ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি শতভাগ নির্ভুল নয়
২ সেপ্টেম্বর ২০২৫বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে থাকেন৷
আজকাল অনেক কাজে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়৷ কিছু গাড়ি আছে যেটি যাত্রীর মুখ স্ক্যান করে তার আসনের অবস্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক করে দিতে পারে৷ আপনি ক্লান্ত বা বিভ্রান্ত হলে আপনাকে সতর্কতা করতে পারে৷ সফটওয়্যার আপনার চোখ, হাত নড়াচড়া- এমনকি আপনি যখন হাই তোলেন সেটিও ট্র্যাক করে!
গ্রাহকদের শনাক্ত করতে ব্যাংকগুলো বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহার করে৷ কিছু এটিএম এখন ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি পরীক্ষা করছে৷ শুনতে নিরাপদ মনে হলেও কিছু স্ক্যামার ইতিমধ্যেই এই সুরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে পেয়েছে৷ শনাক্তকরণের জন্য বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহারের বিষয়টি বিতর্কিত - বিশেষ করে যখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ডেটা ব্যবহার করতে পারে৷
কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা যখন ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তখন আইনের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ শনাক্তকরণে ভুল, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অস্পষ্ট নিয়ম এবং স্বচ্ছতার অভাব- এসবই উদ্বেগের প্রধান বিষয়৷
চীনা সরকার নাগরিকদের বায়োমেট্রিক তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভারে জমা রাখে৷ শিনজিয়াং প্রদেশে এসব তথ্য মূলত মুসলিম উইগুরদের উপর নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হয়৷ নজরদারি ক্যামেরার এক বিশাল নেটওয়ার্ক মানুষের গতিবিধি ট্র্যাক করে৷
ইতিমধ্যে জাতিসংঘ নজরদারি প্রযুক্তির এই ব্যবহারকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে অভিহিত করেছে৷
তুরস্কে পুলিশ কর্মকর্তাদের বডিক্যামে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি আছে৷ এটি দিয়ে তারা রিয়েলটাইমে ব্যক্তি শনাক্ত করতে পারেন৷ পরিচয় যাচাইয়ের কথা বলে প্রযুক্তিটির ব্যবহার শুরু হলেও সমালোচকদের আশঙ্কা, এটি মূলত অধিকারকর্মীদের উপর নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে৷ যদিও তুরস্ক এবং ইইউর আইন বলছে, এই ধরণের ‘সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য' বিশেষ সুরক্ষার বিষয়৷ এর অর্থ হলো, এসব তথ্য সংগ্রহের জন্য পুলিশের একটি আইনি ভিত্তি - অথবা স্পষ্ট সম্মতি - থাকা প্রয়োজন৷ যদিও বিক্ষোভের সময় প্রায়ই তা মানা হয় না৷ এছাড়া এই প্রযুক্তির নির্ভুলতা নিয়েও বিতর্ক আছে৷
অ্যাসোসিয়েশন ফর সিভিল লিবার্টিজের অ্যাডাম রেমপোর্ট বলেন, ‘‘যদি বিক্ষোভে ১০ বা ২০ হাজার মানুষ উপস্থিত হন তাহলে অনেক ছবি তোলা হবে - কিছু লোকের মুখ আংশিকভাবে ঢাকা, এক জায়গায় অনেক মানুষ, অল্প আলো, কিংবা এলোমেলো অ্যাঙ্গেল থেকে ছবিগুলো তোলা হবে৷ সেক্ষেত্রে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে শনাক্তকরণ কাজে সমস্যা হতে পারে৷ তাই এটা খুবই সম্ভব যে ভুলের হার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হবে, এবং যারা বিক্ষোভে ছিলেন না তাদেরও জরিমানা করা হতে পারে৷''
সারা বিশ্বের পুলিশ একই পদ্ধতি অনুসরণ করে: নজরদারি ফুটেজকে তারা ডাটাবেসে থাকা বায়োমেট্রিক ডেটার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে৷
রেমপোর্ট বলেন, ‘‘কোনো তদারকি ছাড়াই পুলিশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুখের ছবি বিশ্লেষণের অনুরোধ করতে পারে৷ তারা ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে, যা সম্ভাব্য পাঁচটি ফল দেখায়৷ এই পাঁচটির মধ্য থেকে পুলিশ একজনকে বেছে নেয়, যাকে তার খোঁজা ব্যক্তির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়৷''
অর্থাৎ সফটওয়্যার শুধু কিছু ছবি প্রস্তাব করতে পারে, এটি নির্ভুল ফল দেখাতে পারে না৷ একজন মানুষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় ক্যামেরা থেকে পাওয়া ছবিগুলোর কোনোটি ডাটাবেসের ছবির সঙ্গে মেলে কিনা৷ এটি ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির একটি বড় দুর্বলতা৷
রজার ডিটার/জেডএইচ