পাকিস্তান থেকে ঘরে ফিরলেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম
পাকিস্তানের জেলে ২২ দিন আটক ছিলেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম সাউ। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে নিজের বাড়িতে ফিরলেন তিনি।
'আমরা ভয় পেলে দেশ চলবে না’
‘আমি ২২ দিন পাকিস্তানে বন্দি থেকে দেশে ফিরে এসেছি। আমরা ভয় পেলে দেশ চলবে না।’ গত শুক্রবার রিষড়ায় নিজের বাড়িতে ফিরে কথাগুলো বলছিলেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম সাউ।
ভুল করে সীমান্ত পার
গত ২৩ এপ্রিল, পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরের দিন, পূর্ণম অসাবধানতা বশত পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন। পাকিস্তান রেঞ্জার্স পূর্ণমকে আটক করে। সেনা সূত্রে জানা যায়, তিনি কৃষকদের সাহায্য করার সময় ভুল করে সীমান্ত পার হয়েছিলেন।
পরিবারের উদ্বেগ
পূর্ণমের স্ত্রী রজনী সাউ অন্তঃসত্ত্বা এবং তাদের একটি আট বছরের সন্তান আছে। খবর পাওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই চরম উদ্বেগের মধ্যে পড়ে তার পরিবার। পূর্ণমের বাবা ভোলানাথ সাউ সরকারের কাছে তার মুক্তির জন্য আবেদন করেন। স্ত্রী রজনী সাউ পাঠানকোট যান এবং বিএসএফ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে পূর্ণমের মুক্তির জন্য আবেদন জানান।
পাকিস্তানের উপর কূটনৈতিক চাপ
ভারত সরকার পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করে পূর্ণমের মুক্তির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালায়। বিএসএফও তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে। বিএসএফের কর্মকর্তারা তার পরিবারকে জানান যে পূর্ণম সুস্থ আছেন এবং তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
দেশে ফিরলেন
গত ১৪ মে ২০২৫-এ, পূর্ণম আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফিরে আসেন। তার ফিরে আসাকে একটি কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হয়।
পরিবারের কাছে ফেরা
২৩ মে শুক্রবার, পূর্ণম রিষড়ায় নিজের বাড়িতে ফেরেন। মা দেবন্তী সাউ এবং স্ত্রী রজনী তাকে বরণ করে ঘরে তোলেন। মায়ের আদর আর স্ত্রীর আনন্দাশ্রু দেখে পূর্ণম আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তার চোখেও জল দেখা যায়।
বীরের সম্মান
রিষড়ায় ফিরতেই তাকে বীরের সম্মান দেওয়া হয়। দেশের জাতীয় পতাকা গলায় জড়িয়ে পূর্ণমকে হুডখোলা গাড়িতে তুলে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে বাড়িতে আনা হয়।
জনতার আবদার
উৎসাহী মানুষ এক মুহূর্তের জন্য ছুঁয়ে দেখতে চাইছিলেন তাদের এলাকার বীর জওয়ানকে। যিনি পড়শি দেশে ২২ দিন বন্দি থেকে নিজের দেশে ফিরে এসেছেন। সেলফিও তোলেন অনেকে।
বন্দি থাকার দিনগুলো
বন্দি থাকার দিনগুলোয় পাকিস্তানি সেনা কি পূর্ণমের ওপর শারীরিক বা মানসিক কোনও অত্যাচার করেছিল? এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ খোলেননি পূর্ণম। তিনি বলেন, এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। কাজেই ভালো মন্দ কোনোটাই তার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
কতটা ভয় পেয়েছিলেন?
শত্রুদেশের হাতে বন্দি হয়ে কতটা ভয় পেয়েছিলেন পূর্ণম? তিনি জানান যে ট্রেনিংয়ের সময় থেকেই তাদের নির্ভীক মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়। ভারতে আমার দ্বিতীয় জন্ম হল। আমরা দেশের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকি, তাই ভয় পাই না। আমরা ভয় পেলে দেশের মানুষকে সুরক্ষা দেব কী করে? তবে পরিবারের জন্য চিন্তা তো হচ্ছিলই।
পরিবারের কথা
বন্দি স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে অন্তসত্ত্বা অবস্থাতেই দু’হাজার কিলোমিটার দূরে পাঠানকোটে ছুটে গিয়েছিলেন পূর্ণমের স্ত্রী রজনী। স্বামী বাড়ি ফেরায় স্বভাবতই খুশি তিনি। বললেন, একটা সময় মনে হচ্ছিল আর কখনও দেখা পাব না। ঈশ্বরের কৃপা আর দেশবাসীর শুভকামনায় ফিরে এসেছেন তিনি।