পাঞ্জাবে কৃষক বিক্ষোভে পুলিশ, আটক কয়েকশ, ভাঙা হলো শিবির
২০ মার্চ ২০২৫পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শম্ভু ও খানৌরি সীমানায় কৃষকদের অবস্থান-বিক্ষোভ চলছিল৷ প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই বিক্ষোভ থেকে কৃষকদের জোর করে তুলে দেয় পুলিশ৷ তাদের দুই নেতা সরওয়ান সিং পান্ধের ও জগজিৎ সিং দাল্লেওয়ালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷ কৃষক নেতারা যখন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ও পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে দেখা করে ফিরছিলেন, তখন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারা এখন আমরণ অনশন শুরু করেছেন৷
বুধবার শম্ভু সীমানায় যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে কিছু কৃষকের ঝামেলা হয়৷ দুইশ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর বিশাল পুলিশ বাহিনী খানৌরি সীমানায় যায়৷ সেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয় বলে অভিযোগ৷ পাঁচশ জনকে সেখান থেকে আটক করা হয়৷ বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়৷
পুলিশ কৃষকদের শিবির ভেঙে দেয়৷ রাস্তায় যাবতীয় অবরোধ তুলে দেয়া হয়৷ বুলডোজার দিয়ে তাদের সাময়িক আস্তানা ভেঙে দেয়া হয়৷
এরপর হরিয়ানা পুলিশ তাদের দিকে রাস্তার উপর অবরোধ তুলে দেয়৷ কৃষকরা যাতে হরিয়ানায় ঢুকতে না পারে এবং দিল্লিতে যেতে না পারে, সেজন্য রাস্তায় সিমেন্টের বড় বড় চাঙড়, কাঁটাতারের বেড়া, সিমেন্টের উপর পেরেক বসিয়ে অবরোধ তৈরি করে রেখেছিল পুলিশ৷ সেই অবরোধ সরিয়ে রাস্তা খুলে দেয়া হয়েছে৷
কেন এই আন্দোলন?
গত প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কৃষকরা এই আন্দোলন করছিল মূলত একটা দাবি আদায়ের জন্য৷ তা হলো, ন্যূনতম সংগ্রহমূল্যকে আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে৷ এখন সরকার ধান, গম-সহ বিভিন্ন শস্যের যে সংগ্রহমূল্য ঘোষণা করে, সেই দামে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে শস্য কেনে৷
কিন্তু সরকার ছাড়া অন্যরা সেই দামে ফসল কিনতে বাধ্য নয়৷ বেসরকারি সংস্থাগুলি সংগ্রহমূল্য থেকে অনেক কম দামে ফসল কেনে৷ কৃষকদের দাবি, ন্যূনতম সংগ্রহমূল্যকে আইনত সবাইকে মানতে হবে৷ না হলে শাস্তি পেতে হবে, এই ব্যবস্থা আইন করে চালু করতে হবে৷
কেন্দ্রীয় সরকার এখনো এই দাবি মানেনি৷ আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সাত দফা আলোচনা হয়েছে৷
পুলিশের বক্তব্য
পাঞ্জাব পুলিশের এসপি নানক সিং বলেছেন, কৃষকদের আগে থেকে সাবধান করা হয়েছিল৷ তারপর তাদের তুলে দেয়া হয়৷ পুলিশ জোর করেনি৷ তারা নিজেরাই বাসে করে নিজেদের বাড়ি ফিরে গেছেন৷
কেন এই পুলিশি ব্যবস্থা?
পাঞ্জাবে এখন আপ-এর সরকার ক্ষমতায় আছে৷ তারা এতদিন পর্যন্ত কৃষকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ হঠাৎ, এতদিন পর তারা কেন কৃষকদের উপর পুলিশি ব্যবস্থা নিলো?
পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল সিং চিমা বলেছেন, ‘‘কৃষকরা এক বছর ধরে পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা বন্ধ করে রাখার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে৷''
আপ সাংসদ মলভিন্দর সিং কাং বলেছেন, ‘‘এতদিন ধরে রাস্তা অবরোধ করে রাখায় রাজ্যে বাণিজ্য কমেছে, বিনিয়োগ কমেছে, পর্যটকদের আসা কমেছে৷''
পাঞ্জাবের আপ নেতারা এইভাবেই পুলিশি অভিযানের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ মলভিন্দর বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বলেছেন, কৃষকদের প্রায় সব দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যুক্ত৷ এর জন্য দিল্লিতে গিয়ে লড়াই করা দরকার৷ পাঞ্জাবের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, আমাদের সীমানা বন্ধ করে, বিনিয়োগ ও পর্যটনের সর্বনাশ করে অবরোধ ও অবস্থান-বিক্ষোভের কোনো প্রয়োজন নেই৷''
পাঞ্জাব বিধানসভার স্পিকার কুলতার সিং সানধাওয়ান, মন্ত্রী হরপাল সিং চিমা ও তরুণপ্রীত সৌধ বলেছেন, সড়কগুলিকে অবরোধমুক্ত করা উচিত৷ পণ্য পরিবহনে যেন কোনো বাধা না থাকে৷ রাজ্যের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্যও এটা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তারা৷
কংগ্রেসের সমালোচনা
পাঞ্জাবে বিধানসভার বিরোধী নেতা প্রতাপ সিং বাজোয়া বলেছেন, ‘‘কাপুরুষোচিতভাবে দুই কৃষক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মান কৃষকদের আওয়াজ বন্ধ করতে চাইছেন৷ আপ ও বিজেপি মিলে কৃষকদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিলো৷''
পাঞ্জাব কংগ্রেসের প্রধান অমরিন্দর সিং রাজা বলেছেন, ‘‘এটা কৃষকদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়৷''
অকাল তখতের জাঠেদার জ্ঞানী কুলদীপ সিং গরগাজ বলেছেন, ‘‘পাঞ্জাব ক্রমশ পুলিশ রাজ্যে পরিণত হচ্ছে৷ আপ দলটা প্রতিবাদ থেকে তৈরি হয়েছিল৷ তারা এখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলা আন্দোলন বন্ধ করছে৷''
সংসদেও কংগ্রেস সাংসদরা দাবি করেন, অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা কৃষক নেতা ও কৃষকদের মুক্তি দিতে হবে৷
আপ সূত্র জানাচ্ছে, দলের নেতৃত্ব একটা রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছে৷ আর কিছুদিনের মধ্যে শিল্পসমৃদ্ধ লুধিয়ানায় পুরসভা নির্বাচন৷ বেশ কিছুদিন হলো, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা আপ নেতৃত্বের কাছে রাস্তা অবরোধ করে এই বিক্ষোভ নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছিলেন৷ তাদের কথা শুনলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং ভগবন্ত মান৷
জিএইচ/জেডএইচ (পিটিআই)