ফ্যাক্ট চেক: ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজার ভাইরাল ড্রোন ভিডিওটি আসল
২০ জুন ২০২৫২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বে পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত এক হাজার ২০০ জন নিহত হওয়ার পর থেকে, গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী ইসরায়েল ৫৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং গাজার বিশাল অংশ ধ্বংস করেছে।
ইসরায়েল প্রায় সকল বিদেশি সাংবাদিককে গাজা থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের কাছে সংবাদ এবং ছবি পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাজার ভেতর থেকে কাজ করেছেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরাই।
অনেক অনলাইন ভিডিওতে গাজার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখা যায়। তবে অনলাইনে শেয়ার করা ছবিগুলো নিয়েও অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে।
বিষয়বস্তু বিবেচনায় বেশিরভাগই বাস্তব হলেও অনেকক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা ছবি ভাইরাল হয়। এর ফলে মূল বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির সুযোগ থাকে। সম্প্রতি গাজার ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপকতা দেখানো একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে।
এই ভিডিওটি কি আসলেই গাজার?
দাবি: এই নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার সময় ভিডিওটি ৯০ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছিল। এখন Iran Military Commentry নামের এক্স অ্যাকাউন্টটি সাসপেন্ডেড রয়েছে। এখানে গাজার কিছু ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। (আর্কাইভ লিংক এখানে)। এক্স-এর পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল, "ইসরায়েল যখন গণহত্যা চালাচ্ছিল, তখন বিশ্ব নীরব ছিল - এখন তারা আমাদের নীতি সম্পর্কে বক্তৃতা দিচ্ছে? গাজা।"
ভিডিওটিতে ড্রোন দিয়ে তোলা ফুটেজ দেখানো হয়েছে, যেখানে বোমা হামলায় একটি বিশাল এলাকাজুড়ে চলা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখানো হয়েছে।
ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: সঠিক
নিম্ন মান এবং ধূসর রঙের কারণে ভিডিওটির সত্যতা নিয়ে অনেক ব্যবহারকারীই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, মন্তব্যে জিজ্ঞেস করছেন যে এটি আসল কিনা। ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেকে দেখা গেছে, কেউ কেউ দাবি করলেও ভিডিওটি কারসাজি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি নয়। বরং গাজা উপত্যকা এই মুহূর্তে দেখতে এমনই।
ফুটেজটি আসল কিনা তার প্রথম সূত্র হলো, ভিডিওর বাম কোণে ওয়াটারমার্ক হিসেবে আবু সামার লেখা রয়েছে। ডিডাব্লিউ জানতে পেরেছে, আবু সামার এই ভিডিওর মূল চিত্রগ্রাহকের নাম, তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলও খুঁজে পেয়েছে ডয়চে ভেলে। তার পুরো নাম মোহাম্মদ আবু সামার। ৪ এপ্রিল তিনি ইনস্টাগ্রামে ভিডিওটির একটি উচ্চ রেজোল্যুশনের সংস্করণ পোস্ট করেছেন। এতে বিস্তারিত দেখা যাচ্ছে, রঙও বাস্তবসম্মত এবং মানুষের গতিবিধিও স্বাভাবিক।
এছাড়াও, আমরা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে ১৬ এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে এই ফুটেজটি পেয়েছি। এতে বলা হয়েছে যে, এটি গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের চিত্র। সামার বেশ কয়েকবার এপি-তে সংবাদ পাঠিয়েছেন।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে জাবালিয়ায় একাধিকবার বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের দাবি ছিল, শিবিরটা হামাসের কমান্ড সেন্টার ছিল। তবে এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব নয়।
তবে ইসরায়েল যে জাবালিয়ায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, সেটা যাচাই করা সম্ভব। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে গুগল আর্থ-এর সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট ছবিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত শরণার্থী শিবির দেখানো হয়েছে।
এক্স-এ পোস্ট করা ভিডিওটিতে গাজার ধ্বংসযজ্ঞের একটি বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।
মিথ্যা বর্ণনার ফলে বিভ্রান্তি
আমরা এক্স-এ ভিডিওটি পোস্ট করা অ্যাকাউন্টটিকেও গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছি। ইরানি মিলিটারি কমেন্ট্রি নামের এই অ্যাকাউন্টের পাশে একটি নীল টিক চিহ্ন রয়েছে। এর ফলে অনেকে মনে করতে পারেন যে, এটি ইরানের সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট। তবে তা সত্য নয়। নীল টিক চিহ্নটি নির্দেশ করে যে, অ্যাকাউন্টটি এক্স প্রিমিয়াম (পূর্বে টুইটার ব্লু) সাবস্ক্রাইব করেছে। যে কোনো ব্যবহারকারী অর্থ প্রদান করে এবং ন্যূনতম যোগ্যতার শর্ত পূরণ করলেই এখন নীল টিক চিহ্ন পেতে পারেন।
এটি কোনো অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট নয়।
এটিকে ‘কমেন্ট্রি অ্যাকাউন্ট' হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর অর্থ, এই অ্যাকাউন্টে ইরানের সামরিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে মন্তব্য করা হয়। অ্যাকাউন্টের পরিচিতি অংশে বলা হয়েছে: "ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সবশেষ তথ্য।"
অন্যান্য কার্যকলাপেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এটি অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট নয়। অ্যাকাউন্টটি মাত্র এক বছর ধরে অনলাইনে রয়েছে। ইরানের সামরিক বাহিনীর অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট অন্তত কয়েক বছর ধরে অনলাইনে থাকার কথা।
অ্যাকাউন্টটি মিম এবং এআই-জেনারেটেড ছবিও পোস্ট করে। ফলে অনেকের মধ্যেই সামগ্রিকভাবে অ্যাকাউন্টির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
তবে, এই ক্ষেত্রে, অ্যাকাউন্টটি সঠিক ভিডিও শেয়ার করেছে।
কাথরিন ভেসলভস্কি/ এডিকে