পশ্চিমবঙ্গে ভাইরাল মমতাকে নিয়ে মিম, গ্রেপ্তার এক
৩ নভেম্বর ২০২২পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি একাধিক ‘মিম' ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিশেষত তাঁর ভিডিওকে ব্যবহার করে কয়েকটি ‘মিম' ইউটিউবে ভাইরাল হয়ে যায়। এই ব্যঙ্গাত্মক মিম নিয়ে ক্ষুব্ধ শাসক দলের সমর্থকরা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সাগর দাস নামে এক ব্যক্তি বেশ কয়েকজনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
সাগরের বক্তব্য, যেভাবে ‘মিম' তৈরি করা হয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে অসম্মানজনক। এতে অশান্তি তৈরি হতে পারে যাতে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নিশানায় মমতা
তারাতলা থানায় দায়ের হওয়া এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বছর ৩০-এর তুহিন মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে। তিনি নদিয়ার তাহেরপুরের বাসিন্দা। এর আগে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছিল ইউটিউবার রোদ্দুর রায় গ্রেপ্তার হওয়ার সময়। তিনি আপত্তিকর ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ। জুন মাসে দায়ের হওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গোয়া থেকে গ্রেফতার করা হয় রোদ্দুরকে।
এর আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার বার নিশানা করেছেন নেটিজেনদের একাংশ। তিনি নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে আহত হওয়ার পর কটাক্ষ করা হয়েছে। কখনো বিদ্রুপ করা হয়েছে তাঁর ভাষাজ্ঞান ও উচ্চারণ নিয়ে। ‘জয় শ্রীরাম' ধ্বনির মুখে রুখে দাঁড়ানোয় বিদ্ধ হয়েছেন মমতা। সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি পুজো উদ্বোধনে হিন্দু ধর্মীয় মন্ত্রোচ্চারণকে কেন্দ্র করে। তৃণমূল নেতৃত্ব এ ধরনের ‘মিম'কে কুরুচিপূর্ণ তকমা দিয়েছেন। কিন্তু সে জন্য গ্রেপ্তারি জরুরি কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
অম্বিকেশের গ্রেপ্তারি
এ সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুরনো বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। আলোচনায় উঠে আসছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের নাম। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই এই অধ্যাপক রাজরোষের শিকার হন। মুখ্যমন্ত্রী ও সেই সময়ের দুই তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায় ও দীনেশ ত্রিবেদী সংক্রান্ত একটি কার্টুন শেয়ার করার অভিযোগে ২০১২ সালে অম্বিকেশকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই মামলা থেকে এখনো অব্যাহতি পাননি তিনি।
অম্বিকেশের গ্রেপ্তারি নিয়ে তখন খুব হইচই হয়েছিল। এক দশক পরেও মামলা লড়ে যাওয়া অধ্যাপক রোদ্দুর বা তুহিনের গ্রেপ্তারির পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী কেন, কারো বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ আক্রমণকে সমর্থন করা যায় না। তবে শাসক যদি বিরুদ্ধ মতকে দমন করতে চায় নানা ছলে, সেটাও সমর্থনযোগ্য নয়। এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশেই দেখা যাচ্ছে।”
আইনের অপপ্রয়োগ?
বিষয়টিকে আইনি প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন তৃণমূলপন্থি বিশ্লেষক ভাস্কর সিংহরায়। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই আইনের ধারাতে মামলা হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন তাদের কাজ করেছে। আমাদের তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যদি অভিযুক্তরা নির্দোষ হন, তা হলে ছাড়া পাবেন।”
অম্বিকেশ পুলিশ-প্রশাসনকে এ ভাবে ক্লিনচিট দিতে রাজি নন। তাঁর বক্তব্য, "পুলিশ আমার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬-এ ধারায় মামলা রুজু করেছিল। এই ধারাকে শীর্ষ আদালত ২০১৫ সালে বাতিল করে দেয়। কিন্তু আজও দেশের বিভিন্ন থানার পুলিশ এই ধারা প্রয়োগ করে শাসকের নির্দেশে। সংবিধানের শপথ যারা নিয়েছেন, তারাই সংবিধানকে অমান্য করছেন।”
গ্রেপ্তারি ঘিরে প্রশ্ন
সম্প্রতি ধৃত প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল সম্পর্কে ঢালাও ব্যঙ্গচিত্র দেখা গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এ ক্ষেত্রে তেমন প্রতিআক্রমণের পথ নেয়নি শাসক পক্ষ। যদিও সাধারণভাবে শাসক শিবির থেকেও পাল্টা ‘মিম', ইউটিউব ভিডিও-র মাধ্যম আক্রমণ শানানো হয় সমালোচকদের বিরুদ্ধে। একে নির্বাচনী দেওয়াল লিখনের পরিবর্তিত রূপ হিসেবেই দেখা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, দেওয়ালের কার্টুনে যে বুদ্ধির প্রকাশ থাকতো, তার তুলনায় ‘মিম' অনেক ক্ষেত্রেই ততটা রুচিসম্মত হয় না ঠিকই। কিন্তু সেজন্য কাউকে হাতকড়া পরানো কতটা যুক্তিযুক্ত?