পশ্চিমবঙ্গে দুই মাসে তিনজন ব্যবসায়ী খুন
১২ মার্চ ২০২৫মঙ্গলবার মধ্যরাতে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে অ্যাপক্যাবের ডিকি থেকে একটি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। সেখান থেকেবস্তাবন্দি একটি দেহ পাওয়া যায়। ঘটনায় অ্যাপক্যাবের যাত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অপর যাত্রী প্রাথমিক ভাবে পুলিশকে দেখে পালালেও পরে তাকে ঠনঠনিয়া কালী বাড়ির কাছ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মৃত ব্যক্তির নাম ভাগারাম দেবাসী। তিনি রাজস্থানের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্ত দুই ব্যাক্তি কৃষ্ণরাম সিং ও করণ সিংও রাজাস্থানের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। মৃত এবং অভিযুক্তরা পূর্ব পরিচিত।
পুলিশ আরো জানিয়েছে মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে আট লক্ষ টাকা পেতেন অভিযুক্তরা। বহুদিনের অনাদায়ের পর ভাগারামকে খুনের পরিকল্পনা করেন কৃষ্ণরাম এবং করণ। গিরীশ পার্কে তাদের ভাড়া বাড়িতে ভাগারামকে ডেকে প্রথমে বিষ মেশানো কফি খাইয়ে, পরে শ্বাসরোধ করে ও শেষ পর্যন্ত গলা কেটে খুন করা হয় তাকে। পরে ট্রলি ব্যাগে ভরে দেহ ফেলা দেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। অ্যাপক্যাব চালকের সন্দেহের কারণে দ্রুত ধরা পরে যায় অভিযুক্তরা।
পর পর ব্যাবসায়ী খুনের ঘটনা
এই ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনা সমানে ঘটছে। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে কলকাতা শহরের দুই জনও ব্যাবসায়ী খুনের ঘটনা ঘটে।
কলকাতার এক জুতো ব্যাবসায়ী ২৮ বছরের সানু রামকে অন্তত পাঁচজন খুন করে। পরে তার দেহও বারুইপুরের কাছে একটি খালে ফেলে দেয়া হয়। কাছাকাছি সময়েই নৈহাটিতে আরেক ব্যাবসায়ী সন্তোষ যাদবকে প্রথমে গুলি করে পরে ইটের আঘাতে থেঁতলে খুন করা হয়।
দুই মাসে তিনজন ব্যবসায়ী খুন হওয়ার পর ব্যবসায়ী মহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
ব্যবসায়ী নিরাপত্তা ও পুলিশের ভূমিকা
পর পর একই ধরণের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিয়ে। বড়বাজার অঞ্চলের ব্যাগ ব্যাবসায়ী মণীষ ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, "ব্যাবসায়ীদের শত্রু থাকবেই। কিন্তু কাজ তো বন্ধ করা যাবে না।"
তবে এই বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। সাংবাদিক চিত্রদীপ চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেন, "পুলিশ এখন আগের থেকে অনেক বেশি প্রযুক্তি ও নেটওয়ার্ক ভিত্তিক কাজ করে। হিউম্যান সোর্স না সাধারণ মানুষের থেকে পুলিশ যে তথ্য সংগ্রহ করত তার পরিমাণ কমে গেছে। মোবাইল বা সিসিটিভি না থাকলে অপরাধীদের খুঁজতে তাদের বেগ পেতে হয়। এর ফলে এই রকম ধরনের অপরাধে পুলিশ অপরাধীর নাগাল পেতে অনেক ক্ষেত্রেই দেরি করে ফেলে।"
তবে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনার পিছনে ব্যক্তিগত আক্রোশকেই দায়ি করেছেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা সলিল ভট্টাচার্য। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "ব্যক্তিগত আক্রোশ সম্পর্কে পুলিশের ইন্টালিজেন্স কাজ করে না।" তবে তিনি এও জানান পুলিশের নজরদারির পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, "অনেকক্ষেত্রেই অপরাধীরা পুলিশকে কম ভয় পাচ্ছেন।"