নির্বাসনের মুখে আফগানরা: দুই জার্মান মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা
১৮ আগস্ট ২০২৫শুক্রবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনের পাবলিক প্রসিটিকউটর অফিসে সরকারের এই দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে৷
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডটের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছে শরণার্থী অধিকার রক্ষায় কাজ করা বেসরকারি সংস্থা প্রো অ্যাসিল এবং জার্মানির জন্য কাজ করা সাবেক আফগান নাগরিকদের সংগঠন পাটেনশাফটসনেটৎসভের্ক অর্টসক্রায়েফটে৷
তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে ঝুঁকিতে থাকা আফগানদের বিশেষ বিবেচনায় জার্মানিতে নিয়ে আসার কর্মসূচিটি স্থগিত করেছে জার্মানি৷ এদিকে, জার্মানি আসার অপেক্ষায় থাকা এসব আফগান নাগরিক নিরাপত্তার কথা ভেবে এতদিন পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন৷
কিন্তু সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার নথিভুক্ত আফগান শরণার্থীদেরও ডিপোর্ট, অর্থাৎ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে৷ পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, ১ সেপ্টেম্বরের আগেই দেশটিতে অবস্থানরত নথিভুক্ত সব আফগানকেও নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে৷
জাতিসংঘ জানিয়েছে, পাকিস্তানের এমন সিদ্ধান্তের কারণে অন্তত ১০ লাখ আফগান নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের অধীনে জীবনের ঝুঁকিতে থাকা অন্তত দুই হাজারের বেশি আফগান নাগরিক জার্মানিতে আসার অপেক্ষায় পাকিস্তানে আছেন৷ মানবিক কর্মসূচির আওতায় জার্মান সরকারের তাদের জার্মানিতে নিয়ে আসার কথা ছিল৷
কিন্তু রক্ষণশীলদের নেতৃত্বাধীন জার্মানির নতুন সরকার ইস্যুতে তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণের চেষ্টা করছে৷ ফলে, পাকিস্তানে অবস্থানরত আফগানদের জার্মানিতে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াটি স্থগিত করা হয়েছে৷ এমনকি, জাতিসংঘের শরণার্থী কর্মসূচিও বাতিল করেছে জার্মান সরকার৷
আফগানিস্তানে আপাতত জার্মানির কোনো কূটনৈতিক কার্যক্রম নেই৷ তাই আফগানদের আশ্রয় আবেদনগুলো প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান থেকেই প্রক্রিয়া করা হচ্ছিল৷
ফৌজদারি অভিযোগে বলা হয়েছে, পুনর্বাসন কর্মসূচির অধীনে যাচাই-বাছাই করা আফগানদের জার্মানিতে না আনা এবং তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে জার্মান সরকারের এই দুই মন্ত্রী ফৌজদারি কার্যবিধির ২২১ ধারার অধীনে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘পরিত্যাগ' করেছেন এবং ‘সহায়তা দিতে ব্যর্থ' হয়েছেন৷
তারা দাবি করেছেন, গত কয়েক সপ্তাহে জার্মানিতে আসার জন্য অনুমোদিত চারশ জনেরও বেশি আফগান নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান সরকার৷ এবং তাদের মধ্যে ৩৪ জনকে ইতিমধ্যে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
প্রো-অ্যাসিল-র মুখপাত্র ভিবকে ইয়ুডিথ বলেছেন, ‘‘সুরক্ষাপ্রার্থী আফগানদের পাকিস্তান থেকে ফেরত পাঠানো হলে তারা নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, এমনকি মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে৷''
জার্মান সরকারের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এই এনজিও কর্মী৷ তিনি বলেন, বার্লিনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এসব আফগান নাগরিক এখন ঝুঁকিতে পড়েছেন৷ ভিসা দেয়ার পরিবর্তে জার্মান সরকার তাদের দীর্ঘ অপেক্ষা আর অস্থিরতার মধ্যে রেখেছে বলেও মন্তব্য করেছেন ভিবকে ইয়ুডিথ৷
ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকজনের আইনজীবী ভিক্টোরিয়া লাইস বলেছেন, তার কয়েকজন ক্লায়েন্টকে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং এক নারীকে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নিয়ে কী ভাবছেন, তা জানার চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷ কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি৷
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাডেফুল শুক্রবার বলেছেন, তার মন্ত্রণালয় ‘‘এসব ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সাম্প্রতিক দিনগুলোতে প্রত্যাবাসন বা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তা দিতে পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে৷''
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মানবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটি নির্ধারণে কোনো সময়সীমা তারা বেঁধে দিতে চান না৷ তবে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়৷
এনজিও দুটির অভিযোগ, জার্মান কর্মকর্তারা যদি ওইসব ব্যক্তির প্রত্যাবাসন ঠেকাতে ব্যর্থ হন, তবে তারা ফৌজদারিভাবে দায়ী হতে পারেন৷
জার্মান ভিসা পাওয়ার দাবিতে এসব আফগান নাগরিকের পক্ষে অন্তত ৮০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ তার মধ্যে কিছু মামলার রায় তাদের পক্ষে গেছে৷ অবশ্য, জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে৷
টিএম/এসিবি (রয়টার্স)
প্রথম প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫ ইনফোমাইগ্রেন্টস
অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷