ব়্যোজে জানান, ‘‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রাঙ্কফুর্ট ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছিল৷ বাইরের সম্মুখভাগ, আমি বলব, ৭০ ভাগ রক্ষা পেয়েছিল৷ ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার মনে হবে আপনি ১৯৫০ এর দশকে আছেন৷''
ব়্যোমা হলো একটি স্থাপত্য মিশ্রণ, যা মধ্যযুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শহরের ইতিহাসকে প্রতিফলিত করে৷ সেখানকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হলো ইম্পেরিয়াল হল, যেখানে রোমান সম্রাটদের ৫২টি প্রতিকৃতি রয়েছে৷
ফ্রাঙ্কফুর্টের ঐতিহাসিক কেন্দ্রের আরেকটি অংশ তথাকথিত ‘নিউ ওল্ড টাউন'৷
ব়্যোজে বলেন, ‘‘নিউ ওল্ড টাউন শুনতে অদ্ভুত শোনালেও বিষয়টি তাই৷ এটি একটি অত্যন্ত সাহসি উদ্যোগ ছিল, এবং শেষ পর্যন্ত নগর উন্নয়নের সফল প্রকল্প ছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও এর সবকিছুই ছিল এবং যুদ্ধের পর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ আপনি এখন যে বাড়িগুলো দেখতে পাচ্ছেন তা ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে৷''
আসল হোক বা না হোক, ফ্রাঙ্কফুর্টের ঐতিহাসিক শহরের কেন্দ্রে বর্তমান এবং অতীত খুব ভালোভাবে মিশে গেছে, যা দেখতেও খুব সুন্দর!
দুই নম্বর হটস্পটটি ছিল লোহার ফুটওভারব্রিজ, যার নাম আইজেনার শ্টেগ৷ শহরের আইকনিক ভবনগুলোর সামনে ছবি তোলার জন্য এটি পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় স্থান৷ এই পথচারী সেতুটি ১৮৬৮ সালে নির্মিত হয়েছিল, যা ৫০০ টন রট আয়রন দিয়ে তৈরি৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে এটি ধ্বংস করা হয়েছিল৷ পরে নদী থেকে পৃথক হওয়া অংশগুলো উদ্ধার করে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল৷
ভেরেনা ব়্যোজে জানান, ‘‘এটি শহরের সবচেয়ে রোম্যান্টিক জায়গাগুলির একটি৷ প্রেমকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রেমিক-প্রেমিকারা এখানে আসেন৷ এখানে লাভলক বা প্রেমের তালাও আছে৷ সম্প্রতি একজন সংখ্যাটি গুণেছেন৷ তার হিসেবে এখানে প্রায় ৫৪ হাজার লাভলক আছে৷''
লাভলকের কারণে সেতুতে বাড়তি ওজন জমা হয়৷ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে লাভলকের ভারে ল্যাম্পপোস্ট এবং রেলিং ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে৷ কিন্তু ফ্রাঙ্কফুর্টে এটি কোনো সমস্যা নয়: লোহার ফুটব্রিজে লাভলক লাগানোর অনুমতি এখনও আছে!
ফ্রাঙ্কফুর্টের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবির মোটিফ কী? স্কাইলাইন! শহরের লোরব্যার্গ পাহাড় থেকে এর দুর্দান্ত দৃশ্য দেখা যায়, যা আমাদের তৃতীয় হটস্পট৷ মূল শহর থেকে গাড়িতে সেখানে যেতে ২০ মিনিট লাগে৷ কিন্তু সেখানে কি অবশ্যই যাওয়া উচিত?
অবশ্যই! কারণ, সেখান থেকে পুরো শহরের দারুণ দৃশ্য দেখা যায়৷ ফ্রাঙ্কফুর্টে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন না থাকলেও জার্মানির সবচেয়ে উঁচু ভবন আছে, যার নাম ‘কম্যার্ৎসবাঙ্ক টাওয়ার'- উচ্চতা ২৫৯ মিটার৷
তাহলে সিদ্ধান্ত কী? পুরাতন শহর, লোহার ফুটওভারব্রিজ এবং দারুণ স্কাইলাইন- ফ্রাঙ্কফুর্টে যাওয়ার অনেক কারণ আছে৷
টেওডোরা মাভ্রোপুলোস/জেডএইচ